ইনসাইড গ্রাউন্ড

‘স্প্যানিশ যোদ্ধা’ ইনিয়েস্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/05/2018


Thumbnail

বার্সেলোনার ড্রিম টিম কিংবা স্পেনের বিশ্বকাপ জয়, যেটাই বলা হোক না কেন একটা নাম সব সময় উচ্চারিত হবেই। তিনি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। ফুটবলে নতুন মাত্রা যোগ করে কীভাবে ফুটবল মাঠে সেটা আরও সুচারুরূপে উপস্থাপন করা যায় তা ইনিয়েস্তার মত ভালো মনে হয়না আর কেউ করতে পারবে।

বার্সা থেকেই শুরু
১২ বছর বয়সে ব্যালোম্পাইয়ে খেলার সময় বার্সেলোনার স্কাউটদের নজরে পড়েন। যদিও আরও অনেক দল আগ্রহী ছিল তার প্রতি কিন্তু বাবা-মায়ের কথা মত তিনি বার্সেলোনার যুবদল ‘লা মাসিয়া’ তে যোগ দেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন নিবিড় পরিচর্যায়।  

তিনি বার্সেলোনার যুব দলে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত ছিলেন। এরপর বয়সভিত্তিক দলে খেলে ২০০৪-০৫ মৌসুমে বার্সার হয়ে অভিষেক হয় তার। সেই মৌসুমে ৩৭ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। যার মধ্যে ২৫ ম্যাচ খেলেছেন বদলি হিসেবে। এ মৌসুমে গোল করেছিলেন মাত্র ২টি। বার্সেলোনা জিতে নেয় লা লিগা শিরোপা। ২০০৫-০৬ মৌসুমে আরেক বার্সা গ্রেট জাভির ইনজুরির কারণে তিনি দলে আরও ভালভাবে নিয়মিত হন।

২০০৬-০৭ মৌসুমেও তাঁর উন্নতি অব্যাহত থাকে। এ মৌসুমে মিডফিল্ডের বিভিন্ন পজিশনে খেলার পরেও ইনিয়েস্তা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ গোল করেন। এ মৌসুমেও লিগ জিতে বার্সেলোনা। এরপরেই তাকে ৮ নম্বর জার্সি প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালে নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বার্সায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

২০০৮-০৯ মৌসুমে ৬ মাস ইনজুরির কারণে খেলার বাহিরে ছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন যত তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরা যায়। ২০০৯ সালে ৩ জানুয়ারি বদলি হিসেবে ৬৫ মিনিটের মাথায় মাঠে নেমেই ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় করে বসেন এক দারুণ গোল। ৫ ফেব্রুয়ারি কোপা দেল রে’তে মায়োর্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ২৫০তম ম্যাচ খেলেন ইনিয়েস্তা। সেই সঙ্গে ২০০৮-০৯ মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি। তিনি তারই ক্লাব সতীর্থ মেসি এবং জাভিকে পেছনে ফেলে জিতে নেন এই পুরুস্কার। সেই মৌসুমেও লিগ জিততে ভুল হয়নি বার্সেলোনার।

২০০৯-১০ মৌসুমে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্যালন ডি অরের জন্য মনোনয়ন পান। উয়েফা মনোনীত বর্ষসেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় তিনি সেরা ৫ নম্বরে ছিলেন। এ মৌসুমে বেশ কয়েকবার ইনজুরিতেও পড়েছিলেন কিন্তু তবুও তিন ই বারবার ফিরে এসেছেন স্বরূপে। তার দলও জিতেছিল ২০০৯-১০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। সঙ্গে লা লিগার শিরোপা জিতেছিল বার্সেলোনা।

২০১০-১১ মৌসুমে আবারও লিগ শিরোপা অর্জন করে বার্সা। যার মূল কাণ্ডারি ছিলেন ইনিয়েস্তা। পেপ গার্দিওলার ড্রিম টিমের অন্যতম এ সদস্য ২০১০-১১ মৌসুমে জীবনের সেরা ফর্মে ছিলেন। সে বছর ছিলেন ব্যালন ডি অরের সেরা তিনে। তাঁর মনোনয়নের মূল কারণ ছিল এ মৌসুমে বার্সার ট্রেবলসহ হেক্সা জয়।

২০১১-১২ মৌসুমে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইনিয়েস্তা। বার্সা শুধুমার কোপা দেল রেই জিতেছিল এ মৌসুমে। এর পরে ২০১২-১৩ মৌসুমেও লা লিগা এবং উয়েফা সুপার কাপ জেতে বার্সা। বার্সা থেকে গার্দিওলার বিদায়ের পরও দলে তিনি নিজের মত খেলেছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনা আবারও ট্রেবল জিতে নেয়। ইনিয়েস্তা ছিলেন এ দলের মূল চালিকাশক্তি।

স্পেন দলে ইনিয়েস্তা
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে জেতে স্পেন আর সেটাও ২০০১ সালে। সেই দলের সদস্য ছিলেন ইনিয়েস্তা। ২০০৩ সালে ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিলের কাছে হেরে শিরোপা হাত ছাড়া হয় স্পেনের। ২০০৬ সালের ১৫ মে জাতীয় দলে ডাক পান ইনিয়েস্তা। রাশিয়ার বিপক্ষে সেই বছর ২৭ মে অভিষেক হয়ে এই জাদুকরের।

২০০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম গোল করেন তিনি। ২০০৮ সালে ইউরোর বাছাইপর্বের বাধা পেরুতে তাঁর বেশ ভালো ভূমিকা ছিল। ২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপে চিলির বিপক্ষে এক গোল করেন তিনি। ২-১ গোলে চিলিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে স্পেন। সেই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পুরুস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম ওঠে। নেদারল্যান্ডের সঙ্গে ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের ১১৬ মিনিটের মাথায় জয়সূচক গোল করে স্পেনকে এনে দেন অধরা বিশ্বকাপ। যা ছিল স্পেনের ১ম বিশ্বকাপ শিরোপা।

বার্সায় শেষ
ইনিয়েস্তা একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তবে ভারসাম্য, বল নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুততার কারণে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও তিনি উন্নতি করতে থাকেন। ১৮ বছর বয়সেই বার্সার সিনিয়র দলে তাঁর অভিষেক হয়। ইনিয়েস্তা তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমে জয় করেছেন ২ টি শিরোপা। এদিকে, ২০১৩ সালে করা পাঁচ বছরের চুক্তি শেষে গতকালই চলে বার্সাকে বিদায় বলেন ইনিয়েস্তা।  যদিও গেল অক্টোবরে ইনিয়েস্তার সঙ্গে আজীবন চুক্তি করেছিল বার্সেলোনা। তিনি যতদিন চাইবেন বার্সায় থাকতে পারবেন এবং চাইলে অন্য ক্লাবে যেতেও পারবেন। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চাইলে যেকোনো সময় বার্সার হয়ে খেলতে পারবেন। যদিও এই চুক্তিটা অনেকটাই সম্মানসূচক।

পরিশেষে…
চার মৌসুমে ১৪ ট্রফি কিংবা ২০১০ সালের বিশ্বকাপ শিরোপা সব কিছু ছাপিয়ে ইনিয়েস্তা একজন বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার। তার মত একজনকে আসলে শিরোপা ও ব্যক্তিগত অর্জন দিয়ে পরিমাপ করা যায়না। বার্সেলোনার হয়ে ফুটবল ইতিহাসে যতভাবে ইতিহাস তৈরি করা যায় তা ইনিয়েস্তা করেছেন। ইনিয়েস্তা একজনই এবং তার তুলনাও তিনি নিজেই।


বাংলা ইনসাইডার/ডিআর/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭