ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইমপিচমেন্ট কী, কেন, কীভাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/08/2018


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, বর্তমান মার্কিন অর্থনীতির অগ্রগতির কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের সদস্যরা এই নির্বাচনে এগিয়ে থাকবে। তবে অনেকর মতে, ট্রাম্পের কিছু নীতিগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দলটি পিছিয়েও পড়তে পারে।

সম্প্রতি ট্রাম্পের দলের সাবেক দুইজন সদস্য আইন ভাঙ্গার কারণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। এদের একজন আইনজীবী মাইকেল কোহেন। এই সমস্যা তৈরি হওয়ার পর থেকে কোহেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। কোহেনের অভিযোগ, নির্বাচনে অর্থ খরচ করার বিষয়ে যেসব আইন আছে ট্রাম্প তা ভঙ্গ করেছেন। এর পাল্টা জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, কোহেন এখন ‘গল্প’ বানাচ্ছেন। তবে সর্বশেষ এ ঘটনায় ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, সংসদীয় বিচারের মাধ্যমে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া বা ইমপিচ করা হতে পারে। কিন্তু এই ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন কী? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেলায় এর আশঙ্কাই বা কতটুকু?

ইমপিচমেন্ট কি?

যুক্তরাষ্ট্রে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। দেশটির ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঘটনা বিরল। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যেখানে আইন তৈরি করা হয়, তারা দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকেও তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ তাকে ইমপিচ করা যেতে পারে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে, ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ নেওয়া অথবা অন্য কোন বড় ধরনের কিম্বা লঘু অপরাধ।’

ইমপিচ কিভাবে করা হয়?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস থেকে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি মার্কিন কংগ্রেসের একটি অংশ। এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ হতে হবে। পাশ হলে পরের ধাপে বিচার অনুষ্ঠিত হয় সেনেটে, যেটা কংগ্রেসের দ্বিতীয় অংশ। এটা অনেকটা আদালত কক্ষের মতো, যেখানে সিনেটররা বিচারক বা জুরি হিসেবে কাজ করেন। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট দোষী কি নির্দোষ। আর প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিতে হলে, সিনেটদুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরকে ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিতে হয়।

এরকম কী আগে হয়েছে?

সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরেুদ্ধে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এটি ১৯৯৮ সালের ঘটনা। তখন ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রতিনিধি পরিষদে ভোট দেওয়া হয়েছিল। এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬৮ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তকে ক্লিনটন কিংবা জনসন কেউই সিনেটদোষী সাব্যস্ত হয়নি।

ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হলেই প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্টের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে একজন প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি রিচার্ড নিক্সন। ১৯৭৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। ধারণা করা হয়, প্রক্রিয়াটি শুরু হলে তাকে হয়তো প্রেসিডেন্টের পদ থেকে শেষ পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হতো।

ট্রাম্পকে কি ইমপিচ করা হবে?

বিবিসির ভাষ্যমতে, বর্তমানে এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ হিসেবে বলা হয়, হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভ ও সিনেটডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান দলের সদস্য সংখ্যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দল ডেমোক্রেট দলের  সদস্য সংখ্যার চাইতেও বেশি। ফলে প্রচুর রিপাবলিকানকে, আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভে ২৫ জন রিপাবলিকান সদস্যকে এবং সিনেট১৭ জনকে তাদের নেতার বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে এই প্রক্রিয়া শুরু করা এবং তাকে ইমপিচ করার জন্য। যা সম্ভব কিনা প্রশ্ন থেকে যায়।

এ বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনের ফলাফল হয়তো বর্তমানের সক হিসাবকে বদলে দিতে পারে। আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কংগ্রেসের সদস্যদের নির্বাচন করবেন। হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভের সবকটি অর্থাৎ ৪৩৫টি আসনে এবং সেনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টি আসনে এই নির্বাচন হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের ফলে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলতে পারে রিপাবলিকানরা। সেনেটেও এরকম ঘটতে পারে। আর এরকম কিছু হলে ডেমোক্রেটরা হয়তো দেখতে পারেন, ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কংগ্রেসে তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য রয়েছে। তখন পর্যাপ্ত সদস্য বলে ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ট্রাম্পকে সরিয়ে দিলে কী হবে?

ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

সূত্র: বিবিসি

বাংলা ইনসাইডার/বিপি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭