ইনসাইড পলিটিক্স

পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে শঙ্কা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/09/2018


Thumbnail

নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি প্রচেষ্টা ছিল লক্ষণীয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে আনার প্রচেষ্টা ছিল সবার মধ্যে। দুই নেত্রীকে বৈঠকের টেবিলে একসঙ্গে বসানোর চেষ্টা করেছেন অনেকেই। তৎকালীন প্রভাবশালী সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ দুই নেত্রীর বৈঠক আয়োজনে অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর মতো অনেক উদ্যোক্তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার পরও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মধ্যে মাত্র তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়কার নেতৃবৃন্দরা বলেন, দুই নেত্রীই একসঙ্গে বৈঠকে অনাগ্রহী ছিলেন। এরপরও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা দুই নেত্রীর মধ্যে তিনটি বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠকটি হয় রাজধানীর মহাখালীতে। দুই নেত্রীর মধ্যেকার দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় রাজধানীর গুলশানে। আর সংসদীয় গণতন্ত্র সংক্রান্ত সংশোধনী পাশ হওয়ার সময় তৃতীয় ও শেষ বৈঠক হয় দুই নেত্রীর।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়ই দুই নেত্রীর একসঙ্গে বসার অনাগ্রহের কথা রাজনীতির অঙ্গনের মানুষরা তো জানেই, সাধারণ মানুষেরও অজানা ছিল না। ওই সময় অনেক কথাই প্রচলিত হয়, ‘দুজই নেত্রী তো, নারীতে নারীতে বৈঠক কি আর হয়, নারীরা এক হতে পারে না, নারীদের মধ্যে ঝগড়া বেশি- এমন অনেক নারীবিদ্বেষী মন্তব্য প্রায়শই শোনা যেত।

বর্তমান পরিবর্তিত সমাজ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পুরুষ রাজনীতিবিদদের মধ্যেও বিরোধ কিন্তু কম না। অনেক প্রবীণ পুরুষ রাজনীতিবিদের মধ্যে বিরোধ আজ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বর্তমান সময়ের আলোচিত দুই ব্যক্তিত্ব ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীর দিকেই আঙ্গুল তাক করেন অনেকে। বিশ্লেষকরা বলেন, নারীদের মধ্যেকার বিরোধের চেয়েও প্রকট পুরুষের। নারীদের বিরোধ বোঝা সহজ। মুখের ওপর না বলে দিয়ে বিরোধের প্রকাশ করে দেয়। কিন্তু পুরুষরা মুখে বলে এক আর করে আরেক। ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যেকার বিরোধেও যে এমনটাই দেখা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি খালেদা জিয়ার স্বামী সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। আর বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দিয়ে গঠিত দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আদর্শগত দিক থেকে ফারাক বিস্তর। আওয়ামী লীগ তাই শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার-দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট। এরপরও শুধু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীর মধ্যে এমন কোনো বিরোধ নেই। তারপরও কেন একজন আরেক জনের কাছে এতটা অসহ্যের। বিশ্লেষকদের মতে, দুই প্রবীণের মধ্যেকার বিরোধের পুরোটাই কে বড়, কে নেতা, কে ঐক্যের নেতৃত্ব দেবে তাই নিয়ে।

গত বছরের শেষদিকে দেশব্যাপী রোল ফেলে দিয়ে বি. চৌধুরী গঠন করলেন যুক্তফ্রন্টে। যেখানে যাওয়ার কথা ছিল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দীর্ঘ আট মাস সেই জোটে ‘তিনি নেই’ বলেই জানিয়ে আসছিলেন থাকেন ড. কামাল। অবশেষে দেশে নির্বাচনের রব উঠতেই ড. কামাল হোসেন আবার বি. চৌধুরীর সঙ্গে বসে ঘোষণা দিলেন রাজনৈতিক ঐক্যের। কিন্তু এ যেন নতুন করে দুজনের আবার বিরোধের শুরু। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের শুরুতে বি. চৌধুরীর বাসায় হাজির হন ড. কামাল। ওই সময় বলেন, তিনি সাদা কাগজে লিখে দেন আমি স্বাক্ষর করতেও প্রস্তুত। কিন্তু এরপর আবার অনেক দিন নিরুদ্দেশ ড. কামাল হোসেন। বোঝাই যাচ্ছিল অন্যের নেতৃত্ব যেতে ড. কামাল শুচিবায়ু। এরপর হঠাৎ করেই কামাল হোসেনের বাড়িতে হাজির বি. চৌধুরী। ড. কামালকে বললেন, আপনিই ঐক্যের নেতা। অমনি উদ্যোগী হয়ে পড়লেন ড. কামাল। কিছুদিন না যেতে যেতেই নেতৃত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলেন বি. চৌধুরীও। জোটে দল ভেড়ানোর জন্য নানা শর্ত দিলেন। বি. চৌধুরীর এমন শর্ত প্রদানকে যেন নিজের নেতৃত্বের ওপর খবরদারি হিসেবেই নিলেন ড. কামাল। মুখ ভার তাঁর। ড. কামালের এমন মনোভাবে হতাশ হলেন বি. চৌধুরী। তিনি যেন হঠাৎ করেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। সবখানেই ড. কামাল আর যুক্তফ্রন্টের অন্যান্যরা উপস্থিত। কোথাও নেই যুক্তফ্রন্টের মূল নেতা বি. চৌধুরী। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হলো যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায়। অথচ বি. চৌধুরী অর্ধেক রাস্তা এসেও সেদিন ফিরে গেলেন। যোগ দিলেন না সংবাদ সম্মেলনে। আবার ড. কামালের বাসায় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠক হলো কিন্তু অনুপস্থিত বি. চৌধুরী। বিএনপি ঐক্য প্রক্রিয়া যোগ দেওয়ার কথা জানাল। তখনও নেই ঐক্যের অন্যতম নেতা বি. চৌধুরী। বিএনপিকে নিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চে জনসভা আয়োজন হল। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নাগরিক সভায় বিএনপি ও যুক্তফ্রন্ট নেতাদের অনুরোধে যেন যেন ঢেঁকি গিললেন বি. চৌধুরী। অবশ্য সভা শুরুতে দেড় ঘণ্টা পর সেখানে যান বি. চৌধুরী। এর পরপরই জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্বের সুতোটা আবার যেন বি. চৌধুরীর দিকে যেতে থাকে। বি. চৌধুরীও একের পর এক শর্ত দিয়েছেন বিএনপির ঐক্যে যোগদান নিয়ে। বি. চৌধুরীর এমন হস্তক্ষেপকে যেন খবরদারি হিসেবেই নিলেন ড. কামাল। মঙ্গলবার বিকেলে ড. কামালের বাড়িতে ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ড. কামালের বাসায় গিয়ে বৈঠকে অস্বীকৃতি জানান বি. চৌধুরী। পরে ওই বৈঠক আর হয়নি। অবশ্য ওই রাতেই বৈঠক বসে বি. চৌধুরীর বাড়িতে। তখন অসুস্থতার কথা বলে সেই বৈঠকে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন ড. কামাল। দুই নেতার দ্বৈরথের সর্বশেষ অবস্থা হলো বি. চৌধুরী দেশে। কিন্তু অসুস্থতার জন্য ড. কামাল চলে গেছেন সিঙ্গাপুর।

ঐক্য নিয়ে বিরোধের দুই নেতার বিরোধের বিষয়টি কৌতুহলউদ্দীপক বলেই মানছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য তাঁদের মধ্যে মিলও যে অনেক। দুজনই মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়া রাজনীতিবিদ। আর মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়ে দুজনই রাজনীতি অব্যাহত রাখলেও অর্জনের খাতা এখনো শূন্য।

এতদিন যাঁরা বলতেন দুই নেত্রীর জন্য রাজনীতিতে যত সমস্যা, ড. কামাল-বি. চৌধুরী নিয়ে এখন তারা নতুন করে শঙ্কা দেখতেই পারেন। কারণ দুই পুরুষের নেতৃত্ব যে কত ভয়াবহ হতে পারে ড. কামাল-বি. চৌধুরীর এরই মধ্যে দেশবাসীকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭