কালার ইনসাইড

কীভাবে ছবি যাবে অস্কারে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/09/2018


Thumbnail

নিয়ম রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেকোনো দেশ থেকে প্রতিবছর কেবল একটি ছবিই পাঠানো যাবে অস্কার মনোনয়নের জন্য। কিন্তু একটি দেশ থেকে কোন ছবিকে পাঠানো হবে? এ প্রশ্নটি মাথায় রেখেই পৃথিবীর অনেক দেশে সিলেকশন কমিটির উদ্ভব।

যুক্তরাজ্যে এ কাজটি করে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ দায়িত্ব পালন করে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। আবার ব্রাজিলের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা অন্য রকম। অস্কারে ছবি পাঠানো-সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেখভাল করে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশেও এ সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে- ‘অস্কার বাংলাদেশ কমিটি’।

বাংলাদেশের অস্কার ইতিহাস:

২০০২ সাল থেকে অস্কারে বাংলাদেশের ছবি পাঠানো হচ্ছে- ১৬ বছরে মোট ১৩টি। ‘ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান ফিল্ম’ বিদেশি ভাষার ছবির ক্ষেত্রে এ নীতিই মেনে চলে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স। কিন্তু বাংলাদেশে মানা হয় ‘ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান প্রডাকশন হাউস’ ফর্মূলা। একটু খুলে বললে ২০০২ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। প্রযোজনা করেন ক্যাথরিন মাসুদ। এ ধারাবাহিকতায় মাটির ময়নার পর একমাত্র মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ ছবিটি ৮৬তম অস্কার আসরে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে। যদিও এর টিভিস্বত্ব চ্যানেল আইয়ের। এর বাইরে  প্রতি বছরই অস্কার আসরে অংশগ্রহণের সব কৃতিত্ব গেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ঘরে। এসব ছবিই বাছাই করেছে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি কর্তৃক মনোনীত ‘অস্কার বাংলাদেশ কমিটি’। তার মানে এর বাইরে আর কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমন দক্ষতা দেখাতে পারেনি? যতগুলো ছবি অস্কারে গেছে, সেসবের বেশির ভাগই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়নি। এ নিয়েও অনেকের তর্ক।

এ বছর অস্কারে যাচ্ছে:

বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ধারাবাহিকভাবে সাতদিন প্রদর্শিত ইংরেজি সাবটাইটেলসহ যেকোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। শোনা যাচ্ছে, এ বছরও ইমপ্রেস প্রযোজিত ছবিই অংশগ্রহণ করবে। যথারীতি সে ছবিটির নাম ‘কমলা রকেট’। অস্কারের জন্য পাঠানো অন্য ছবিটি ‘ডুব’, তার সম্ভাবনা কম। সিয়াটলসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত ছবি ‘মাটির প্রজার দেশে’ বাংলাদেশ থেকে যাবে বলে কথা উঠছিল। কিন্তু নির্মাতা শেষমুহূর্তে তা প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ, ছবি জমা দিতে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন, তার ভাষ্য, সরকারীভাবে গেলে সেখানে আমি কেন টাকা দিবো।

সমলোচনা যেখানে:

প্রায় একই কমিটি ২০০২ সাল থেকে কাজ করছে। সমালোচকদের অভিযোগ, তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ ছবি বাদ পড়েছে। ফিসফিসানিটা ক্রমেই বাড়ছে। ভারতে তো অস্কার সিলেকশন কমিটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবারই প্রকাশ্যে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন কয়েকজন নির্মাতা-প্রযোজক! প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের অস্কার কমিটি ছবি বাছাইকরণ প্রক্রিয়ায় কতখানি স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে? হাবিবুর রহমান খান, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলচ্চিত্রের প্রযোজক। তিনি শুরু থেকেই অস্কার কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিতর্কের সুযোগ নেই। প্রতিবছর অস্কার কমিটির কাছে আমাদের কমিটির তালিকা পাঠাতে হয়। ওরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা কাজটা করি। বিতর্কের বিষয়ে বলব, বিতর্ক করার জন্য কিছু লোক তো থাকেই। কেউ বিতর্ক করতে চাইলে কিছু করতে পারব আমরা? একটা কথা বলি, এখনকার অনেক স্থপতি আছেন যাঁরা তাজমহলেরও ভুল ধরেন! কীই-বা করার আছে। প্রতিবছর একটা-দুটা-তিনটা করে ছবি জমা পড়ে। অস্কারের আবার বিভিন্ন নিয়মনীতি আছে—কোনটা দেওয়া যাবে, কোনটা যাবে না। সব যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিই। এটা সবাই জানেও না। বুঝবেনও না।’

৯ সদস্যের কমিটি। কারা থাকেন এতে?

চেয়ারম্যান হিসেবে এ বছরও আছেন হাবিবুর রহমান খান। আরো আছেন বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি আব্দুস সেলিম, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ বাচ্চু, ফিল্ম এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মূসা দেবু, নির্মাতা শামীমা আক্তার ও রোকেয়া প্রাচী।

মোরশেদুল ইসলামের সমলোচনা:

শুধু তা-ই নয়, অস্কারে প্রতি বছর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবি মনোনীত হওয়ার যে রেওয়াজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাকে কেউ কেউ ‘সংঘবদ্ধ অপপ্রয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির নামে যে সংগঠনটি অস্কারে বাংলাদেশ থেকে ছবি নির্বাচনে ভূমিকা রাখে, সেটির কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মোরশেদুল ইসলামের মতো নির্মাতারা। মোরশেদুল ইসলাম বলছেন, ‘বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি অস্তিত্বহীন ও অথর্ব একটি প্রতিষ্ঠান। কারণ এ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ফিল্ম সোসাইটিগুলোর একটিও সক্রিয় নয়। প্রতিষ্ঠানটি সারা বছর চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকাণ্ড করে না। অথচ বছর শেষে শুধু অস্কার নিয়ে মাতামাতি করে। অস্কারে ছবি পাঠানোর বিষয়টিকে তারা কুক্ষিগত ও দখল করে নিয়েছে।’

এখন পর্যন্ত যেসব ছবি বাংলাদেশ থেকে অস্কারে গিয়েছে:

মাটির ময়না (২০০২)- পরিচালক: তারেক মাসুদ

শ্যামল ছায়া (২০০৫)- পরিচালক: হুমায়ূন আহমেদ

নিরন্তর (২০০৬)- পরিচালক:  আবু সাইয়ীদ

স্বপ্নডানায় (২০০৭)- পরিচালক: গোলাম রাব্বানী বিপ্লব

আহা! (২০০৮)- পরিচালক: এনামুল করিম নির্ঝর

বৃত্তের বাইরে (২০০৯)- পরিচালক: গোলাম রাব্বানী বিপ্লব

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০১০)- পরিচালক: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২)- পরিচালক: হুমায়ূন আহমেদ

টেলিভিশন (২০১৩)- পরিচালক: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

জোনাকির আলো (২০১৪)- পরিচালক : খালিদ মাহমুদ মিঠু

জালালের গল্প (২০১৫)- পরিচালক: আবু শাহেদ ইমন

অজ্ঞাতনামা (২০১৬)-পরিচালক: তৌকীর আহমেদ

খাঁচা (২০১৭)- পরিচালক: আকরাম খান


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭