ইনসাইড থট

বদলি নয়, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পড়তে বাধ্য করুন


প্রকাশ: 06/04/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগ টানা দেড় দশক ক্ষমতায়। তাই দেশ জুড়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করা মানুষগুলো 'আওয়ামী লীগ' হয়ে গেছে।  কথায় কথায় আওয়ামী লীগ বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলে। বঙ্গবন্ধুর নাম বলতে বলতে তসবি টেপে। কিন্তু মনে প্রাণে আওয়ামী লীগের আদর্শ মানে না। বঙ্গবন্ধুকে বুকে ধারণ করে না। প্রশাসনেও একই অবস্থা। প্রশাসনের সর্বস্তর যেন এখন আওয়ামী লীগের প্রাণকেন্দ্র। বড় বড় অফিসারদের অফিস কক্ষে বা বাসার ড্রয়িং রুমে বঙ্গবন্ধুর লেখা দু তিনটি বই শোভা পায়। বইগুলা তাঁরা পড়ে দেখেছেন কিনা তাতে আমি সন্দিহান। পড়ে দেখলে বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা নিতেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করতেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারী কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলে গেছেন, "মনে রেখো এটা স্বাধীন দেশ। এটা বৃটিশের কলোনি নয়, পাকিস্তানের কলোনি নয়। যে লোককে দেখবে তার চেহারাটা তোমার বাবার মতো, তোমার ভাইয়ের মতো, ওদেরই পরিশ্রমের পয়সা, ওরাই সম্মান বেশি পাবে। কারণ ওরা নিজেই কামাই করে খায়।" অথচ মানিকগঞ্জের শিবালয়ের কৃষি অফিসের দুজন কর্মকর্তা বাবার বয়সী, বড় ভাই এর মত দেখতে ৬৫ বছরের কৃষক ফজলুর রহমানের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলেননি। অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। অপমান করেছেন। অবজ্ঞা করেছেন। অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন।

কৃষক ফজলুর রহমানের অপরাধ কি? তিনি তাঁর ক্ষেতের একগুচ্ছ পোকা ধরা ধানগাছ নিয়ে যান উপজেলা কৃষি অফিসে। ধান গাছের পোকার প্রতিকার চান। ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। কৃষককে বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দেই? আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন? আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে? যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন, তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম।’ অথচ বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন, "আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় গরীব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় ওই গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়….। ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।… ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে।" যাদের টাকায় কৃষি কর্মকর্তাদর সংসার চলে, যাঁরা দেশের মালিক, তাঁদেরকেই তিনি অস্বীকার করলেন।

ওই ঘটনায় উক্ত ভুক্তভোগী কৃষক দুই সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে গেলে কৃষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনিও। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন কৃষি কর্মকর্তা। অথচ এসব অফিসার সাহেবদের জন্য বঙ্গবন্ধুর বাণী হচ্ছে, "কার টাকায় অফিসার সাব?.... কার টাকায় সব সাব? সমাজ যেন ঘুনে ভরে গেছে। এ সমাজকে আমি চরম আঘাত করতে চাই।" বঙ্গবন্ধুর সুরে সুর মিলিয়ে দরিদ্র কৃষক ফজলুর রহমান সমাজের এই ঘুনে আঘাত হেনেছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া অসম্মান দেশবাসীর নজরে এনেছেন। স্যালুট কৃষক ফজলুর রহমানকে।

সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। এ কথাটা সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন। জনগণের করের পয়সায় যাদের বেতন হয়, যারা কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে মুখে ফেনা তোলেন, তাঁরা বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি হয় শোনেননি অথবা পড়েননি। পড়লে বা শুনলেও এর অর্থ বোঝেননি। বুঝলে ফজলুর রহমানকে অফিস থেকে বের করে দিতেন না। সমস্যা নজরে আনার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতেন, সম্মান দিতেন। তাঁর কথার গুরুত্ব দিতেন। ধান ক্ষেত পরিদর্শনে যেতেন। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেন।

খবর পেলাম, অভিযুক্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে ফরিদপুরের সালথায়। কি লাভ তাতে? যা ঘটেছে শিবালয়ে, তা এবার ঘটবে সালথায় বা দিনাজপুরে। অফিসার সাহেবদের চরিত্র না বদলালে যাঁরা দেশের মালিক, তাঁদের কোন লাভ হবে না, উন্নতি হবে না। বরং শাস্তি যদি দিতে হয়, তাহলে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ক'টি বই পড়াতে বাধ্য করা প্রয়োজন। বাজারে এমন বই অনেক পাওয়া যায়। বইগুলিতে ২৬ মার্চ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপরে উল্লেখিত কথাগুলো রয়েছে। সেগুলি উপহার দিন। বইগুলি পড়ার জন্য সময় বেঁধে দিন। উনারা পড়ুক। পড়া শেষে পরীক্ষা দিক। সে পরীক্ষায় পাশ করলে চাকুরীতে পুনর্বহাল করুন। তাতে অভিযুক্তদের চরিত্র বদলাবে। দেশের মালিকরা তাঁদের ন্যায্য সম্মান পাবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭