কালার ইনসাইড

‘ফিরছেন পপি’, এর মানে কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/09/2018


Thumbnail

ভীষণ ব্যস্ত নায়িকা পপি। আজ বিজ্ঞাপন না হয় কাল সিনেমার শুটিং। মাঝেমধ্যে নাটকেও দেখা যাচ্ছে। এতসবের মধ্যে তিনি কেমন আছেন? কেমন চলছে দিনকাল। সেসব নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের।

১০ সেপ্টেম্বর জন্মদিন, কিভাবে কাটিয়েছেন?

এ বছর ২১ টি কেক কাটতে হয়েছে। এত্ত এত্ত উপহার তো ছিলই। এই জন্মদিনে উপহার পেলাম একটি ছবিও। নাম ‘কাটপিছ’। পরিচালনায় বুলবুল বিশ্বাস।

ছবির পোস্টার প্রকাশের পরই তো সমলোচনা...

সেই শুরু থেকে আমার সিনেমাগুলো দেখলে বুঝবেন শোপিজ হিসেবে কখনো কাজ করিনি। আমার চরিত্রের গুরুত্ব বুঝে কাজ করেছি।  অনেক অনেক নারীপ্রধান সিনেমায় কাজ করেছি। বক্তব্যধর্মী সিনেমায় কাজ করেছি। দিনশেষে একটা সিনেমা শুধু বিনোদনই থেকে যায় না। আমি এমন সিনেমাতে কাজ করার চেষ্টা করি যেখানে সমাজের জন্য কোন বক্তব্য রাখতে পারি। সেই চিন্তা ধারা থেকে এই ছবিতে কাজ করা। অসম্ভব সুন্দর গল্পের একটি ছবি।  একটি নায়িকার জীবনী নিয়ে গল্প। যেখানে আসলে সত্যটা অনেকবেশি তুলে ধরা হয়েছে। সেন্টিমেন্টাল একটা ছবি। এবং কথা দিচ্ছি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতোই সিনেমা হবে। যে মানের গল্প। আমাদের মেকার যদি ঠিকমতো বানাতে পারে। আশা করা যায় বেশ ভালো কিছু হবে। ছবিটিা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাওয়ার ক্ষমতা আছে।

এই ছবির চরিত্র আপনার সঙ্গে কতটা মানানসই?

একজন শিল্পীতো নতুন নতুন চরিত্র চায়। তার পুরনো ইমেজটা ভাঙতে চায়। নিজেকে ভাঙ্গবে-গড়বে। এটাই তো একজন শিল্পীর ক্যারিশমা। ‘কুলি’ এক টাইপের ছবি। ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ আরেক টাইপের ছবি। আমার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ছবিগুলো। আমি মনে করি চরিত্রগুলো ভিন্ন ছিল বলেই আমি প্রশংসিত-পুরস্কিত ও দর্শকনন্দিত হতে পেরেছি। সেই জায়গা থেকে এই ছবিটাও আমাকে নতুন ডাইমেনশন দিবে। আর এই জায়গাটায় আমি সাকসেস কিন্তু। দর্শকই কিন্তু সেই এক ধারার রোমান্টিকে আমাকে দেখতে চায় না।

বর্তমানে ব্যস্ততা কী?

‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’,‘সাহসী যোদ্ধা’,‘বিয়ে হলো বাসর হলো না’,‘শর্টকাটে বড়লোক’ ও ‘মন খুঁজে বন্ধন’ ছবিগুলোর কাজ চলছে। ‘যুদ্ধশিশু’, ‘টার্ন’ এই দুটি ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা আছে। এছাড়া ‘জীবনযন্ত্রণা’,‘দুই ভাইয়ের যুদ্ধ’ ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আর বেশ কিছু বিজ্ঞাপন আসছে সামনে। সর্বশেষ স্কয়ারের একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করলাম রিয়াজের সঙ্গে। 

হাতে থাকা ছবিগুলো অবস্থানটা কতটা শক্ত করবে?

আমি কখনোই নিজেকে নাম্বারি নায়িকা ভাবিনি। আমার এক নাম্বার হতে হবে, কিংবা পাঁচ নাম্বারে দু:খ থাকবে। সবসময় নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি। এভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারলেই আমি খুশি। আমাকে পছন্দ করে, এমন অনেক দর্শক আছে। তারা পপির কাছ থেকে ভালো ভালো চরিত্র পেতে চায়। আমার নাম্বারিং নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। আমারও নেই।

কোনো স্বপ্নের চরিত্র আছে, যা করা হয়নি?

এখনো হাজারো চরিত্র করতে চাই। বিখ্যাত নারীদের বায়োপিক করতে চাই। শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের নারী চরিত্রগুলো করতে চাই। এতটা বছরে কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশের পরিচালকরা আমাকে আরও ভালোভাবে ব্যাবহার করতে পারতেন। আরও অনেক ভাল চরিত্র করার সামর্থ্য ছিল যা করা হয়নি।

এ প্রজন্মের নায়িকাদের কাজ কেমন দেখছেন?

ভালো করছে। সবার জন্যই শুভকামনা। তবে এক্ষেত্রে একটা দু:খ আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির মন মানষিকতা আর কবে পরিবর্তন হবে? পৃথিবীর কোথাও বলা হয় না উনি সিনিয়র আর্টিস্ট বা উনি জুনিয়র আর্টিষ্ট। আর্টিস্ট মানে আর্টিস্ট। এখানে কেন এই সিনিয়র জুনিয়র লাগানো হয়। সেটা যেমন লেখার ক্ষেত্রে আসে তেমনি বলার ক্ষেত্রে। হলিউডে কি বলা হয় সিনিয়র টমক্রুজ কিংবা সিনিয়র ব্রাডপিট? নাকি শহরুখ, সালমানদের বলা হয়? জুনিয়র আলিয়া ভাট বলা হয় কখনো? আমাদের এখানেই কেন বলা হয় এ সিনিয়র হয়ে গেছে। ও জুনিয়র! এটা যে বাংলাদেশি শিল্পীদের দেয়া হয়। এটা খুবই আপত্তিজনক এবং খুবই দু:খজনক। আমরা ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে আর কিছুই চাই না। শুধু ভালবাসা চাই। দর্শকের ভালবাসা চাই, যারা আমাদের প্রমোট করে তারা আমাদের ভালোভাবে উপস্থাপন করবেন। এটাই তো এখন আমাদের চাওয়া। এইযে যারা সিনিয়র- জুনিয়র বিভাজন করছেন। আমারতো মনে হয় তাদের শিল্পীদের প্রতি কোন ভালবাসা নেই।

‘নতুন মুখের সন্ধানে’ শুরু হলো। তা নিয়ে কি ভাবনা?

আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পীর অভাব নেই। প্রচুর শিল্পী আছে। তাদেরকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না। তাদেরকে ভালভাবে পর্দায় উপস্থাপন করতে পারছে না। আরও শিল্পীদিয়ে কী হবে? যত শিল্পী আসছে। দু-চারদিন কাজ করছে। ভালকাজ যখন হচ্ছে না, তারা হতাশ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ বিয়ে করছেন না হয় অন্যপেশায় চলে যাচ্ছেন। কেউবা ক্রাইম করছে, বিপথে যাচ্ছে। এতে ইন্ডাস্ট্রির কী বেনিফিট হচ্ছে?  হ্যা, এই কয়েকবছরের দেখায় মনে হচ্ছে নায়িকা হলে ভালোপাত্র মিলছে। এটাও নায়িকা হলে একটা বেনিফিট আছে।

ইন্ডাস্ট্রিতে অভাব কোন জায়গায়?

ইন্ডাস্ট্রির অভাব অন্য জায়গায়। আমাদের প্রথমেই ভালো মেকার দরকার। যাদের ভাবনা চিন্তা হবে উন্নত। বিশ্ব সিনেমার সঙ্গে যারা তাল মিলিয়ে সিনেমা নির্মাণ করার দক্ষতা রাখে। ফিল্মিক মেন্টালিটির প্রডিউসার দরকার। যে ছবিতে ঠাকা ঢালবে। তাঁর রুচি থাকতে হবে। যিনি কোন রকমের একটা ছবি বানানোর জন্যই আসবে না। এ জায়গায় নিজের অবস্থান গড়ার জন্য আসবে। তাহলেই তার একটা দায়বদ্ধতা হবে ভালো সিেেনমা বানানোর। ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার, ক্যামেরাম্যানসহ যারা ছবি বানাবেন। তাদেরকে আগে দরকার। তাদের উপর নির্ভর করে ইন্ডাস্ট্রি আসলে কোনদিকে যাবে। যারা পারফর্ম করবে তাদের চেয়ে পেছনের মানুষগুলোর অনেক বেশি দরকার। সিনেমাহল নেই। সেটা বানানোর উদ্যোগ নেই। আমরা নতুন মুখ নিচ্ছি! সেই পঞ্চাশ বছর আগের সিনেমাহলেও এখনও অনেক ছবি চলে। সরকারের উদ্যোগি হতে হবে। সরকার আমাদের অভিবাবক। তাদের সেভাবেই এগিয়ে আসতে হবে। অভিবাবক যেমন সন্তানের হাতে টাকা না দিয়ে নিজেই তার ক্যারিয়ার ঠিক করে দেয়। তেমনটা প্রয়োজন।

কথায় কথায় সেই পুরনো প্রশ্ন নতুন করে করা হলো। বিয়ে নিয়ে কী ভাবছেন?

সঠিক মানুষটার জন্য অপেক্ষা করছি। সেই সঠিক মানুষটা যখন আমার জীবনে আসবে। তখন আমি বিয়ে করবো। বিয়ে করার জন্যতো ছেলে পাওয়াই যায়। কিন্তু লম্বা জার্নির জন্য একজন প্রপার মানুষ দরকার। আজ বিয়ে করলাম। দুদিন পর আবার ডিভোর্স হলো। এগুলো আমাকে দিয়ে হবে না।

কোন আক্ষেপ?

একটা আপত্তি আছে। প্রতি বছর নিউজ দেখি। পপি ফিরছেন। এর মানে কী? আমি কি প্রতিবছর অবসরে যাই? সেটা কী ঘোষণা দিয়ে গিয়েছি? আমার প্রতিবছর ছবির শুটিং থাকে। কম বেশি তো থাকতেই পারে। একজন শিল্পী তো গণহারে কাজ করবে না। এটা অনুরোধ করছি। পপি ফিরছেন কথাটা সত্য নয়। আমি যদি ঘোষণা দিয়ে অবসরে যাই। সেখান থেকে যদি ফিরি। তাহলে যেন বলে। আর শিল্পীর তো কোন অবসর নেই।  ৭০-৮০ বছরেও তার মনমতো একটা চরিত্র পেলে অভিনয় করতে পারে। সুতরাং সবার এমন সস্তা হেডলাইন না দেয়াই ভালো। খুশি থাকবো।

অবসরটা কীভাবে কাটানো হয়?

শুটিং ছাড়া পরিবারকেই পুরোটা সময় দেয়া হয়। বই পড়া, বিভিন্ন দেশের সিনেমা দেখা- এটা বরাবর নেশার মতো নিয়মিত দেখা হয়। চেষ্টা করি পরিচিতজনদের প্রগ্রামগুলোতে উপস্থিত থাকার। অনেক সময় অনেকে দাওয়াত দেয়। না গেলে মন খারাপ করে। আমার চেষ্টাটা থাকে সবার দাওয়াত রক্ষা করার। আর একদমই যদি সম্ভব না হয়। আগেই বলে দেই, বা যোগাযোগ করে সেটা জানাই।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭