ইনসাইড বাংলাদেশ

পারিবারিক দ্বন্দ্বে ঝুঁকিতে বড় শিল্প পরিবারগুলো


প্রকাশ: 03/04/2024


Thumbnail

বড় বড় একাধিক শিল্প পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এই পারিবারিক দ্বন্দ্বে এই সমস্ত শিল্প পরিবারগুলো এখন বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করছে এবং এই সমস্ত মামলার কারণে তাদের যেমন ব্যবসায়িক ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, তেমনই ব্যবসায়িক কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে প্রচণ্ডভাবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বড় দুটি শিল্প গ্রুপে পারিবারিক গৃহদাহের বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং এই দুটিতেই বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। বাংলাদেশের যে দুটি শিল্প পরিবারের গৃহদাহ নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তার মধ্যে একটি হল ট্রান্সকম গ্রুপ, অন্যটি হল সিকদার গ্রুপ। ট্রান্সকম গ্রুপের দুই বোনের বিরোধ এখন প্রবল আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে শাজরেহ হক মামলার কারণে সিমিন রহমান এবং তার মা আগাম আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। আদালত তাকে দেশে ফেরার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জামিন গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আর অন্যদিকে শাজরেহ’র হত্যা মামলার প্রেক্ষিতে তাদের একমাত্র ভাইয়ের লাশ কবর থেকে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং নতুন করে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ময়না তদন্তের পর বোঝা যাবে যে, সিমিনের ভাইয়ের মৃত্যুর পিছনে সিমিন রহমান জড়িত কি না বা আসলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী? এই হত্যা মামলা ছাড়াও তাদের তাদের মধ্যে শেয়ার জালিয়াতির মামলা এবং অভিযোগ রয়েছে যে, শাজরেহ’র প্রাপ্য শেয়ার কলাকৌশল এবং ছলচাতুরির মাধ্যমে সিমিন কুক্ষিগত করেছেন। এই মামলার কারণে ট্রান্সকম গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তাও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এখন ট্রান্সকম গ্রুপের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও ট্রান্সকম গ্রুপের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে।

অন্যদিকে আরেকটি শিল্প পরিবার সিকদার গ্রুপে দুই ভাইবোনের বিরোধের কারণে দুজনই এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পারভীন সিকদারের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে তিনি বিদেশি নাগরিক হয়েও সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং টাকা পয়সা নিয়েছেন। এই সমস্ত টাকা পয়সা যেন তিনি ফেরত দেন সে ব্যাপারে আদেশ চেয়ে মামলা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, এই মামলা করার পেছনে পারভীন হকের দুই ভাই রন ও রিক হক সিকদারের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু রন এবং রিক এই মামলা করে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারেনি। কারণ রন এবং রিক দুজনের বিরুদ্ধেই বিদেশে সীমা অতিরিক্ত ৮১ কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডে খরচের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে।

দুদকের অভিযোগ, রন শিকদার পাঁচ বছরে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাতটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সীমার অতিরিক্ত ব্যয় করেছেন ৬০ লাখ ৯২ হাজার ২২৫ ডলার এবং রিক সিকদার ব্যাংকটির ছয়টি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পাঁচ বছরে বিদেশে সীমা অতিরিক্ত ব্যয় করেছেন ২৬ লাখ ২২ হাজার ৪৯৯ ডলার। আর এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রয়াত জয় সিকদারের এই সন্তানদের বিরোধের কারণে সিকদার গ্রুপ এখন একটি বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক এমনিতেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে- রন, রিক এবং পারভীন সিকদারের বিরোধের কারণে ডুবতে বসেছে সিকদার গ্রুপ।

আর এই ধরনের বিরোধ আরও কতগুলো শিল্প পরিবারে দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ এটিকে পরিশোধিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেমন আকিজ গ্রুপেও বিরোধ শুরু হওয়ার আগেই তারা সমঝোতার মাধ্যমে ভাগ হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বড় বড় শিল্প পরিবারগুলোতেও বিভক্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭