নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৫ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে নানা বিষয়ে দেশটিকে অর্থ সাহায্য দিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে ৩০ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। এর আগেও ৫০ কোটি ডলারের একটি সাহায্য পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কেন ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার পরও পাকিস্তান থেকে এসব অর্থ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে চিড় ধরল কেন?
সম্প্রতি অর্থ সাহায্য বাতিলের বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলছে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা করতে পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে। জঙ্গি মোকাবেলায় পাকিস্তান প্রকৃত অর্থে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। একারণে এই অর্থ সাহায্য বাতিল ঘোষণা করেছে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি তখন বলেছেন, পাকিস্তানকে শত শত কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেওয়ার পরও দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করছে। চলতি বছরের শুরুতেই তিনি এক টুইট বার্তার মাধ্যমে জানান, পাকিস্তানে সকল ধরনের অর্থ ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পেন্টাগন মুখপাত্র লে. কর্নেল ফকনার অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তানে হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও আফগান তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে পাকিস্তান কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই অর্থ সাহায্যের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। এই বাতিলকৃত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে ‘জরুরী ভিত্তিতে অগ্রাধিকার’ দেওয়া দরকার সেইসব খাতে ব্যয় করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য খুব শিগগিরই পাকিস্তানে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে। আর এই সফরের অর্থ সাহায্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলো। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ঘোষণা করেছিল, পাকিস্তানকে নিরাপত্তা খাতে দেওয়া অর্থ সাহায্য কাটছাট করতে যাচ্ছে দেশটি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা আরো অনেক দেশই পাকিস্তানের দিকে দীর্ঘদিন ধরে আঙ্গুল তুলে বলে আসছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আফগানিস্তানের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা সেখানে হামলা পরিচালনা করছে।
তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাছাড়া সম্প্রতি অর্থ সাহায্য বাতিল নিয়েও এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যখন এরকম একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তখন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘পাকিস্তান কখনো অর্থের জন্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি। করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।’ পাকিন্তান বলেছে, ‘প্রচুর রক্তপাত ও সম্পদের বিনিময়ে পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
পাকিস্তানের কথিত জঙ্গি নেটওয়ার্ক কারা?
পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এদের তৎপরতা মূলত প্রতিবেশী আফগানিস্তানে। এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ে কাবুল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছে, পাকিস্তানের সহযোগিতা নিয়েই এই নেটওয়ার্কের জঙ্গিরা আফগানিস্তানের ভেতরে ঢুকে সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করছে। আর এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে আফগান তালেবানদের, যা আফগান সরকারের জন্যে বড়ো ধরনের হুমকিস্বরূপ।
আফগান তালেবানের সঙ্গে আবার পাকিস্তানি তালেবানদের সম্পর্ক আছে, যারা বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়েছে। এই গোষ্ঠীরা আফগানিস্তানের ভেতরেও বেশকিছু হামলা চালিয়েছে। আর ওইসব হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যসহ কর্মকর্তারাও নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) এসব জঙ্গিদের সমর্থন দিচ্ছে।
কেন পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন দিচ্ছে?
পাকিস্তান পররাষ্ট্র নীতির স্বার্থে আফগান তালেবানকে ব্যবহার করে থাকে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠানোর পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আফগানিস্তানের ভেতরে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য ও প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। ২০০১ সালের পর থেকে আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে সেখানে পশ্চিমা সৈন্য ও রসদ পাঠানো হয়। আল কায়দার মতো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে সহায়তা দেয়।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এ সবকিছুর মধ্যেও পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব সীমিত করার লক্ষ্যেই পাকিস্তান এসব জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার/বিপি
মন্তব্য করুন
ইরান ইসলামি বিপ্লব ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।
আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।
এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।
এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।
ইব্রাহিম রাইসি ইরান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা মোসাদ সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ইরান রাষ্ট্রদূত হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।
এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দাফন মৃত্যু
মন্তব্য করুন
১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে। এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।