ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আরব আমিরাতের রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি


প্রকাশ: 24/03/2024


Thumbnail

মরুর অঞ্চলে বিলাসিতা ও আভিজাত্যে অতুলনীয় একটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিশ্ববাসীর কাছে দেশটি স্বপ্নপুরীর চেয়ে কম নয় কোন অংশেই। রমজান শুরুর আগেই দেশটিতে রমজান উদযাপনের ধুম লেগে যায়। আর পুরো রমজান জুড়ে বিরাজ করে সেই উৎসবমুখর পরিবেশ। আরব আমিরাতের রমজান সংস্কৃতি নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকের মনেই। 

বাংলা ইনসাইডার আয়োজিত 'ইনসাইড রমজান' ধারাবাহিক এর আজকের পর্বে আমরা জানবো সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুসলিমদের রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি-  

আমিরাতে রমজান শুরুর আগেই বেশ উল্লাসের সঙ্গে পালন করা হয় 'হক আল লায়লা'। মূলত রমজানকে স্বাগত জানাতেই এই অনুষ্ঠানের আয়জন করা হয়। পবিত্র রমজান মাস শুরুর ১৫ দিন আগে অর্থাৎ ১৫ শাবান আসন্ন রমজানকে উদযাপন করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটিকে অনেকটা হ্যালুইনের ট্রিক অর ট্রিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হতে পারে। কারণ, এখানেও বাচ্চাদের হাতে দেওয়া হয় খেজুর ও চকলেট। তবে এ উৎসবের পেছনের উদ্দেশ্যটা একটু আলাদা। মূলত রমজানের মাহাত্ম্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে শিশুদের সামনে আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে তুলে ধরার প্রয়াসই হলো 'হক আল লায়লা'। বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসা এ উৎসব এখন আমিরাতের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।  

আমিরাতের আরও একটি প্রথাগত ঐতিহ্য হলো খারিতা পালন। শাবান মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় খারিতা অনুষ্ঠান। এতে শিশুরা উজ্জ্বল কাপড় পরে দলবেঁধে প্রতিবেশীদের বাড়ি যায়। তাদের সঙ্গে থাকে ঝোলা। তারা প্রতিবেশীদের দরজায় কড়া নাড়ে এবং সুর করে বলেন,'তোমরা আমাদের দাও, আল্লাহ তোমাদের দেবেন। মক্কায় আল্লাহ তার ঘর পরিদর্শন করাবেন।' এসময় তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিষ্টি, বাদাম ও অন্যান্য খাবার সংগ্রহ করে। বাচ্চারা উৎসাহের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় এ গান গেয়ে বেড়ায় এবং খাবার সংগ্রহ করে। দেশটিতে এ উদযাপন আমিরাতের জাতীয় পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত।   

মূলত, আজকের আধুনিক সমাজে মানুষ যখন একে অপরের থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করে, তখন এ প্রথা আগেকার সেই সহজ সরল জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে সামাজিক বন্ধন এবং পারিবারিক মূল্যবোধের গুরুত্বের ওপরও আলোকপাত করে।

এছাড়াও, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পাড়া-মহল্লা বা বড় বড় মসজিদের পাশে তাবু-প্যান্ডেল টানিয়ে ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ইফতার দেওয়া আমিরাতের আরও একটি ঐতিহ্য। 

সেহরি-ইফতার

সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজানের চাঁদ দেখার পর একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু হয় রোজা। আর ইফতার ও সেহরি শুরু হয় কামান দাগিয়ে। একই দিনে রমজান শুরু হলেও সেহরি ও ইফতারে আলাদা সময়সূচি অনুসরণ করে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়।

আর বিশ্বের উচ্চতম বিল্ডিং বুর্জ খলিফার ৮০ তলার ওপরে যারা বাস করেন, তাদের রমজানের সময় অতিরিক্ত ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। কারণ, উঁচুতে সূর্যকে বেশ কিছুক্ষণ দেখতে পান তারা।

সুন্নত মেনে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙেন আমিরাতবাসী। ইফতারের প্রধান মেন্যুতে থাকে ঐতিহ্যবাহী থারিদ, বিরিয়ানি, কাতায়েফ, সালাদ, ইতালিয়ান পাস্তা, ফল। তবে নবিজির প্রিয় অ্যারাবিয়ান ডিশ-রুটিতে ছড়ানো মাংসের 'হারিস' তাদের ভীষণ পছন্দ।   

দুবাইয়ে রমজান

দুবাইয়ে রমজান শুরুর ঘোষণা দেয় 'দি ইউনাইটেড আরব আমিরাত মুন সাইটিং কমিটি'। রমজান উপলক্ষে সেখানকার মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের সংস্কৃতি বেশ পুরোনো। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে দেশব্যাপী রমজান সংশ্লিষ্ট সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া মাহে রমজানে আন্তর্জাতিকভাবে এখানে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। রমজান এলেই পুরো দুবাই নতুন উদ্যমে সেজে ওঠে।                  

মুক্ত হস্তে দান

পবিত্র রমজান মাসে আরব দেশগুলোর ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত জাকাত দানে উৎসাহী হন। কিন্তু তেল সম্পদের প্রাচুর্যে ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে জাকাত নেওয়ার মতো কেউ নেই। তাই ধনকুবেরদের কাছ থেকে জাকাত গ্রহণের সুযোগটি নেন পৃথিবীর বিভিন্ন অনুন্নত দেশের মানুষ। রমজানে তারা উড়ে যান দুবাইসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে। দুবাইয়ের মতো জৌলুসময় নগরীগুলোতে ধনকুবেররা জাকাত গ্রহণের লোক পেয়ে অনেকটা স্বস্তির হাসি দিয়ে মুক্ত হস্তে দান করেন।

রমজানে বাড়তি আমেজ

রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় দেশটির চিত্র। রমজান মাসজুড়ে বন্ধ থাকে নাইট ক্লাব ও মদের বার এমনকি, প্রকাশ্যে পানাহার ও ধূমপান, দণ্ডনীয় অপরাধ। বছরজুড়ে সড়কগুলো পরিচ্ছন্ন থাকলেও এ সময় হয় আরও ঝকঝকে। জাঁকালো আলোক সজ্জায় সাজে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশটি।

এছাড়াও, বাণিজ্যিক হোটেলগুলো এ মাসে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ইফতারির আগে খাবারের দোকানগুলো হরেক রকমের ইফতারির পসরা সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, রমজান উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বহু কারাবন্দিকে মুক্তি দেন। কারাবন্দিরা যেনো সংশোধন হয়ে পরিবারের মাঝে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য এ সুযোগ দেওয়া হয় বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭