ইনসাইড বাংলাদেশ

জামাত-বিএনপি সম্পর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/09/2018


Thumbnail

জামাতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক বেশ পুরনো। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জামাত বিএনপির সাথে যুক্ত আছে। মূলত শুরু থেকেই বিএনপি নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্যই জামাতকে ইন্ধন দিয়ে আসছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিরোধিতা করায় স্বাধীন দেশে জামাতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জামাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে জামাত আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। ১৯৭৯ সালের দিকে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি-জামাত জোটের বয়স প্রায় ৩৮ বছর। বিএনপি-জামাত সরকার জোটবদ্ধ হয়ে একসাথে দু’বার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ক্ষমতা হাতে নিয়েছে একবার। তবে বহু পুরনো এ সম্পর্কে এবার চিড় ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জামাতের আন্দোলন করার কথা থাকলেও, রাজপথে সেই ভাবে সক্রিয় দেখা যায় নি জামাতকে। খালেদা জিয়ার সাজা বিএনপির দলীয় ইস্যু দাবি করে এই আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে জামাত। প্রকাশ্যে একসাথে কোথাও সমাবেশ বা মিছিল করতে দেখা যায় নি তাদের।

নির্বাচনকে সামনে রেখে গোপনে দল গোছাচ্ছে সব রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের আগে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বেশ আগে থেকেই বিএনপির ওপর আসছে নানা দেশি-বিদেশি চাপ। সাম্প্রতিক সময়ে জামাত-বিএনপি সম্পর্ক নিয়ে দলের মধ্যেই রয়েছে তর্ক-বিতর্ক। দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই দাবি করছেন, বিএনপি-জামাত সম্পর্ক এখন ভাঙ্গনের পর্যায়ে। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি বিএনপি। সেই ভিত্তিতেই এখন পর্যন্ত ১৯ দলের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে জামাত।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিএনপির জনসমর্থন পাওয়া অনেকটাই কষ্টকর হবে। এ নিয়ে বিএনপিতে অনেক মতভেদ রয়েছে। জামাতের সাথে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির এক পক্ষ দাবি করছে জামাতকে বিএনপির সাথে রেখেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। অপর পক্ষের দাবি, জামাতকে নিয়ে নির্বাচন করলে জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে না। জামাতকে নিয়ে বিএনপি আছে এখন উভয়দ্বন্দ্বে। এদিকে জোট ভাঙ্গার গুঞ্জনকে যেন আমলেই নিচ্ছে না জামাতের নেতারা। বিএনপির সাথে জোট ভাঙ্গার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে জামাতের সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জামাতের জোট ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনাই নেই।

এবারের তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে দল দু’টির মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়েন দেখা গেছে। সিলেট সিটি নির্বাচনে জামাতের মেয়র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের প্রার্থীতা নিয়ে দুই দলের মধ্যে সম্পর্কে মনোমালিন্য দেখা যায়। তিন সিটি নির্বাচনে জামাত অন্তত একটি আসনে জয়লাভ করতে চেয়েছিল। সে লক্ষ্যেই সিলেট নির্বাচনে জয় লাভ করার জন্যে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রার্থীতা সরিয়ে দেওয়ার জন্যও বিএনপিকে নানা ভাবে চাপ দিয়েছে জামাত। সিলেট সিটি নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরির যথেষ্ট জনপ্রিয়তা থাকায় বিএনপি জামাতের এই ধরনের আবদার আমলে নেয় নি।

নব্বই এর পরবর্তী সময়ে জামাত অন্য দলগুলোর সাথে মিলিত হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করলেও, ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার যুক্ত হয় বিএনপির সাথে। বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় সারা দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতিসহ নানা ধরনের নৈরাজ্য জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বিএনপি-জামাত জোট সরকার।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও সেই জোট ভাঙ্গে নি। সে সময় বার বার দেশে হরতাল, অবরোধ অগ্নিকান্ডসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিল জামাত-বিএনপি জোট। ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে জামাত-বিএনপি সহিংস হয়ে ওঠে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ও দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলে জামাত সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচীতে নামে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জামাতকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

বিএনপি-জামাত জোট যতবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, ততবারই দেশে সৃষ্টি হয়েছে ত্রাসের রাজনীতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি বিএনপি। তবে সহিংসতা থেমে থাকেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিরোধিতা করে সারাদেশে বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাসের রাজত্ব আবার শুরু হয়। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতর ঢুকে জামাত-বিএনপি সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যদিও তাদের এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।


বাংলা ইনসাইডার 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭