নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 03/09/2018
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে নানা বিষয়ে দেশটিকে অর্থ সাহায্য দিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে ৩০ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। এর আগেও ৫০ কোটি ডলারের একটি সাহায্য পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কেন ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার পরও পাকিস্তান থেকে এসব অর্থ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে চিড় ধরল কেন?
সম্প্রতি অর্থ সাহায্য বাতিলের বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলছে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা করতে পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে। জঙ্গি মোকাবেলায় পাকিস্তান প্রকৃত অর্থে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। একারণে এই অর্থ সাহায্য বাতিল ঘোষণা করেছে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি তখন বলেছেন, পাকিস্তানকে শত শত কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেওয়ার পরও দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করছে। চলতি বছরের শুরুতেই তিনি এক টুইট বার্তার মাধ্যমে জানান, পাকিস্তানে সকল ধরনের অর্থ ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পেন্টাগন মুখপাত্র লে. কর্নেল ফকনার অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তানে হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও আফগান তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে পাকিস্তান কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই অর্থ সাহায্যের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। এই বাতিলকৃত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে ‘জরুরী ভিত্তিতে অগ্রাধিকার’ দেওয়া দরকার সেইসব খাতে ব্যয় করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য খুব শিগগিরই পাকিস্তানে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে। আর এই সফরের অর্থ সাহায্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলো। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ঘোষণা করেছিল, পাকিস্তানকে নিরাপত্তা খাতে দেওয়া অর্থ সাহায্য কাটছাট করতে যাচ্ছে দেশটি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা আরো অনেক দেশই পাকিস্তানের দিকে দীর্ঘদিন ধরে আঙ্গুল তুলে বলে আসছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আফগানিস্তানের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা সেখানে হামলা পরিচালনা করছে।
তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাছাড়া সম্প্রতি অর্থ সাহায্য বাতিল নিয়েও এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যখন এরকম একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তখন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘পাকিস্তান কখনো অর্থের জন্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি। করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।’ পাকিন্তান বলেছে, ‘প্রচুর রক্তপাত ও সম্পদের বিনিময়ে পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
পাকিস্তানের কথিত জঙ্গি নেটওয়ার্ক কারা?
পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এদের তৎপরতা মূলত প্রতিবেশী আফগানিস্তানে। এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ে কাবুল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছে, পাকিস্তানের সহযোগিতা নিয়েই এই নেটওয়ার্কের জঙ্গিরা আফগানিস্তানের ভেতরে ঢুকে সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করছে। আর এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে আফগান তালেবানদের, যা আফগান সরকারের জন্যে বড়ো ধরনের হুমকিস্বরূপ।
আফগান তালেবানের সঙ্গে আবার পাকিস্তানি তালেবানদের সম্পর্ক আছে, যারা বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়েছে। এই গোষ্ঠীরা আফগানিস্তানের ভেতরেও বেশকিছু হামলা চালিয়েছে। আর ওইসব হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যসহ কর্মকর্তারাও নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) এসব জঙ্গিদের সমর্থন দিচ্ছে।
কেন পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন দিচ্ছে?
পাকিস্তান পররাষ্ট্র নীতির স্বার্থে আফগান তালেবানকে ব্যবহার করে থাকে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠানোর পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আফগানিস্তানের ভেতরে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য ও প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। ২০০১ সালের পর থেকে আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে সেখানে পশ্চিমা সৈন্য ও রসদ পাঠানো হয়। আল কায়দার মতো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে সহায়তা দেয়।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এ সবকিছুর মধ্যেও পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব সীমিত করার লক্ষ্যেই পাকিস্তান এসব জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার/বিপি
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭