ইনসাইড পলিটিক্স

ঢাবি উপাচার্য ভুল কী বললেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/07/2018


Thumbnail

কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের চলাচল, অবস্থান বা অন্য যেকোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কথা গত রোববার গণমাধ্যমকে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ঘোষণা করেন, বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হবে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন তখন যত্রতত্র কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এ ঘোষণা আসার পরপরই দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এই বুদ্ধিজীবী ও সুশীলরা ঢাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এই মানুষগুলোই যখন আবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, কিংবা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশের অন্যান্য যে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, সেখানে কিন্তু তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, গলায় পরিচয়সূচক কার্ড ঝুলিয়ে প্রবেশ করতে অসম্মানিত বোধ করেন না। কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা রক্ষার্থে চেকপোস্ট বসানো হলেই তাঁরা ক্ষুব্ধ হন।

বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে যে কেউ যখন তখন প্রবেশ করতে পারেন না। নিরাপত্তারক্ষীকে জবাবদিহি করে, অনুমতি নিয়ে কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তবেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যায়। শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্য সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও গেট আছে। প্রয়োজন মাফিক সেগুলোতে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমনটা আমরা দেখেছি, দেখেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায়ই কেবল এই নিয়মের ব্যতিক্রম হবে কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি বহিরাগত কিংবা দুর্বৃত্তদের আশ্রয়কেন্দ্র? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয়ই কোনো জঙ্গল না যে সেখানে পৃথিবীর সবার অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ছাত্র-শিক্ষকদের মিলনকেন্দ্র। এখানে জ্ঞানচর্চা হবে, জ্ঞান বিনিময় হবে, হবে মননের বিকাশ। সেখানে যদি দুর্বৃত্তরা বিনা বাধায় প্রবেশ করে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো শুভ পরিণাম বয়ে আনে না।

আমরা সবাই জানি, যখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মিছিল হয়, মানববন্ধন হয় তখনই দেখা যায় শহরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে আসা হয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি তাঁদেরকে দিয়ে করানো হয় যা কোনোমতেই কাম্য নয়।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বহিরাগতদের রাজত্ব। এ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যতবারই অভিযান চালানো হয়েছে, বহিরাগত পাওয়া গেছে। গ্রাম থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ছোট ভাই আসলে, চিকিৎসা করতে এলাকা থেকে বন্ধু আসলে তাঁদের জায়গা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে। এমনকি অনেকে নিজের সিট ভাড়া দিয়ে রোজগারও করছে। আবার অনেকে পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও হলের সিট ছাড়ছে না। এগুলো কোনোভাবেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনের মধ্যে পড়ে না। তাহলে ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের কথা বলে উপাচার্য ভুলটা করলেন কী? সুশীল ও বুদ্ধিজীবীদের আবদার রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি তবে অরক্ষিত থেকে যাবে?

এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি বহিরাগতদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকার উচ্চ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। যেখানে দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ছে নূন্যতম খরচে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু এবং শুধুই শিক্ষার জন্য সুরক্ষিত করার দরকার। শিক্ষার স্বার্থে সুরক্ষিত করা দরকার। ছাত্র-শিক্ষক-গবেষক ছাড়া, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ও গবেষণার কাজ ছাড়া বহিরাগত উটকো কোনো ব্যক্তি বিনা কারণে যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরী। উটকো বহিরাগত লোকেরা যে কেবল ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করে তাই নয়, তাঁরা শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট করে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যাতে কোনো আড্ডাখানা হতে না পারে, বহিরাগতদের চারণভূমি হতে না পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পৃথিবীর বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ই সুরক্ষিত। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গর্বের জায়গা, অহংকারের জায়গা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব এখন ক্ষীয়মান। এ গৌরব ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিধিবদ্ধ নিয়মকানুনের মধ্যে আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন বহিরাগতদের চারণভূমিতে পরিণত হতে না পারে সেদিকেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দৃষ্টি দিতে হবে।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭