নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 28/07/2018
বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত সোনায় অনিয়ম ধরা পড়ার ঘটনা ও দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বিপুল পরিমাণ কয়লা গায়েবের ঘটনা গত কয়েক দিন ধরে পত্রিকার পাতা গরম করে রেখেছে। পিছিয়ে নেই টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা অনলাইন গণমাধ্যমগুলোও। এই দুই ইস্যুতে অসংখ্য সংবাদ পরিবেশন করেছে তারাও। সোনায় অনিয়ম ও কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে করা ‘অনুসন্ধানী’ প্রতিবেদনগুলোর তথ্য-উপাত্ত গণমাধ্যম ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের মুখে মুখেও ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৭ জুলাই দেশের একটি জাতীয় দৈনিক শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, গোয়েন্দারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি মিশ্র বা সংকর ধাতুতে পরিণত হয়েছে। আবার ২২ ক্যারেট সোনার গয়না ১৮ ক্যারেট হয়ে গেছে বলেও বলা হয় পত্রিকাটির প্রতিবেদনে। দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে দাবি করে পত্রিকাটি।
স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। অন্যান্য গণমাধ্যমও এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে। এই পরিপ্রেক্ষিতের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়। সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ওপেন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সব সোনা ঠিকঠাক আছে। তাঁর কথা বিশ্বাস না হলে যে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তা দেখে আসতে পারেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দরজা সবার জন্য খোলা আছে বলে জানান আবদুল মান্নান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। অপপ্রচারে বিরক্ত হয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনার মধ্যে মাত্র তিন কেজি দূষিত হয়েছে। এটা কোনো সমস্যাই নয়। এটা নিয়ে ইউজলেস (অপ্রয়োজনীয়) আলোচনা হচ্ছে।’
সোনা কেলেঙ্কারির ঘটনার আপাতত সমাধান হলেও এর পরপরই গণমাধ্যমগুলো বাজারে নিয়ে আসে নতুন ইস্যু। দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে ২১ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে। বর্তমান বাজার মূল্যে যার মূল্য ২২৭ কোটি টাকার ওপরে। এবারও সংবাদটি লুফে নেয় সকল গণমাধ্যম এবং ‘সীমাহীন দুর্নীতির’ দায়ে দেশজুড়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মুণ্ডপাত চলতে থাকে। কিন্তু এবারও থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে অল্প সময়েই। ধীরে ধীরে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ও সাধারণ মানুষ বুঝতে শুরু করে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা রাতারাতি গায়ে হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কয়লা সরাতে পরিবহণের প্রয়োজন। আর এই বিপুল পরিমাণ কয়লা একবারে বা স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে সরানো হলে এত গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হতো না। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ কয়লা গায়েব হয়ে গেছে এই যুক্তিটি ধোপে টেকে না। বাস্তবতা হচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে বিগত তিন সরকারের আমলেই কয়লা গায়েব করা হয়েছে। আর এখন তার সম্মিলিত হিসাব দিচ্ছে সুনির্দিষ্ট কিছু গণমাধ্যম।
কিন্তু তিন সরকারের আমলে গায়েব হওয়া কয়লা নিয়ে প্রতিবেদন করে শুধু আওয়ামী লীগকে দায়ী করার চেষ্টা কেন? আর কেনই বা স্বর্ণ কেলেঙ্কারির মতো ভূতুড়ে সংবাদ? এগুলো কি কাকতালীয় ঘটনা নাকি উদ্দেশ্য প্রণোদিত কর্মকাণ্ড এই নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে। বিশেষ করে একাদশ নির্বাচন যখন আসন্ন তখন কিছুদিন পরপর আওয়ামী লীগ সরকারকে দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা কিন্তু ভিন্ন কোনো পরিকল্পনারই ইঙ্গিত বহন করে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বিষয়গুলোর দিকে আওয়ামী লীগকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭