ইনসাইড পলিটিক্স

‘নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করুক’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/09/2018


Thumbnail

‘শুধু ছাত্রলীগই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই আশাবাদী ডাকসু নির্বাচন এবার আলোর মুখ দেখবে। ছাত্রলীগ সব সময় এটা চায় নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করুক, তাদের অধিকারের কথা বলুক, তাদের নৈতিক দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলুক, পাশে দাঁড়াক।’

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের মার্চে ডাকসু নির্বাচন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান সময়ের দেশের অন্যতম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ছাত্রলীগের কি ভাবনা ও উদ্যোগ সেই বিষয়ে জানতে কথা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে। বাংলা ইনসাইডারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত কথাগুলো তিনিই বলেন। নিম্নে বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো: 

বাংলা ইনসাইডার : ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া কি?

গোলাম রাব্বানী : শুধু ছাত্রলীগই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই আশাবাদী ডাকসু নির্বাচন এবার আলোর মুখ দেখবে। ছাত্রলীগ সব সময় এটা চায় নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করুক, তাদের অধিকারের কথা বলুক, তাদের নৈতিক দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলুক, পাশে দাঁড়াক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সভায় অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল?

এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে তেরটি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি উপস্থিত ছিল এবং আমরা অনেক শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে কথা বলেছি, মতামত দিয়েছি। ঐ সভায় সকল আবাসিক হলের প্রভোস্টগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার, প্রোভিসি ম্যাম উপস্থিত ছিলেন। চার ঘণ্টা ব্যাপী এ মিটিং-এর জিস্ট ছিল সবাই ডাকসু নির্বাচন চায় এবং শিক্ষার্থীর দাবি পূরণে কাজ করতে চায়।

ছাত্রদল ঢাবি ক্যাম্পাসে বর্তমানে নিষ্ক্রিয়, তারা কেন ক্রিয়াশীল দলের অন্তর্গত?  

ছাত্রদল নিস্ক্রিয় কিভাবে? তারা তো জ্বালাও-পোড়াও এ সক্রিয়। আর তাদের কেন ক্রিয়াশীল দলের মধ্যে রাখা হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। আমাদেরকে চিঠি দেয়া হয়েছে, তারাও চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রিত। ডাকসু যেহেতু একটি বড় প্লাটফর্ম সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো মনে করেছে, ছাত্রদলকে যদি বাদ দেয়া হয় তবে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটা অবশ্য আমার ধারণা। আমি এর নীতি নির্ধারক নই। আমি একজন ছাত্র প্রতিনিধি, এ বিষয়ে ভিসি স্যার এবং প্রোক্টর স্যার ভালো বলতে পারবেন।

ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ফিরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপুর্ণ পরিবেশ কি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে, এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?  

এ বিষয়ে গত মিটিং-এ কথা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহত করা হয়েছে। ছাত্রদল যেন তাদের অতীত কুকর্ম মানে জ্বালাও-পোড়াও এর রাজনীতি চর্চা কিংবা সরকার বিরোধী গুজব ও অপপ্রচার করতে না পারে সে বিষয়ে ছাত্রলীগ তৎপর রয়েছে। সর্বশেষ দু’টি আন্দোলনে তাদের কেন্দ্রীয় যেভাবে গুজব ও অপপ্রচার চালিয়েছে তাতে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও নেই। তাদের এ সাম্প্রতিক আচরণ থেকে এটা প্রতীয়মান যে তারা তাদের সহিংসটার রাজনীতি থেকে বের হতে পারবে না। তবে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশে আছে। কেননা, ছাত্রলীগ সর্বদা মানুষের অধিকারের কথা বলে, গণমানুষের নিরাপত্তার কথা বলে।

ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতাই তো বয়স্ক, তারা কি ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে?

ছাত্রদলের অধিকাংশই অনিয়মিত ও অছাত্র। নিয়মিত ছাত্র ছাড়া কেউই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে না। শিবির ও ছাত্রদল এখন একে অন্যের পরিপূরক। তাদের রাজনৈতিক আচার-আচরণও এখন এক। আমরা মিটিং-এ তাদের সামনেই তাদের জ্বালাও-পোড়াও এর রাজনীতির কথা উল্লেখ করেছি। এমন রাজনৈতিক চর্চা ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানানো হয়েছে তাদের। ছাত্রদল যদি শিবিরকে পরিত্যাগ করে এবং তাদের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না নিশ্চয়তা দিয়ে প্রমাণ প্রমাণ করতে পারে তবে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। 

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি কি?

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে ডাকসুর ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের একাধিক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর ভিপি-জিএস ছিলেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। আমরা আশাবাদী ছাত্রলীগ মাঠে কাজ করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ভালবেসে তাদের মন জয় করে নির্বাচনে অংশ নিবে।

ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরে কেন?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই সবগুলো হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্বাচনের ব্যবস্থা এতো দ্রুত করা সম্ভব না। এছাড়াও ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রক্রিয়া শেষ হতেও সময় লাগবে। সেইসঙ্গে, কারা ক্যাম্পাসের নিয়মিত ছাত্র, কারা প্রার্থী হতে পারবেন, এগুলো যাচাই-বাছাইের কাজ কোন ভাবেই এতো দ্রুত সম্ভব হতো না। ইতিপূর্বে আমাদের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে নব্বই-এর নির্বাচনকে ঘিরে। ভোটার তালিকা করতেই দুই বছর সময় লেগেছে। আমরা এ তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা চাই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকার হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন হোক এবং মার্চের মাঝামাঝি ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্যই জাতীয় নির্বাচনের পর ডাকসু নির্বাচন। এটা আমাদের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি পারে তবে আমরা তাতে ওয়েলকাম জানাবো।

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্রলীগের প্রত্যাশা কি?

আমাদের শুধু একটাই প্রত্যাশা, শুধুমাত্র নিয়মিত ছাত্ররাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যারা ইভিনিং-এর ছাত্র, পাশাপাশি যারা এখানে বিভিন্ন কোর্স করছে তারা নয় বরং যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করেছে শুধুমাত্র তারাই যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচনে আসুক ছাত্রলীগের চাওয়া এটাই। আমাদের নিয়মিত ছাত্রদেরই আমরা নেতৃত্বে দেখতে চাই। এর আগে মাহমুদুর রহমান মান্না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে ডাকসুর জিএস হয়েছিলেন। আমরা এর পুনরাবিত্তি চাইনা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি কি?

২৯ তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে ছাত্রলীগের যে নতুন কমিটি এসেছে ইতিমধ্যেই তারা তাদের পজিটিভ কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক ধারার বার্তা সারাদেশে পৌছিয়ে দিয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ছায়াতলে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বর্তমানের ছাত্রলীগ ইতিবাচক ধারার। এখন আমাদের সকল পদক্ষেপই নির্বাচনমুখী। আমাদের প্রথম পদক্ষেপই ছিল ছাত্রলীগের ইতিবাচক ইমেজ সাধারণ মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা। আর এ বিষয়ে আমারা অনেকটাই সফল। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো এবং  ছাত্রলীগ এখন ইতিবাচক ধারার রাজনীতি করতে শুরু করেছে তা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও গণমানুষের পাশে আছি এ বার্তা অনেকের মাঝে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়নের ধারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, এই বার্তা গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রচার-প্রচারণা অতীতেও ছিল, আগামীতেও থাকবে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল পদক্ষেপই হবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে।


বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭