ইনসাইড বাংলাদেশ

‘আদালত বাইরে বসলে প্রধান বিচারপতির কনসালটেশন লাগবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/09/2018


Thumbnail

মাসদার হোসেন মামলার মাধ্যমে যখন সেপারেশন অফ জুডিশিয়ারি হয় এবং ২০০৭ সালে গেজেট হয় যে জুডিশিয়ারি হচ্ছে সেপারেট এখানে এক্সিকিউটিভদের কোন হাত থাকবে না। এর পর থেকে আদালতের যে কোনো বিষয়ের দায়িত্ব হলো প্রধান বিচারপতির। এমনকি আদালতের কোনো বিচারককে কোথায় নিয়োগ বা পোস্টিং হবে এগুলোও প্রধান বিচারপতির কনসালটেশন ছাড়া হবে না। আদালত যদি বাইরে কোথাও বসাতে হয়, সেই ক্ষেত্রেও প্রধান বিচাপতির কনসালটেশন লাগবে।

বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত বিষয় হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কারাগারে আদালত স্থাপন। সেইসঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ। দ্রুত তাঁর চিকিৎসা করা প্রয়োজন এবং তাঁরা বেগম জিয়ার চিকিৎসা ঢাকার একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে করানোর দাবি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিষয় দুটির আইনগত দিক কি তা জানতে বাংলা ইনসাইডার মুখোমুখি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের। তিনিই উল্লিখিত কথা বলেন। অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের সঙ্গে বাংলা ইনসাইডারের কথোপকথনের চুম্বক অংশটুকু তুলে ধরা হলো:

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদার জিয়ার বিচারকার্যের জন্য পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে। কারাগারে আদালত স্থাপন কতটা আইনসম্মত হয়েছে?

যেকোনোও বিচারের ক্ষেত্রে আদালত, মামলা, আসামি এবং বাদীপক্ষ এইসব বিষয় নিয়ে হয় বিচার। আদালত স্থাপনের বিষয়ে, কোথায় আদালত স্থাপন হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। সেই নির্ধারিত থাকার ক্ষমতাটা ‘সেকশন ৯(২) অব সিআর.পি.সি.’তে দেওয়া আছে সরকারকে। যেমন আমাদের ঢাকা জেলা জজকোর্ট এটাও একসময় একটা গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়েছে যে, এটা হলো জেলা জজ আদালত। এখানে অনেকগুলো বিল্ডিং আছে। ঐ বিল্ডিংয়ের মধ্যেই ইন্টারনালি কে কোথায় বসবে এগুলো ডিসট্রিক্ট জজ এবং মেট্রো সেশন জজ ঠিক করে দেন। এইটাই হলো নিয়ম। সিআর.পি.সি. সেকশন অব ৯(২) তে যেটা বলা আছে, এক সময় ঐ আদালত যদি ঐ-স্থানের পরিবর্তে মোহাম্মদপুরে স্থাপন করা হতো, সেখানে তখন ক্ষমতাটা সরকারের হাতেই ছিল। আইন-মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গেজেট করে করা হতো।

বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যে বলছে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করতে হবে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ না করে কারাগারে আদালত স্থাপন আইন সম্মত নয় এই বিষয়ে আইন কি বলে?

পূর্বের আইনের সঙ্গে নতুন করে আরেকটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে তা হলো মাসদার হোসেন মামলা। মাসদার হোসেন মামলার মাধ্যমে যখন সেপারেশন অফ জুডিশিয়ারি হয় এবং ২০০৭ সালে গেজেট হয় যে জুডিশিয়ারি হচ্ছে সেপারেট এখানে এক্সিকিউটিভদের কোনো হাত থাকবে না। এর পর থেকে আদালতের যেকোনো বিষয়ের দায়িত্ব হলো প্রধান বিচারপতির। এমনকি আদালতের কোনো বিচারককে কোথায় নিয়োগ বা পোস্টিং হবে এগুলোও প্রধান বিচারপতির কনসালটেশন ছাড়া হবে না। আদালত যদি বাইরে কোথাও বসাতে হয়, সেই ক্ষেত্রেও প্রধান বিচাপতির কনসালটেশন লাগবে। এর আগে পিরোজপুরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল, আমি আদালতে রিট পিটিশন করেছিলাম, আদালতের মাধ্যমে সেটা স্থগিত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সরকার এই গেজেট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মেহেন্দিগঞ্জেও আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও আদালত বরিশাল থেকে মেহেন্দিগঞ্জে স্থাপন করার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেখানেও আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি এবং কোর্ট বলে দিয়েছে না এটার কোন সুযোগ নাই, যেহেতু এটা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কনসালটেশন করে হয় নাই। আরও একটি মামলা আমি করেছি নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জের একটা কোর্ট আড়াই হাজারে বসানোর জন্য গেজেট করা হয়েছিল। এটাও স্থগিত আছে। এমন যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সবগুলোর বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং সবগুলোর কার্যক্রমই স্থগিত আছে। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরে, সেকশন ৯(২) এর যে এপ্লিকেশন, এই এপ্লিকেশনটা করতে হবে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সঙ্গে একত্র করে। অর্থাৎ এই দুটো বিষয় একত্রে বিশ্লেষণ করলে এটি ধারায় যে, আদালত যদি বাইরে কোথাও স্থাপন করতে হয় সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের কনসালটেশন প্রয়োজন হবে। কনসালটেশন ছাড়া যদি বাহিরে কোথাও আদালত স্থাপন করা হয়, তাহলে আইনগতভাবে এর কোনো ভিত্তি থাকে না। 

বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ হাসপাতালের কথা বলা হচ্ছে। একজন আসামির পছন্দের বিশেষ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে আইনে বিধান কি? 

জেল-কোডের বিধান অনুযায়ী দুটো বিষয় আছে এখানে, একটা হলো, সাজাপ্রাপ্ত আসামি আরেকটি হলো হাজতি। হাজতি হচ্ছে রেগুলার মামলায় যারা আছেন এখনো কোন সাজা হয় নাই। এই লোকগুলো যদি অসুস্থ হয়, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা জেলখানার ভিতরেই আছে। জেল-কোডে বলা আছে, জেলখানার ভিতরে যে ডাক্তার আছেন, তাঁরা যদি বলেন কোনো রোগের বিশেষ চিকিৎসা দরকার এবং জেলখানার ভিতরে সেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই, তাহলে জেলখানার ভিতরের ডাক্তারের সুপারিশক্রমে বাইরে চিকিৎসা জন্য পাঠানো হয়। যেখানে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য সেইখানে প্রিজন সেল থাকতে হবে। প্রিজন সেলে তাদেরকে পাঠালে এখানে তাদের চিকিৎসা হয় এবং আবার তাঁরা চিকিৎসা শেষে তাঁরা কারাগারে ফিরে আসে। প্রিজন সেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। এর বাইরেও এখন কিছু প্রাকটিস শুরু হয়েছে, যেমন আমরা দেখছি, ডায়াবেটিস হাসপাতালেও এখন চিকিৎসা হয়। তারপর স্কয়ার হাসপাতালেও চিকিৎসা হয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার জেল কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করতে হবে। যদি জেল কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করে যে কোন আসামির কোন রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই, বিদেশে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তখন আসামি বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করলে, আদালত তাঁকে চিকিৎসার জন্য জামিনও প্রদান করেন।

খালেদার জিয়ার বিষয়ে যে বিষয়টি হচ্ছে তা হলো: তাঁরা একটা বিশেষ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কথা বলছে। অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে রাজি হচ্ছেন না। সে যেহেতু একটা রাজনৈতিক দলের প্রধান, এর মধ্যে তাই কিছুটা রাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। সেই কারণেই সিদ্ধান্ত নিতেও কিছুটা দোদুল্যমানতা দেখা যাচ্ছে। তবে চিকিৎসা নেওয়াটা একটা মানুষের অধিকার। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রচলিত যে বিধি-বিধান আছে তার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। তারপরেও কেউ যদি অন্য কোথাও চিকিৎসা করাতে চায়, এবং সরকার যদি সেই অনুমতি দেয় তাতে সরকারের কোনো ক্ষতি নাই। কারণ এর আগে সরকার এ বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে। তবে যেখানেই অনুমতি দেওয়া চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হোক না কেন, সেই স্থানকে প্রিজন সেল ঘোষণা করতে হবে। প্রিজন সেল ঘোষণা ছাড়া এটা করা যাবে না। জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রস্তাব আসলে সরকার এটা করতে বাধ্য। 

বেগম খালেদার জিয়া যেহেতু একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান, তাঁর অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক আছে, তাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় তাঁরা শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়টা মাথায় রেখেই কথা বলছেন না, তাঁরা আবেগ থেকেও অনেক কথা বলছেন। চিকিৎসার বিষয়ে তাঁরা হয়ত আস্থা পাচ্ছে না। এটাও যে অমূলক তা নয়, এর আগেও আমরা দেখেছি মহিউদ্দিন খান আলমগিরের চিকিৎসার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের একটা বোর্ড করা হয়েছিল। তাঁরা সবাই ছিল ড্যাবের ডাক্তার। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাঁরা জানালো কোন সমস্যা নেই, কিন্তু তিনি অসুস্থ ছিলেন। কারণ আমাদের দেশের ডাক্তারোতো বিভক্ত। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব যে দলীয় ডাক্তারদের উপর পড়বে না, আমরা তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। এখন বিষয়টা যেহেতু আদালতে চলে এসেছে, তাই আদালত যে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে আমাদেরকে সেটিই অনুসরণ করতে হবে।


বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭