ইনসাইড বাংলাদেশ

জমজমাট ঐতিহ্যবাহী চকের ইফতার বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/05/2018


Thumbnail

শুধুই ইফতার সামগ্রী নিয়ে একটা বাজার তা কি কল্পনা করা যায়।? সারদেশে ইফতার সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত একটাই বাজার যার নাম পুরাণ ঢাকার চকবাজার। চকবাজারের ইফতার সামগ্রীর সুনাম শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও অনেক পরিচিত।

চকের ইফতার বাজারের ইতিহাস প্রায় চার’শ বছরের পুরনো। ইতিহাসবিদদের মতে, ঢাকার দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁ চকবাজারকে আধুনিক বাজারে পরিণত করেন। তখন থেকেই প্রতি রমজানে চকবাজারে জমকালো ইফতারির বাজার বসতো। সেই থেকে আজও ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর চলে আসছে চকবাজারের ইফতার বাজার। সাম্প্রতিক সময়ে চক বাজারের ঐতিহ্য যেন আরও বেড়েছে।

চকবাজারে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন ইফতার কিনতে। সেই কাতারে অনেক বিদেশিকেও দেখা যায়। আর পুরাণ ঢাকার রোজাদার মানুষদের চক বাজারের ইফতার না হলেতো ইফতার জমেই না।

চকবাজারে গিয়ে দেখা যায় সেই চিরচেনা চেহারা। দোকানিরা ব্যাপক হাঁক ডাকে বাজার গরম করে রেখেছেন। রাস্তার উপর শতাধিক ছোট-বড় দোকানে ইফতার সামগ্রী সাজানো। যেমন লোভনীয় সব বাহারি খাবার, তেমনি তার উপস্থাপনা। খাবারের ঘ্রাণ চারিদিক ছড়িয়ে পড়ছে। শরবত থেকে শুরু করে আচার পর্যন্ত সবই আছেন এইখানে।

চকবাজারে প্রধান আকর্ষণ নানা রকমের কাবাব। সুতি কাবাব, জালি কাবাব, টিকা কাবাব, মুঠি কাবাব, এ্যারাবিয়ান কাবাবসহ আরও কত ধরনের কাবাব। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ ব্যাপক জনপ্রিয় একটি খাবার। দোকানিরা সুর করে করে বলে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়।’ সেলিম বাবুর্চি বললেন, ‘বড়বাপের পোলারা খাইতো। সেই জন্যই এই নাম। গরুর মাথার মগজ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, গিলা কলিজা ডিম, আলু, ঘি, কাঁচামরিচ, শুকনো মরিচ, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, চিড়া, ডাবলি, বুটের ডাল, মিষ্টি কুমড়াসহ ১৫ পদের খাবার আর ২৪ জাতের মসলা দিয়া তৈরি করা হয় এই খাবার। পিতলের বড় থালিতে সবকিছু একসাথে মাখায়া নিয়ে তারপর ঠোঙায় ভইরা বিক্রি করি।’

সুতি কাবাব সুন্দর উপস্থাপনার কারণে নজর কাড়ে সকলের। কাবাবের পুরোটা সুতো দিয়ে বাঁধা থাকে বলেই নাম সুতি কাবাব। ৩০ বছর ধরে সুতী কাবাব তৈরি করেন হান্নান। হান্নান বলেন, ‘রাজা বাদশারা খাইত তো, বহুত পুরনো জিনিস। আমাগো বড় বাবারা করত। এহন আমরা করি।’

চক বাজারে আস্ত খাসিও রোস্ট করে বসিয়ে রাখতে দেখা যায়। দেখলে মনে হবে এই বুঝি খাসিটা ভ্যা ভ্যা চিৎকার করে দৌড়ে পালাবে। কিন্তু পালানোর কোনো সুযোগ নেই। খাসির দেহের আদল ঠিক থাকলেও এটি আসলে ‘আনাম খাসি’ নামের কাবাব।

চক বাজার ঘুরে আরও দেখা গেল, তেহারি, মোরগ পোলাও, কাচ্চি, কিমা পরটার দোকান। শাকপুলি, ডিমচপ, বিভিন্ন ধরনের কাটলেট আছে। দই বড়া, মোল্লার হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, কাশ্মীরি শরবত, ছানা মাঠাও সবই আছে। বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।

চকের বিশাল আকারের শাহী জিলাপীও অনেক বিখ্যাত। জিলাপীর দোকানের পিছনে এক কারিগর জিলাপী বানাচ্ছিলেন। জিলাপীর এই কারিগর জানালেন, সবচেয়ে ছোট জিলাপী হয় আড়াই প্যাঁচের আর বড় জিলাপীগুলো ২০ প্যাঁচ পর্যন্ত হয়। প্রতিটি জিলাপীর ওজন এক কেজি থেকে চার কেজি পর্যন্ত হয়।  

অসংখ্য ইফতারির আইটেমের মধ্যে থেকে যে যার পছন্দমত দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন। উত্তরা থেকে চকবাজারের ইফতারি কিনতে এসেছেন মনিরুল ইসলাম মিন্টু নামের একজন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর ইফতার কিনতে চকবাজারে আসি’। পরিবারের সদস্যরা সবাই চকবাজারের ইফতার খাইতে পছন্দ করে। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার চকবাজারে ইফতারির দাম কিছুটা বেশি।’

চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। খাসির রোস্ট পিস আকার ভেদে ৪৪০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির রোস্ট পিস ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, দইবড়া কেজি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১৫০ টাকা পিস। কোয়েল প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা। চিকন বা রেশমি জিলাপি কেজি ১৫০ টাকা, বড় শাহী জিলাপি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


বাংলা ইনসাইডার/ আরকে/ জেডএ  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭