কালার ইনসাইড

‘মাঝেমধ্যে রাগ করে বলি, আমাকে তো মেরে ফেলবেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/09/2018


Thumbnail

গেল কয়েক বছরে ছোট পর্দায় তিনি আলোচনার শীর্ষে। রোমান্টিক হিরো হিসেবে পরিচিতি থাকলেও নিজের এই ইমেজ ভেঙে নানারূপে নিজেকে প্রকাশ করেন। এই অভিনয় ক্যারিশমা দেখানো চাট্টিখানি কথা নয়। সেসব নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে।

ঈদের পরের ব্যস্ততা...

কোমর ব্যথায় ভুগছি বেশ কিছুদিন ধরে। আর ঈদের আগে এ নিয়েই করতে হয়েছে টানা শুটিং। ঈদের প্রায় দশ দিন আগে এই যন্ত্রণা শুরু হয়। ‘ট্যাটু’, ‘লালাই’, ‘জীবন এখানে এমন’ নাটকগুলো কোমর ব্যথা নিয়েই করতে হয়েছে। ইউনিটের লোকজন ধরে এখান থেকে ওখানে নিয়ে যেত। ‘এবার তোরা মানুষ হ’ নাটকটিতে তো কোমর ব্যথার জন্যই চরিত্রটাকে হুইল চেয়ারে বসানো হয়েছে। আমাদের জায়গাগুলো এমন হয়ে গেছে। ইচ্ছে করলেই কাজ বন্ধ করতে পারিনা। ইচ্ছে করলেই বিশ্রাম নিতে পারিনা। সেটা শুটিং স্পটেও। আমার সঙ্গে অনেক মানুষ যুক্ত। মাবরুর রশীদ বান্নাহর ‘আমাদের বকরভাই’ নামের একটি নাটকের পাঁচদিনের শুটিংয়ের প্রথম দিনেই বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে হাঁটুর লিগামেন্ট ছিড়ে গেছে। এখনো ছেড়া। তা নিয়েই চলে যাচ্ছে। ঈদের সময় তাই কিছুটা বিশ্রাম নিয়েছি। একদম ফোন থেকেও দূরে। বাসায় শুয়ে বসে কাটিয়েছি।

সামনে শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বরের নাটক নিয়ে ব্যস্ততা। এর আগে নিজেকে যতটা বিশ্রাম দেয়া যায়। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র করতে গেলে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তার জন্য মানসিক এবং শারীরিক যে বিশ্রামটা দরকার। সেটা তো সবসময় পাওয়া সম্ভব হয় না।

শোনা যায়, যে চরিত্রটা নিয়ে পরিশ্রম একটু বেশি করতে হয়। বর্তমান সময়ে সেখানে পছন্দের তালিকার প্রথমে আপনি থাকেন। আপনার কী মনে হয়?

আমার মনে হয় এই এফোর্টটা সহজাত হয়ে গেছে। গ্রামের কাদা মাখামাখি থেকে শুরু করে পাগলের চরিত্র। সবটাই যেন আমার করতে হবে। দুই দিনের মধ্যে পাঁচটা লুক নিতে হবে। ডাক পড়বে আমার। আমি মাঝেমাঝে রাগ করে বলি, আমাকে তো মেরে ফেলবেন। আপনারা তো সময়ও দিবেন না। পাঁচদিন নেন পাঁচটা লুকের জন্য। তাও নিবেন না। এই দুইদিনেই করবেন। ওই যে তখন বাজেট ব্যাপারটা চলে আসে। পারলে ওই দুইদিনেরটা কমিয়ে একদিনে নিয়ে আসারও একটা ব্যাপার হয়ে যায়। কিন্তু এখানে আসলে নির্মাতাদেরও দোষ দিচ্ছি না। বাজেটের সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাদেরও তো ভালো গল্প বলতে ইচ্ছে করে।

আর এর জন্যই কি গেল কয়েক বছরে আপনার নাটক আলোচনার শুরুর দিকেই থাকে?

আমি আসলে পরিশ্রমটা করি খুব। মানুষ আমাকে আর যাই বলুক না কেন। এটা বলবে যে সে পরিশ্রমী অভিনেতা। এসির বাতাস খেয়েও তো কম নাটক পাবো না। আমার যেটা খুব ইজিয়েস্ট জোন। সেখানে আমার মন টেকে না। চ্যালেঞ্জ নেই। এটা করতেই হবে। পরিচালকরাও সাহসটা পায়।

এবার ঈদের নাটক কেমন দেখলেন?

এখন গল্প নির্ভর কাজ বেশি হচ্ছে। অনেক বেশি আলোচনায় আসছে। যারাই রিভিউ দিচ্ছেন না কেন। আগে পুতুপুত প্রেমটাই বেশি আলোচনায় আসতো। দিনের শেষে এখন দর্শকের রূচির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন, সিনেমার মত নাটকেও জনরা তৈরী হচ্ছে। যেটা আমরা বিশ্ব সিনেমায় দেখি। নির্মাতারা নানা জনরা নিয়ে কাজ করার সাহস পাচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার হয়েছে আমাদের অভিনয়শিল্পীদের জন্য। এখানে উদাহরণ টানতে পারি, মেহজাবিন সুন্দরী হোক বা না হোক। তাকে পারফর্মার হতেই হবে। শুধু সুন্দরী বলেই সে পার পাবে না। সৌন্দর্য হয়তো প্লাস পয়েন্ট হবে। কিন্তু অভিনয় না জানলে এক না একদিন সে হেরে যাবে এখানে। ওকে সাধারণ একটা মেয়ে হতে হচ্ছে। যেকোন অভিনয়শিল্পীকে লেখক, ডিরেক্টররা, দর্শকরা এখন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। আমাদের সেটা গ্রহণ করে লড়াই করতে হচ্ছে। এটা একটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই পজিটিভ। একটা সময় ছিল ক্লিনশেভ একটা ছেলে আর সুন্দরী একটা মেয়ে মডেল হবে। আফজাল হোসেন ভাইরা সেটা করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এক সময় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কিংবা অমিতাভ রেজা ভাইয়েরা আসলেন। বিজ্ঞাপনের ভাষা পরিবর্তন হয়ে গেছে। নাটকের ক্ষেত্রেও এখন পরিবর্তন আসছে। দর্শকও কোনো না কোনোভাবে নাটক দেখছেন। তবে সময় এখন যে যত নিজেকে ভাঙ্গতে পারবে। সে তত জনপ্রিয়তা পাবে।

সময়টা নিয়ে আপনি খুশি?

চরিত্র নিয়ে খেলার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে। একজন প্রেমিক যে সবসময় রোমান্টিক সংলাপই বলবেন, সেটা যারা বিশ্বাস করে না। সে কাতারে অনেকদিন আগে থেকেই ছিলাম আমি। আজকালকার নাটকে যা অনেক বেশি প্রতিফলিত হচ্ছে। আমাকে ডিফারেন্ট কিছু করতে হবে। আমাকে ভাঙ্গতে হবে। এটা এমন নয় যে আমি হিরোর মতো দেখতে বলে আমার প্রতিটা গল্পে হিরোইজিমই দেখাতে হবে। আমিও হারতে পারি। সেটা দেখাতে সমস্যা কি। একজন রিকসাওয়ালাও সময়ের স্রোতে হিরো হতে পারে। সেটা দেখতে পারি এ সময়ে।

ভিন্নতার কথা বলেন, ঈদে আপনার ৩৫ টির উপরে নাটক প্রচার হয়েছে। এত গুলো নাটকে অভিনয় করে মানটা ধরে রাখা সম্ভব হয়?

এতগুলো নাটকও যদি হয়। আমি বলবো নিজেকে আলাদা করতে পেরেছি বা চেষ্টায় ছিলাম। একটা চরিত্রের সঙ্গে অন্য আরেকটি চরিত্রের মিল খুব কম নাটকেই পাবেন। এটাও কিন্তু ঠিক যে অনেক আগের করা নাটক প্রচার হয়। এই যে ‘আঙুর বালা’ নাটকটি। এটা কিন্তু আমাদের প্রায় তিন বছর আগের করা নাটক। সেটা এবার ঈদে প্রচার হয়েছে। এনটিভিতে প্রচার হয়েছে ‘আমার একটি গল্প বলার ছিল’। এটা রোজার ঈদে করা। ‘লায়লা তুমি কি আমাকে মিস করো’ নাটকটি ছিল গত ভালবাসা দিবসের জন্য করা। এরকম আগের কাজও প্রচার হয়। আমার অভিনয়ের বয়সকাল থেকে, আমার সমসাময়িক যারা কাজ করছে। আমি বলবো একমাত্র আমিই এই ব্যাপারটি অনেকবেশি মেনে চলার চেষ্টা করতাম। আমাকে আলাদা হতে হবে। আমাকে রোমান্টিক যেমন হতে হবে। আমাকে পাগল কিংবা মুচিও হতে হবে। আমাকে চাষী, রিকসাচালক থেকে সব চরিত্র হতে হবে। এটা আমি কখনোই ভাবিনি যে আমার সুটেট বুটেট থাকতে হবে। আমি পাল্লা দিয়ে নাটক করবো। চরিত্র নিয়ে খেলাটাই আসলে আমার মজা।

অভিনয়ের শুরুটা হয়েছিল গাজী রাকায়েতের হাত ধরে। আর অভিনয়ের গুরু মানেন হুমায়ূন ফরিদীকে। ওনারা এখনো আপনার মধ্যে কতটা বিদ্যমান?

ফরিদী ভাইকে অনেক হ্যান্ডসাম বলবো না। এরকম একটা মানুষ যে মিডিয়াতে তোলপাড় করলো। তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন লুকটাই অতীব জরুরি না। সেখানে যদি আমার লুক থাকে তো সেটা প্লাস পয়েন্ট। সে তো আমার অভিনয়ের বাবা। আমি কখনোই তাকে ছাড়াতে পারবো না। তবু আমার স্বপ্ন একদিন মানুষ তার মতো আমাকেও মনে রাখবে। অভিনয়ের জন্য ভালবাসবে। আমার একটা সময়ে হঠাৎ করে মনে হতো উনি যদি আমার বাবা হতেন বা সুবর্ণা আপা যদি আমার মা হতেন। হয়তো আরও সান্নিধ্য পেতাম। হয়তো আরও নিজেকে তৃপ্ত মনে হত। শিল্পী সত্তার একটা দায়িত্ববোধেরও জায়গা আছে। হয়তো আমার ক্যারেক্টারে প্রেম থাকবে। তবে সেটা যে সব সময়ই নর-নারীর প্রেম থাকতে হবে তা নয়। কখনো আমার সঙ্গে ছাত্রের প্রেম। কখনো পশুর সঙ্গে প্রেম। একটা সময় তো আর ইয়ং থাকবো না। তখন আসলে আমার অভিনয়টাই থাকবে। এই হিরোইজিমটা তো একটা সময়ে করতে পারবো না। ফরিদী ভাই সবটায় সেরা ছিলেন। যে মানুষটা ভিলেনের চরিত্র করতেন। সেই মানুষটাই আবার রোমান্টিক সংলাপ বলতেন। মানুষ নতুন কিছু পেত। রাকায়াত ভাইয়ের হাত ধরে আমার অভিনয় শুরু। আমি শুরু থেকেই বলতাম ভাইয়া আমি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র করবো। উনি বলতেন এটা অনেক কষ্টকর। তখন বলতাম আমি কষ্ট করতে রাজি আছি। এর জন্য আমি কখনো পিছপা হইনি।



নতুন- পুরাতন পরিচালকদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করা হয়। নতুনদের সম্ভাবনা কেমন?

আমি সবাইকেই বলি। অসংখ্য কাজ করাটা মূল লক্ষ্য রেখো না। এখন যেটা হচ্ছে ভিউশিপের যুগ। সবাই ভিউটা কাভার করতে চায়। গত ঈদে ‘বুকের বা পাশে’ অনেক ভিউ পাচ্ছিল। এটা নিয়ে আমার ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। সত্যি বলতে ‘ভিউ’টা কখনো স্ট্যান্ডার্ড মান হতে পারে না। এর পেছনে ছোটা উচিত নয়। ভাল কাজ হলে এমনিতেই সেটা ভাইরাল হয়ে যাবে। কিন্তু অনেক সময় অনেক ভালো কাজ আড়ালে পড়ে যায়। কখনো প্রত্যাশা করো না ঢালাওভাবে প্রশংসা পাবে। যেমন এবার বান্নাহ পপুলার হওয়ার মতো কোন কনটেন্টই বানায়নি। আমাদের যেমন ইজি জোন থাকে। ও যে চেষ্টাটা শুরু করছে। হয়তো পাঁচ বছর পর এর ফিডব্যাক পাবে। আমি যখন এটা শুরু করলাম। সবাই বলতো কি করতেছো। আমি বলতাম দেখো পাঁচ বছর পর এই দিয়েই আমি অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবো। পরিচালকদের ক্ষেত্রেও সেটা বলবো। আজ যেটা থেকে প্রশংসা পেয়েছো বা জনপ্রিয়তা পেয়েছো। সেটা না করে কাল অন্য আরেকটা কিছু চেষ্টা করো।



বাংলা ইনসাইডার/ এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭