ইনসাইড পলিটিক্স

অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/09/2018


Thumbnail

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্থির পরিস্থিতি। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারবিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়ার একটি দৃশ্যমান পটভূমি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশের উদ্যোগ নেয় বাম দলগুলো। অথচ এই বাম দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল। এছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি যুক্তফ্রন্ট সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী গতকাল শনিবার সরকারকে হুমকির সুরে বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। এসব ঘটনায় রাজনীতিতে একটা অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে।

এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা উদাসীন ভাব বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-হুঙ্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। নির্বাচনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বিরোধীদের উত্তরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একমাত্র ওবায়দুল কাদের ও তোফায়েল আহমেদই কথা বলছেন। অন্য নেতাদের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ আত্মবিশ্বাসী যে নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগই জয়লাভ করবে। এই কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা অতি আত্মবিশ্বাসী ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যতবার আওয়ামী লীগ অতি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে ততবারই দলটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।

সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসের মূল্য দেয় আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্টের আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজের প্রতি বাঙালির ভালোবাসার বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারে একথা বিশ্বাসই করতেন না তিনি। এই আত্মবিশ্বাসই কাল হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য।

পরবর্তী ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও অতি আত্মবিশ্বাসের জন্য ভরাডুবি ঘটে আওয়ামী লীগের। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, তারা মন্ত্রিপরিষদও ঠিক করে ফেলেছিল। সে সময় এরশাদ সরকারের আমলে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এম. কে. আনোয়ার ও কেরামত আলী আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদেরকে দলে নেয়নি অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। এরপর তাঁরা বিএনপিতে যোগ দেন আর নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি।

২০০১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ অতি আত্মবিশ্বাস দেখায়। সে বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আসলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নিজেদের মেয়াদে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারেও অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার লতিফুর রহমান সহ নির্বাচন কমিশনের অনেকেই আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিলেন। তাঁরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করবে বলে সতর্কও করে দিয়েছিল দলটির শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কিন্তু অতীতের মতো এবারও আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। ফলস্বরূপ নজিরবিহীন কারচুপির নির্বাচনে পরাজয় ঘটলো আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪১ শতাংশ ভোট পেল ঠিকই কিন্তু জাতীয় সংসদে সিট পেল মাত্র ৬২টি।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে অতীতের সেই পুরনো অহমিকা, পুরনো আত্মতুষ্টি আর অতি আত্মবিশ্বাস আবারও দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যেন নিশ্চিত যে তাঁরা আবার ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ভালো হলেও যেকোনো বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাস খুবই ভয়াবহ প্রবণতা। ২০০১ এর ১৩ জুলাই ক্ষমতা ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী নিজেদের দপ্তরে কোটটাও রেখে এসেছিল কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতো কিছুদিনের মধ্যেই দপ্তরে ফেরত আসতে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়ে দপ্তরে আর ফেরত আসা হয়নি সেই অতি আত্মবিশ্বাসী মন্ত্রীদের।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। কিন্তু তারপরও দলটি মাঝে মধ্যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। তবে দলটি কিন্তু কখনো প্রতিপক্ষ বা দ্বিতীয়, তৃতীয় শক্তির কারণে বিপর্যয়ে পড়ে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, অতি আত্মবিশ্বাস আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের কারণ। অতি আত্মবিশ্বাস থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা সৃষ্টি হয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যা আবার দেখা যাচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও মধ্যে কাজ করার কোনো আগ্রহ নেই, নেই কোনো উদ্দীপনা। সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনগুলোতেও একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও তেমন কোনো তৎপরতা কিংবা উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। অথচ দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনের সময়টাতে দেশের রাজনীতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আওয়ামী লীগ কি আরেকটি সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে?

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭