ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

১০০ বছরে দেশগুলো ‘হারিয়ে’ গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/06/2018


Thumbnail

শত বছর আগেও যে দেশগুলো সগৌরবে সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল, আজ সেগুলোর অস্তিত্ব বিলীন। এর মাঝে যেমন জন্ম নিয়েছে নতুন রাষ্ট্র বা নাম পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি হারিয়ে গেছে কিছু দেশ। বিশ্ব মানচিত্র ও এখন আগের তুলনায় ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। আসুন তাহলে আজ জেনে নেওয়া যাক গত ১০০ বছরে যে দেশগুলো হারিয়ে গেছে, সে দেশগুলো সম্পর্কে:

যুগোস্লাভিয়া: ১৯১৮ সালে দক্ষিণ ইউরোপের এই দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়া, মন্টিনেগ্রো, স্লোভেনিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মিলে এই নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে বেশি অগ্রসর হয়। পর পর চারটি যুদ্ধে ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া ও স্লোভেনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। সার্বিয়া ও মন্টিনেগ্রো পরবর্তীতে ‘ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়া’ নাম নিয়ে টিকে থাকলেও ২০০৬ সালে মন্টিনেগ্রো স্বাধীনতা লাভ করলে যুগোস্লাভিয়া নামটি চিরতরে হারিয়ে যায়।

তিব্বত: হিমালয়ের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত নিষিদ্ধ নগরী তিব্বত। তিব্বত নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। শত শত বছরের পুরনো এই দেশটিতে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। ১৯১২ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত গণচীনের অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন তিব্বত একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ছিল। নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত দালাইলামা ছিলেন দেশটির নেতা যিনি বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে রয়েছেন। তবে এখনো দেশটিকে স্বাধীন করার চেষ্টা চলছে। দেশটিতে দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার না থাকা, দুর্গম পরিবেশ ও পর্যটক প্রবেশে বাঁধা থাকার কারণে দেশটির অনেক তথ্যই সকলের কাছে অজানা।

আবিসিনিয়া: সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণে ইতালি আবিসিনিয়া দখল করে। ইতালিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর বাজার, মুসলমানদের ওপর আধিপত্য বিস্তার প্রভৃতি কারণে ইতালি ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা বা আবিসিনিয়া দখল করে। ১৯৩৫ সালের ৩রা অক্টোবর ইতালি ইথিওপিয়ার ওপর আক্রমণ করে। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আবিসিনিয়ার সম্রাট হেইলে সেলাসি দেশ ত্যাগ করেন। ১৯৩৬ ইতালি সম্পূর্ণভাবে দখল আবিসিনিয়া দখল করে নেয়।

চেকোস্লোভাকিয়া: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে চেকোস্লোভাকিয়ার অস্তিত্ব ছিল। ১৯৯২ সালে ভেলভেট বিপ্লবে দেশটি ভেঙ্গে দুটি দেশ ভিন্ন রাষ্ট্র গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এরপর ১৯৯৩ সালে দেশটি বিভক্ত হয়ে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে। এর ফলে বিশ্ব মানচিত্রের বুক থেকে চেকোস্লোভাকিয়া নামটি চিরতরে হারিয়ে যায়।

পার্সিয়া: দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত দেশ পার্সিয়া ছিল ইতিহাসের প্রাচীনতম সভ্যতার একটি। গ্রিকরা মুসলিম প্রধান এই দেশটিকে পার্সিস বলে ডাকত, তবে ইউরোপীয় ভাষায় এর নাম হয় ‘পার্সিয়া’। ১৯৩৫ সালে দেশটির তৎকালীন শাসকের অনুরোধে পার্সিয়া নাম পরিবর্তন করে দেশটির নাম রাখা হয় ‘ইরান’। বর্তমানে সারা বিশ্বে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বৃহত্তম ভাণ্ডার হিসেবে ‘ইরান’ নামটি সবার কাছে সুপরিচিত। বলা হয়, পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের মাধ্যমেই ইরানে আধুনিক ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অভ্যুদয় ঘটে।

নিউট্রাল মরেসনেট:  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ই হারিয়ে যাওয়া দেশ নিউট্রাল মরেসনেট এর কথা অনেকেরই অজানা। অথচ ১৮১৬ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত এ দেশটির অস্তিত্ব ছিল। এমনকি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেশটির নিজস্ব পতাকা, মুদ্রা ও ভাষা ছিল। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি বেলজিয়ামের অধিভুক্ত হয়ে যায়। তবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি দেশটি দখল করে নেয়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত দেশটি জার্মানির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৯৪৪ সালে দেশটি আবার বেলজিয়ামের দখলে চলে যায় এবং মরেসনেট নামটি পৃথিবী থেকে মুছে যায়।

সিলন: ভারতের দক্ষিণাংশে অবস্থিত ১৯৭২ সালের আগ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার পূর্ব নাম ছিল সিলন। প্রাচীনকাল থেকেই এই দ্বীপটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নামে সুপরিচিত। বণিকদের কাছে দ্বীপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল এবং ১৭৯৬ সালে দ্বীপটি ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা অবস্থায়ই ১৯৪৮ সালে দেশটি ‘সিলন’ নামেই স্বাধীনতা লাভ করে। পরে, ১৯৭২ সালে এই নাম পরিবর্তিত হয়ে শ্রীলঙ্কা নামধারণ করে সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়।

সায়াম: ১৮৫১ সাল থেকে ১৯৩৯ সালের আগ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের পূর্ব নাম ছিল সায়াম বা শ্যামদেশ। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। প্রাচীন আমলেই সে সময়কার রাজা দেশটির আধুনিকায়নে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে। তাই, সায়ামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পিতা হিসেবে গণ্য করা হতো সে সময়ের রাজা মংকুটকে। তবে সে সময় দেশটি কোন ইউরোপীয় বা বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না। ১৯৪৯ সাল থেকে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে থাইল্যান্ড নামকরণ করা হলে সায়াম নামটি মুছে যায়।

প্রুশিয়া: প্রুশিয়া নামক ঐতিহাসিক রাষ্ট্রটি জার্মানের ব্রান্ডেনবার্গ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। জার্মানি সৃষ্টির পূর্বে যে কয়েকটি ছোট বড় রাষ্ট্রের সমন্বয় ছিল, তাঁর মধ্যে প্রুশিয়া বৃহত্তম। উনবিংশ শতাব্দীর দিকে ইউরোপের একটি বৃহৎ শক্তির নাম ছিল প্রুশিয়া। পরবর্তীতে জার্মানির অধিভুক্ত হলে এটি জার্মানিকে প্রভাবান্বিত করে ও ঐতিহাসিক প্রুশিয়ান সাম্রাজ্য হারিয়ে যায় চিরতরে। ১৯৩৪ সালে নাজিদের মাধ্যমে দেশটি সভ্যতা থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

অটোম্যান এম্পায়ার: অটোম্যান এম্পায়ারকে উসমানীয় সাম্রাজ্য ও বলা হত । নিবেদিত ও যোগ্য সব শাসকরা এই সাম্রাজ্য শাসন করে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে। বিশেষ করে ১৫শ  ও ১৬শ শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্য ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে একে রোমানীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করা হতো। ১৯২৪ সালে তুর্কি দেশটি অধিগ্রহণ করলে অটোম্যান এম্পায়ার পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭