ইনসাইড বাংলাদেশ

ইভিএম কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 31/08/2018


Thumbnail

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০টি আসনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানও নিচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থায় অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কী এই ইভিএম? এর সুবিধা বা অসুবিধাই বা কী? এ বিষয়গুলোই এখানে তুলে ধরা হলোঃ

ইভিএম কী?

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম হলো ভোটদানের একটি সহজ ব্যবস্থা। এতে কাগজে সীল মেরে ভোট দেওয়ার পরিবর্তে একটি যন্ত্র বা মেশিন ব্যবহার করা হয়। মেশিনটিতে একটি পূর্ব-প্রোগ্রামিং করা মাইক্রোচিপ থাকে যা প্রতিটি ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে হিসেব করে প্রদর্শন করে।

যেসব দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়

যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয় ১৯৬০ সালে। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ইউরোপের বেলজিয়াম, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানী, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল, পেরু, কাজাখস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ইভিএম এর ব্যবহার রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতেও ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহার হয়। এছাড়া আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, স্পেন, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশে এই ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা এবং রাজনৈতিক কারনে কয়েকটি দেশে ইভিএম ব্যর্থ হলেও উন্নত দেশগুলোতে এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

ইভিএম এর সুবিধা-অসুবিধা

ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে কয়েক কোটি ব্যালটের খরচসহ বিভিন্ন খাতের অপব্যয় দূর করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একটি জাতীয় নির্বাচনে প্রায় এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে একটি জাতীয় নির্বাচনে খরচ হবে মাত্র নয়শ’ কোটি টাকা।

একটি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন দিয়ে কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব। শুধুমাত্র নতুন প্রোগ্রাম সেট করে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনসহ যেকোন নির্বাচনে একই মেশিন ব্যবহার করা যায়। 

ইভিএমে কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হয় না। ভোটের তথ্য মেশিনে প্রায় ১০ বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকে। একজন ভোটার ভোট দেওয়ার পর ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড ব্যালট ইউনিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর থাকে। ফলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার চাইলেও একজন ভোটারকে একাধিক ভোট দানের সুযোগ করে দিতে পারবেন না।

কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের সুইচ বন্ধ করে দিলেই দখলকারীরা কোনো ভোট দিতে পারবে না। আবার এতে প্রতি মিনিটে ৫টার বেশি ভোট দেওয়া যায় না। ফলে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

খুব কম সময়ে ভোটের ফলাফল জানা যায়। এটিও এভিএমের জনপ্রিয়তার একটি কারণ।

অন্য সব আধুনিক যন্ত্রপাতির মতো ইভিএমেরও রয়েছে কিছু খারাপ দিক।

আমাদের দেশে যে মেশিনটা ব্যবহার করা হয় তা আধুনিক, তবে অত্যাধুনিক নয়। প্রতিটি কেন্দ্রে দক্ষ কর্মী না থাকলে প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে ভোট গ্রহণ ব্যাহত হতে পারে।

ইভিএমের পক্ষে- বিপক্ষে

ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তোড়জোড় দুরভিসন্ধিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এটি সুস্পষ্ট যে ইভিএম সহজে হ্যাক করা যায়, চাইলে একমুহূর্তের মধ্যে ইভিএমের সবগুলো ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো-কমানো থেকে শুরু করে যে কোনো প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকেও পাল্টে দেয়া যায়।

তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ইভিএমকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও পুরনো ধ্যান ধারণা ছেড়ে আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা উচিৎ বলেই মনে করছেন তাঁরা।


বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭