ইনসাইড বাংলাদেশ

এদেশের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার কে?


প্রকাশ: 24/03/2024


Thumbnail

আজ ২৪ মার্চ। ১৯৮২ সালের এই দিনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সেনা প্রধান থাকা অবস্থায় অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করেন। একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে, সংবিধান স্থগিত করে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের একটি তৃতীয় নজির স্থাপিত হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ১৯৭৫ এর পর থেকে বিভিন্ন সময় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে, পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটেছে এবং ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে সংবিধান বহির্ভূতভাবে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন তাদেরকে অবৈধ শাসক বা স্বৈরশাসক বলা যায়। 

বাংলাদেশে প্রথম অবৈধ শাসক হলো খুনী মোশতাক। ৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির এই হত্যা যজ্ঞের নেপথ্যের কুশীলব ছিল খুনী মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর মোশতাক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু বেশি দিন এই স্বৈরাচারী একনায়ক থাকতে পারেন নি। কু পাল্টা কূট ধারায় ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। এসময় কেন্দ্রে নিয়ে একটি টাল-মাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয়। খালেদ মোশাররফ কয়েক দিনের জন্য সেনাপ্রধান থাকার পর এক পর্যায়ে পাল্টা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান মসনদে আরোহণ করেন। 

জিয়াউর রহমানও ছিলেন একজন অবৈধ শাসক এবং একনায়ক। জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নির্মমভাবে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু আব্দুস সাত্তার বেশিদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যিনি তৎকালীন সেনাপ্রধান ছিলেন, অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করেন। 

বাংলাদেশে ৯ বছর এরশাদ তার স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছেন এবং ৯০ এর ডিসেম্বরে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতন ঘটে। এরপর বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক ধারা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত একটি তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করে। যেটিও ছিল অবৈধ শাসন। কারণ সংবিধানে তত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন বেঁধে দেওয়া ছিল। কিন্তু ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সুশীলদের এই তত্বাবধায়ক সরকার ২ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেনাবাহিনীর সমর্থনে। কাজেই ড. ফখরুদ্দিনের আহমেদের সরকারকেও একটি অবৈধ, স্বৈরাচারী শাসন হিসেবেই চিহ্নিত করা যেতে পারে। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই চারজন অবৈধ শাসক চিহ্নিত রয়েছেন। যাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে খুনী মোশতাক নিকৃষ্টতম। কারণ তিনি জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তবে সুপ্রীম কোর্ট খুনী মোশতাকের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। কাজেই,খুনী মোশতাক অবৈধ, একজন খুনী ছাড়া কিছুই নন। 

৭৫ এর ৭ নভেম্বর পট পরিবর্তনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান মসনদে আসেন। জিয়াউর রহমানের ৩ বছরের কিছু বেশি সময়ের শাসন ছিল আরেকটি স্বৈরাচার। জিয়াউর রহমানকে অনেক বিচারে নিকৃষ্ট স্বৈরাচার বলা যায়। কারণ তিনি সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন। এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও হরণ করেছেন তার প্রতিপক্ষকে নির্মম ভাবে হত্যা করা, বিচারের নামে প্রহসন কারাগারে বন্দী করে ফাঁসি দেওয়া ছিল জিয়ার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। জিয়া ছিলেন এক পৈশাচিক একনায়ক। যিনি তার প্রতিপক্ষকে শুধু হত্যা করতেই পছন্দ করতেন। 

জিয়ার মৃত্যুর পর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অবৈধ স্বৈরাচার ছিলেন বটে। তবে তিনি ছিলেন একমাত্র স্বৈরাচার যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছিলো। যদিও তার অবৈধ শাসনের মামলাটি শেষ পর্যন্ত আদালতে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। এমনকি জীবিত থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকান্ডের মামলাটিও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তবে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, জিয়া বা মোশতাকের মত নৃশংস ছিলেন না। বরং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একজন স্বৈরাচারী হলেও একধরনের রোমন্টিকতায় আচ্ছন্ন ছিলেন। 

ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের অবৈধ শাসনে মূল চাবিকাঠি ছিল জেনারেল মঈন উ আহমেদের হাতে। তাদের একটি মহা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ মহা পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়িত করতে পারেনি। এসময়ে জনগণের মধ্যেও একটি স্বৈরাচার বিরোধী একটি চেতনা তৈরী হয়েছিলো। যার জন্য ফখরুদ্দিন আহমেদ-মঈন উ আহমেদের সরকার স্বৈরাচারীর রূপে খুব একটা প্রতিহত হতে পারেনি। যদিও তার সময় দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্রদেরকে নির্মম ভাবে পেটানোর ঘটনা ঘটে। এবং বিরাজনীতিকরণের নামে ব্যাপকভাবে ধড়পাকড় চলে। কিন্তু তারপরও ড. ফখরুদ্দিন জিয়া, মোশতাক বা এরশাদের চেয়ে অনেক সহনীয় একজন স্বৈরাচার হিসেবে বিবেচিত হবেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭