ইনসাইড পলিটিক্স

তারুণ্যের আইকন শেখ কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/08/2018


Thumbnail

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি। ছিলেন দুর্দান্ত এক ক্রীড়া সংগঠক এবং সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। আরও ছিলেন মিথ্যাচারের রাজনীতির নির্মম এক শিকার। তিনি আর কেউ নন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সুদক্ষ সংগঠক শেখ কামাল। তারুণ্যের আইকন শেখ কামালের আজ জন্মদিন।

শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ই আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নিহত হওয়ার আগে তিনি গর্ব করার মতো অনেক কাজ করে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তাঁর চরিত্র হনন করেছে নোংরা ভাবে।

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই অপপ্রচার ও মিথ্যাচার রাজনীতিকে দূষিত করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালই এই মিথ্যাচারের রাজনীতির, অপপ্রচারের রাজনীতির সবচেয়ে বড় শিকার । হিটলারের সময় নাৎসিদের প্রপাগান্ডামন্ত্রী ও প্রচারণা বিশেষজ্ঞ গোয়েবলস একটি নীতি অনুসরণ করতেন। নীতিটি হলো, একটি মিথ্যাকে বার বার সত্য বলে প্রচার করলে ওই মিথ্যাটাই এক সময় সত্যে পরিণত হয়ে যায়। এই গোয়েবলসীয় নীতি শেখ কামালের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছিল যে কারণে অকাট্য প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও শেখ কামালের মৃত্যুর ৪৩ বছর পরও অনেকে তাঁকে অপরাধী বলে বিশ্বাস করে।

এই গোয়েবলসীয় প্রপাগান্ডার রাজনীতিতে একটি মানুষের যে কীভাবে দুর্নাম করা যায়, চরিত্রহনন করা হয় তার একটি বড় উদাহরণ শেখ কামাল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে সপরিবারে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর প্রচার করা হলো শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাত ছিলেন, শেখ কামাল মেজর ডালিমের স্ত্রীকে অপহরন করেছিলেন। শেখ কামাল বদমাশ, শেখ কামাল লম্পট। অর্থ্যাৎ এমন কোনো অপবাদ নেই যা শেখ কামালকে দেওয়া হয়নি। বস্তুত, হৃদয় বিদারক ১৫ আগস্ট ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফলাফল। এই পরিকল্পনা ছিল বাঙালির স্বাধীনতার দূত শেখ মুজিবের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। এই বিশাল পরিকল্পনার একটি অংশই ছিল শেখ কামালের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা, তাঁর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা।

কিন্তু সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না। সত্যির আলোতে এক সময় মিথ্যার অন্ধকার দূর হয়ে যায়। সময়ের আবর্তনে তাই প্রমাণিত হয়েছে শেখ কামাল কোনো অপরাধী ছিলেন না। ব্যাংক ডাকাতি কিংবা পরস্ত্রী হরণের মতো কোনো অপকর্মই তিনি করেননি। বরং শেখ কামাল ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী, সংস্কৃতিমনা এক মেধাবী তরুণ। যিনি নিজের জীবন ব্যয় করেছেন সৃজণশীল, মননশীল কাজের পেছনে।

মৃত্যুর সময় শেখ কামালের বয়স ছিল মাত্র ২৬। এই স্বল্পস্থায়ী জীবনে শেখ কামাল কত কিছুই না করেছেন। দুর্দান্ত ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন শেখ কামাল। বাংলাদেশের বিখ্যাত ক্রীড়া ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। দক্ষ সংগঠক হিসেবে আবাহনীর জন্য তিনি খেলোয়াড় সৃষ্টি, বাছাই ও প্রশিক্ষণের সব বিষয় দেখাশোনা করতেন।

এছাড়া সংস্কৃতি অঙ্গনেও দারুণ সক্রিয় ছিলেন শেখ কামাল। ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র শেখ কামাল মঞ্চ নাটকও করতেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনেতা হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র। এমনকি ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও এই শেখ কামাল।

শেখ কামালের যদি অসময়ে মৃত্যু না হতো তাহলে দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গন তাঁর হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে যেত। বাংলাদেশে আবাহনীর মতো আরও ক্লাব হতো, স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর মতো আরও অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন হতো। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি।

শেখ কামালের মৃত্যুতে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অমিত প্রতিভাবান শেখ কামাল ছিলেন সমসাময়িক তরুণদের আইকন। এখনো বাংলার তরুণরা যদি তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তবে তরুণ সমাজের রূপই বদলে যাবে। কিন্তু যখন তিনি জীবিত ছিলেন তখন তাঁর প্রতিভাকে, তাঁর মেধাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এই আক্ষেপ আর পূরণ হবার নয়।

আজ শেখ কামালের জন্মদিনে আমাদের মনে রাখতে হবে, চরিত্র হননের রাজনীতি, কলঙ্ক লেপনের রাজনীতি বাংলাদেশে এখনো সচল আছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে এমন অপরাজনীতির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। নতুবা শেখ কামালের মতো ব্যক্তিরা কখনোই তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পাবে না যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭