কালার ইনসাইড

তারকারা বিপদে, উপায় জানালেন পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/07/2018


Thumbnail

তারকাদের ফেসবুক হ্যাক হওয়া তো নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে ইদানিংকালে গত ৯ জুলাই হঠাৎই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকতে পারছিলেন না ‘পোড়ামন-২’ চলচ্চিত্রখ্যাত অভিনেতা সিয়াম আহমেদ। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর সেটি আবার ঠিকঠাক ফেরতও দিয়েছে হ্যাকার গ্রুপ। এমন ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর ১০ জুলাই একই ঘটনা ঘটলো ঢালিউড নায়ক আরিফিন শুভর ফেসবুক প্রোফাইলে। হ্যাকারদের দলটি গত জুলাইয়ের ৬ তারিখ অভিনয়শিল্পী মিথিলা, ৩ তারিখ সংগীতশিল্পী মিনার রহমানের আইডিও একইভাবে হ্যাক করে। এর আগে এপ্রিলে দ্বিতীয়বারের মতো নায়িকা শবনম বুবলীর আইডি হ্যাক এবং দ্বিতীয়বারের মতো ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মোক্তাদিরের পেজ ফেসবুক থেকে মুছে দেয় ওল্ড ম্যাক্সট্যান (ওল্ড মাস্তান)।

হ্যাকাররা কী বলে?

হ্যাক করে তাঁরা ঝুলিয়ে দেয় একটি নোটিশ। সেখানে লেখা, ‘সিকিউরিটি এক্সপেরিমেন্টের জন্য ওল্ড মাস্তান দ্বারা (অমুক তারকার) আইডি হ্যাক করা হয়েছে। উনার আইডি ইনসিকিউরড থাকায় আমরা অনেক চেষ্টা করেছি উনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে এই স্টেপ নিয়েছি। খুব শিগগিরই উনার অ্যাকাউন্ট ব্যাক করে দেওয়া হবে। চিন্তা বা হয়রানির প্রয়োজন নাই।’

এমন আরও একটি গ্রুপ রয়েছে ‘টক্সিক টিম টিটি’। মাহিয়া মাহির ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে তারা। এই গ্রুপের পক্ষ থেকে রাসেল আহমেদ নামে একটি আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়,‘ সেলিব্রেটি অভিনেতারা দেশের ই একটা অংশ। আজ এই ফেইসবুকে শত শত গ্রুপ মুখিয়ে আছে উনাদের বিভিন্ন মানুষের একাউন্ট হ্যাক করে টাকা আদায় করা কিংবা হ্যারাজম্যান্ট করা। হ্যাক করে সিকিউরিটি দুর্বলতাজনিত কারন গুলো দেখিয়ে নিজে থেকে ভিকটিমের সাথে কন্টাক্ট করে একাউন্ট ফিরাই দেই। হ্যাক করে মোটা অংকের টাকার অফার পেয়েও নিজ দায়ীত্ববোধ থেকে কোনো পরিমান টাকার হিসাব ছাড়াই গ্রুপের মালিক কিংবা সেলিব্রেটিকে সিকিউরিটি স্ট্রং করে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা যা করছি ভালোর জন্যই করছি।’

সমাধান কী?  

মো: নাজমুল ইসলাম

এডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সাইবার সিকোয়রিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন

আমার কাছে এ পর্যন্ত ওমর সানী, জাহিদ হাসান, মেহজাবিন, ইশতিয়াক রুমেল, রেদওয়ান রনিসহ আরও অনেকেই এসেছিলেন। যারা এসেছিলেন সবাই আমাদের সেবা পেয়েছেন। যে উদ্দেশ্যে এসেছেন। সেটা আমরা সফল করতে পেরেছি। অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তা উদ্ধার কখন হবে তা নির্ভর করে ফেসবুকের মর্জির উপরে। আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যতটা সম্ভব তাদেও বুঝিয়ে শুনিয়ে একাউন্টটা কন্ট্রোল নেয়ার চেষ্টা করি। কিছুদিন আগে অমিত হাসান ভাই এসেছিলেন। তার মেয়ের ফেসবুক আইডিটা হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। অ্যাকাউন্টটা উদ্ধার করা গিয়েছে। কিন্তু একাউন্টটা এখনো ডি-অ্যাকটিভ করে রাখা। তবে অ্যাকাউন্টটা কন্ট্রোলে এসেছে। অনেক সময় ফেসবুকেরও গাফিলতি থাকে। আমাদের পক্ষ থেকে কোন গাফিলতির কেউ অভিযোগ করতে পারবে না। আমরা সঠিকভাবে বলতে পারবো না এটা কতদিনের মধ্যে উদ্ধার করে দিতে পারবো। এটা পুরোটাই নির্ভর করে থার্ট পাটি, মানে ফেসবুকের উপর। এটা অনেক সময় দ্রুত হয়ে যায়, অনেক সময় দেরি হয়- দুই তিনমাসও হতে পাওে, অনেক সময় হয়ই না। তিন ধরনের অভিজ্ঞতাই আমি পেয়েছি।

শাস্তির ব্যাপারে বলবো, আমরা এ পর্যন্ত অনেক হ্যাকারই ধরেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছি। তবে এইসব হ্যাকারদেও ধরে শাস্তি দেয়া অনেকের উদ্দেশ্য থাকে না। তাদের আইডিটা ফেরত পেলেই হয়। তারা এভাবেই এসে অভিযোগ করেন। সেখানে লিখিত কোন অভিযোগ না পেলে তো আমরা কিছু করতে পারি না। তারকারা চান না এসব মামলায় জড়াতে। তবে তারা যদি মামলা করেন, আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। শুনলাম সেদিন আরেফিন শুভসহ আরও কয়েকজনের আইডি এমন হ্যাক হয়েছে। শুভর আইডি ব্যাক পেয়েছে। শুভ আমেরিকাতে। সে যদি এসে আমাদেও কাছে অভিযোগ করেন। আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

মাহাবুবুর রহমান

সাইবার সিকোয়রিটি অ্যান্ড ক্রাইম অ্যানালাইস্ট

ফাইট ফর সার্ভাইবারস রাইট ট্রাস্ট (এফসিআর)

আমাদের কাছে মেহজাবিন, আরজে ফারহানসহ আরও কয়েকজন জানিয়েছিলেন। সবগুলোই ব্যাক আনা সম্ভব হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আইডিগুলো যারা হ্যাক করেছে, বেশিরভাগ সাময়িকভাবেই নেয়া হচ্ছে। আইডি হ্যাক করে টাকা দাবি করছে, ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে। এমন অভিযোগ খুব একটা শোনা যায় না। শুধু যে আইডি হ্যাক তা নয়, তারকাদের নামে ফেইক আইডি খুলে নানা অপকর্ম করছে অনেকে। এটাও কিন্তু তারকাদের বিরম্বনা।এগুলো অবশ্যই অপরাধের মধ্যে পড়ে। সেলিব্রেটিদের আইডি হ্যাক হওয়ার কারণ, ওনাদের আইডিতে বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা থাকে। বিদেশি কেউ হ্যাক করবে ব্যাপারটি এমন নয়। এটা বাংলাদেশিরাই নিচ্ছে। কারণ বিদেশীদের টার্গেট মার্কেট আর আমাদের টার্গেট মিলে না। এটা ফেইমের জন্যই বেশি করা হয়। তারকাদের পরিচিত বেশি। তাদের আইডি হ্যাক করে নিজেদেরও একটা প্রমোশন মেলে। আমাদের দেশি যারা তারকা আছেন। তাদেরও কিছু লেকিংস আছে। তারা সামাজিক গণমাধ্যমে অত বেশি অ্যাকটিভ হতে পারেন না। তাদের আইডিগুলো লো লেভেলের সিকিউরিটি থাকে। তাদের যেমন ফ্যান -ফলোয়ার দিনকে দিন বাড়ে। তেমনি এমন অ্যাটাকের সম্মুখীনও তো হতে হয়। তারকারা ফেস ভ্যালুর জন্য লিগ্যাল অ্যকশনে যায় না। গেলেও তারা যত দ্রুত পাবে সেখান থেকে বের হয়ে আসে। অ্যারেস্ট তো কতই হচ্ছে, কিন্তু বাদী পক্ষের সচেতনেতা তেমন থাকে না। লিগ্যাল অ্যাকশনে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডকুমেন্ট সুরক্ষিত অবস্থায় রাখবেন। এটা যত দ্রুত সম্ভব থানায় জানানো উচিত। আপনি দেখছেন আপনার আইডি হ্যাক হয়েছে। আশেপাশের থানায় চলে যাবেন। এক্ষেত্রে পুলিশ খুবই হেল্পফুল। আবার ব্যাপার এই আইডিগুলো যারা হ্যাক কওে, তারা ফেইক আইডি দিয়ে করে। সেগুলো ট্রেস করাও একটা ব্যাপার। যেটা হুট করে করার মতো ব্যাপার না। আর এটা কিশোর অপরাধের মধ্যে ফেলা যায়। দেখা যায়, পান থেকে চুন খসলে একজন আরেকজনের আইডি হ্যাক করছে। আইডি ডিজাবেল করে দেয়, আইডির একসেস নিয়ে নিচ্ছে। খুব কম বয়সী ছেলেরা এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।

তারকারা যা বলেন…

শবনম ইয়াসমীন বুবলী

আমার আইডি এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হ্যাক হয়েছে। যদিও আমি ফেসবুকে ততটা অ্যাকটিভ না। আমার পেজ কয়েকজন অ্যাডমিন চালায়। প্রথমবার অত গুরুত্ব দিয়ে ফেসবুকের আইডি কিংবা পাসওয়ার্ড দেয়া ছিল না। হ্যাক হওয়ার পরে আমার অরিজিনাল সব ডকুমেন্ট দিয়ে খুলেছি। কিন্তু সেটাও হ্যাক হলো। র‌্যাবের কাছে গিয়েছিলাম। ফেরত পেয়েছি। এইতো কিছুদিন আগে আবার হ্যাক হলো। হ্যাক করার পর আবার নোটিশ টানিয়ে দেয়া হল আমার আইডিতে যে তারা আমার ভক্ত। তারা সিকোয়রিটির জন্যই এগুলো করছে। এখন আমি কি বলতে পারি? অনিয়মিত থেকে আরও অনিয়মিত হতে হবে। অবশ্যই কারো পার্সোনাল ব্যাপারে হাত দেয়া উচিত না। কিন্তু আমার যদি তারা শুভাকাঙ্খি হয়ে থাকেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। আমার আইডির দূর্বলতা বলে দিতে পারতেন। আমি এদেও বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যকশনে যেতে চাই না। আমি বলবো এরা খুবই ট্যালেন্ট। সেই ট্যালেন্টটা দেশের আরও অনেক কাজ আছে। সেখানে ব্যবহার করতে পারেন। এমন কিছু করুক যাতে তাদের নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। আমরাই তো এমন কোন গর্বের সংবাদ পেলে তা নিয়ে স্ট্যাটাস দেই। আমাদের ভালবাসা প্রকাশ করি। 

অনিমেষ আইচ

গত রোববার আমার আইডি হ্যাক হয়েছে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় জিডি করেছি। আমার ফেসবুক আইডি কে বা কারা হ্যাকড করেছে। কী উদ্দেশ্য তাদের সেটা আমি অনুমান করতে পারছি না। যে কোনো ক্ষতি এড়াতে থানায় জিডি করেছি। যারা আমার আইডি হ্যাকড করেছে, তারা আমার ই-মেইল আইডিও হ্যাক করেছে। সেই হ্যাকড করা আইডি থেকে আমার ফেসবুক বন্ধুদের মেসেজও পাঠানো হচ্ছে। এটা অনেক বিব্রতকর।

অপু বিশ্বাস

আমার আইডিটা যিনি হ্যাক করেছেন তিনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আইডি হ্যাক করে মেসেজ দিয়েছেন। পরে আমি তাকে ফোন করলে জানান, তিনি আমার ভক্ত। আমাকে তিনি ভালোবাসেন। আইডিটা দুর্বল ছিল। এটা প্রোটেক্ট করার জন্যই হ্যাক করেছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি। তিনি ভালো মানুষ। সবকিছু ঠিক করে আমাকে আইডিটা ফেরত দিয়েছেন। এর আগেও আমার আইডি হ্যাক হয়েছিল। পুলিশেও অভিযোগ করেছি।

আরেফিন শুভ

গত ১০ জুলাই হঠাৎ হ্যাক হয় ফেসবুক প্রোফাইল। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কোনও রকম গোলযোগ ছাড়াই ফেরত পাওয়া যায় সেটি। আমার কাছের মানুষ, বন্ধু ও ফ্যানরা এখন থেকে ফেসবুক ইনবক্সে আর যোগাযোগ করবেন না। কারণ, এটা বিশ্বাস করার মতো নয়। যারা আমাকে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, তারা তা করবেন। এখন থেকে ফেসবুক শুধু হবে আমার কাজের আপডেট জানানোর জায়গা। কোনও ধরনের যোগাযোগের জন্য নয় এটি। আমি আসলে এ মাধ্যমটাকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না।

মাহিয়া মাহি

প্রত্যেকের ফেসবুক প্রফাইলে ব্যক্তিগত কিছু বিষয় থাকে। হ্যাক্ড হলে আবার গোপনীয় কী থাকল? আমার আইডি যদি নিরাপদ না হয় তাহলে হ্যাকাররা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারত! এভাবে হ্যাক করে আইডিটা নিজেদের দখলে নেওয়া কি অন্যায় নয়! আমার আইডিটা এখনো ব্যাক পাইনি। ১৯ জুলাই হ্যাক হয় আমার আইডিটা। আমার ভ্যারিফাইড পেজটিও হ্যাক হওয়া। আমি ওদের কাছে অনুরোধ করলাম যদি তারা এত কিছুই পারে আর আমাকে ভালবাসে। তাহলে আমার পেইজটি তারা উদ্ধার করে দিক।



বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭