নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্থির পরিস্থিতি। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারবিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়ার একটি দৃশ্যমান পটভূমি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশের উদ্যোগ নেয় বাম দলগুলো। অথচ এই বাম দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল। এছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি যুক্তফ্রন্ট সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী গতকাল শনিবার সরকারকে হুমকির সুরে বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। এসব ঘটনায় রাজনীতিতে একটা অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে।
এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা উদাসীন ভাব বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-হুঙ্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। নির্বাচনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বিরোধীদের উত্তরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একমাত্র ওবায়দুল কাদের ও তোফায়েল আহমেদই কথা বলছেন। অন্য নেতাদের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ আত্মবিশ্বাসী যে নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগই জয়লাভ করবে। এই কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা অতি আত্মবিশ্বাসী ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যতবার আওয়ামী লীগ অতি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে ততবারই দলটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসের মূল্য দেয় আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্টের আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজের প্রতি বাঙালির ভালোবাসার বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারে একথা বিশ্বাসই করতেন না তিনি। এই আত্মবিশ্বাসই কাল হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য।
পরবর্তী ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও অতি আত্মবিশ্বাসের জন্য ভরাডুবি ঘটে আওয়ামী লীগের। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, তারা মন্ত্রিপরিষদও ঠিক করে ফেলেছিল। সে সময় এরশাদ সরকারের আমলে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এম. কে. আনোয়ার ও কেরামত আলী আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদেরকে দলে নেয়নি অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। এরপর তাঁরা বিএনপিতে যোগ দেন আর নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি।
২০০১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ অতি আত্মবিশ্বাস দেখায়। সে বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আসলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নিজেদের মেয়াদে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারেও অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার লতিফুর রহমান সহ নির্বাচন কমিশনের অনেকেই আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিলেন। তাঁরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করবে বলে সতর্কও করে দিয়েছিল দলটির শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কিন্তু অতীতের মতো এবারও আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। ফলস্বরূপ নজিরবিহীন কারচুপির নির্বাচনে পরাজয় ঘটলো আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪১ শতাংশ ভোট পেল ঠিকই কিন্তু জাতীয় সংসদে সিট পেল মাত্র ৬২টি।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে অতীতের সেই পুরনো অহমিকা, পুরনো আত্মতুষ্টি আর অতি আত্মবিশ্বাস আবারও দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যেন নিশ্চিত যে তাঁরা আবার ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ভালো হলেও যেকোনো বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাস খুবই ভয়াবহ প্রবণতা। ২০০১ এর ১৩ জুলাই ক্ষমতা ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী নিজেদের দপ্তরে কোটটাও রেখে এসেছিল কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতো কিছুদিনের মধ্যেই দপ্তরে ফেরত আসতে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়ে দপ্তরে আর ফেরত আসা হয়নি সেই অতি আত্মবিশ্বাসী মন্ত্রীদের।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। কিন্তু তারপরও দলটি মাঝে মধ্যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। তবে দলটি কিন্তু কখনো প্রতিপক্ষ বা দ্বিতীয়, তৃতীয় শক্তির কারণে বিপর্যয়ে পড়ে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, অতি আত্মবিশ্বাস আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের কারণ। অতি আত্মবিশ্বাস থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা সৃষ্টি হয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যা আবার দেখা যাচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও মধ্যে কাজ করার কোনো আগ্রহ নেই, নেই কোনো উদ্দীপনা। সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনগুলোতেও একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও তেমন কোনো তৎপরতা কিংবা উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। অথচ দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনের সময়টাতে দেশের রাজনীতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আওয়ামী লীগ কি আরেকটি সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে?
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া লবিস্ট ফার্ম বিএনপি
মন্তব্য করুন
আজ প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা এবং প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন যেমন উপজেলা নির্বাচন তাদের নিজেদের মতো করে পর্যবেক্ষণ করছে, যারা আচরণবিধি এবং নির্মাণের নির্বাচনের আইন কানুন লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করছে, ঠিক তেমনই আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব উদ্যোগে দলের শৃঙ্খলা এবং মন্ত্রী-এমপিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় টিম সরাসরি কাজ করেছে এবং তারা প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত সবগুলো উপজেলার নির্বাচন মনিটরিং করেছে। যেখানে তারা খোঁজখবর নিয়েছে যে, মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনে কতটা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনকে তারা কতটা বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করেছে এবং তাদের কারণে নির্বাচনে কী কী ধরনের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। আর এক্ষেত্রে যারা নির্বাচনের স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত পরিবেশ নষ্টের জন্য দায়ী থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, এই উপনির্বাচনগুলোতে যারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নীতিগত অবস্থান নেওয়া হয়েছে। যারা নির্বাচনে তাদের নিজস্ব প্রার্থী বা আত্মীয়স্বজনকে জেতানোর জন্য প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করতে চাইবে বা নির্বাচনের পেশি শক্তি প্রয়োগ করতে চাইবে তারা দলের পদ হারাবেন। উপজেলা নির্বাচনের সবগুলো ধাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে বলেও আওয়ামী লীগের ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছেন- একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। আর এক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগে যারা বাধা দেবে; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বানেকে যারা কলুষিত করতে চাইবে, তাদেরকে আওয়ামী লীগের কোন পদে থাকা রাখা হবে না, তারা যে পর্যায়ে বা যে পদেই থাকুন না কেন।
বিশেষ করে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের মাই ম্যান হিসাবে প্রার্থীদেরকে দাঁড় করিয়েছেন, তারা যদি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে তাহলে যারা প্রার্থী এবং যারা প্রার্থীদেরকে মদত দিচ্ছেন তারা উভয়ে দলের পদ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হল যে, এই সব উপজেলা নির্বাচনে যারা দলের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন, নিজস্ব পছন্দের ব্যক্তিকে জয়ী করার জন্য পেশিশক্তি প্রয়োগ করবেন ভবিষ্যতে মনোনয়নের খাতা থেকে খাতা থেকে তাদের নাম বাদ যাবে। তাদেরকে ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য যে, এর আগেও যারা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছিল এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল তাদের অনেককেই গত নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে এলাকায় নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন, আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন ঝুঁকিতে পড়বে বলেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার দাবি বিএনপির দীর্ঘদিনের। শুধু দাবি নয়, এ নিয়ে বিএনপির তদবিরও করছে। সরকারের সাথে পর্দার আড়ালে নানা রকম আলাপ আলোচনাও চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। আর বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি যেন সরকার দেয় এ জন্য দুটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই লবিস্ট ফার্মের একটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক, অন্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক। এই লবিস্ট ফার্মগুলো যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবে এবং বাংলাদেশ সরকারের ওপর যেন এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয় সে জন্য চেষ্টা করবে।
আজ প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা এবং প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন যেমন উপজেলা নির্বাচন তাদের নিজেদের মতো করে পর্যবেক্ষণ করছে, যারা আচরণবিধি এবং নির্মাণের নির্বাচনের আইন কানুন লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করছে, ঠিক তেমনই আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব উদ্যোগে দলের শৃঙ্খলা এবং মন্ত্রী-এমপিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করছে।
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।