প্রকাশ: 05/03/2024
বাণিজ্যিক
ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা-ডলার অদলবদল
(সোয়াপ) সুবিধা চালুর ফলে বিদেশি মুদ্রার
রিজার্ভের পালে হাওয়া লেগেছে
দেশের মুদ্রার। ডলার বিক্রি অভ্যহত
থাকলেও বেড়েই চলেছে রিজার্ভ। সোমবার (৪ মার্চ) রেমিট্যান্সের
ইতিবাচক ধারা ও ব্যাংকগুলোর
কারেন্সি সোয়াপের পর দেশের রিজার্ভ
বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৪
বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিলের তথ্য হিসাব করলে
রিজার্ভ দাঁড়াবে ২১ দশমিক ৩
বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আড়াই মাসের ব্যবধানে
দেশের রিজার্ভ আবার ২১ বিলিয়ন
ছাড়ালো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া
গেছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক
সময়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। এজন্য তারা বিভিন্ন ভাবে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে
চলার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে গত
ফেব্রুয়ারিতে দেশের ২১৬ কোটি ডলারের
রেমিট্যান্স আসায় কয়েকটি ব্যাংকের
হাতে অতিরিক্ত ডলার এসেছে। এসব
ডলারের বিপরীতে গতকাল ব্যাংকগুলো প্রায় ১১ হাজার কোটি
টাকার ধার নিয়েছে। অর্থাৎ
গতকাল ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ১০১ কোটি
ডলারের কারেন্সি সোয়াপ করেছে ব্যাংকগুলো। এর আগেও ব্যাংকগুলো
৩৭ কোটি ডলার বাংলাদেশ
ব্যাংকের কাছে জমা দিয়েছিল।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের ওই সময়ের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বেশকিছু
ব্যাংক ডলার জমা দিয়ে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে।
এসব ডলার জমার কারণে
রিজার্ভ বেড়েছে। সামনে সেই ডলার ফেরত
নিলে রিজার্ভ হয়তো কমতে পারে;
তবে এর মধ্যে বিভিন্নভাবে
রিজার্ভ বাড়বে।
এখন
আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয়
কিনছে ১১০ টাকা দরে। এই
দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার অদলবদল
করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ
টাকা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৭
ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার
৫০৮ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক
মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি
বিপিএম৬ অনুযায়ী এ রিজার্ভ ছিল
১ হাজার ৯৯৫ কোটি ডলার।
১৪ ফেব্রুয়ারি মোট রিজার্ভ কমে
দাঁড়ায় ২ হাজার ৫০৫
কোটি ডলারে। আর বিপিএম৬ অনুযায়ী,
ওই দিন রিজার্ভ ছিল
১ হাজার ৯৯৩ কোটি ডলার।
এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি মোট
রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার
৫৩২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, ওই
তারিখে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার
১৯ কোটি ডলার। গতকাল
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২
হাজার ৬৭৪ কোটি ডলার।
আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এই
রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২ হাজার ১৩০
বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আড়াই মাস পর
দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ আবারও ২১ বিলিয়ন ডলার
ছাড়িয়েছে।
এর
আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি টাকার
সঙ্গে ডলার অদলবদল বা
সোয়াপব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ
ব্যাংক। নতুন এ ব্যবস্থার
ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার–টাকা অদলবদল
করতে পারছে। সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ
৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার
অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু
করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সুবিধা চালুর
পর ২০ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি
ব্যাংক ২৩ কোটি ৫০
লাখ ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে
জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা
নিয়েছে। আর ২২ ফেব্রুয়ারি
কয়েকটি ব্যাংক মিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে
১৩ কোটি ৫০ লাখ
ডলার জমা দিয়ে তার
বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে।
গত
দুই বছর ধরে দেশে
ডলার সংকট চলছে। এর
ফলে রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে
নেমেছে। ডলার সংকট সামাল
দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া
হয়। তাতে চাহিদা কিছুটা
কমলেও ডলারের সংকট এখনো পুরোপুরি
কাটেনি। ফলে আমদানি দায়
মেটাতে এখনো প্রতি ডলারের
জন্য ১২৩ টাকা পর্যন্ত
দাম দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
আবার কিছু ব্যাংক ঘোষণার
চেয়ে বেশি দাম দিয়ে
প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।
বিভিন্ন
ব্যাংকে ডলারের পাশাপাশি টাকারও সংকট চলছে। কারণ,
ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা দিয়ে
ডলার কিনতে হচ্ছে। আবার অনিয়ম-দুর্নীতির
কারণেও তারল্যসংকটে পড়েছে কিছু ব্যাংক। তবে
কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে
বাড়তি কিছু ডলারও রয়েছে।
সেসব ডলার এখন তারা
বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তার
বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা নিচ্ছে।
ব্যাংক
খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টাকা–ডলার অদলবদলের
এ ব্যবস্থা উভয় পক্ষের জন্যই
লাভজনক। কারণ, উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেয়ে যাবে।
আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা
ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার
পেয়ে যাবে। এ ব্যবস্থার আওতায়
সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার
বা তার সমপরিমাণ টাকা
অদলবদল করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ ব্যাংকগুলোর সাধারণ ব্যাংকিং থেকে অফশোর ইউনিটে
ডলার স্থানান্তর বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি
মূল ব্যাংক থেকে অফশোর ইউনিটে
যে অর্থ দেওয়া হয়েছে,
তা-ও চলতি বছরের
মধ্যে ফেরত আনতে বলা
হয়েছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ে ডলার স্থানান্তর বন্ধ
হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ব্যবসার জন্য বিদেশি বিভিন্ন
ব্যাংক থেকে যে ডলার
ধার এনেছে, তা ব্যবহার করতে
পারছে না। এখন এসব
ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা
নিয়ে সেই অর্থ ঋণ
হিসেবে দিতে পারছে ব্যাংকগুলো।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের জমা হওয়ায় বাড়ছে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭