ইনসাইড পলিটিক্স

মান্নার মূর্খতা: বাংলাদেশ-পাকিস্তান তুলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2018


Thumbnail

আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই দায়িত্ব-জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে এসে অশিক্ষিত-মূর্খদের মতো তথ্য-উপাত্ত প্রদাণ করেন তাঁরা। এর সর্বশেষ উদাহরণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সম্প্রতি নাগরিক টেলিভিশনের টকশোতে পাকিস্তান সম্বন্ধে মান্না কিছু কথাবার্তা বলেছেন যা হয় তাঁর মূর্খতা প্রসূত অথবা তিনি নব্য পাকিস্তান প্রেমী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তবে যে কারণেই তিনি এসব কথা বলে থাকুন না কেন, পাকিস্তানের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর দেওয়া তথ্যগুলো যে নির্জলা মিথ্যা তা সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই প্রমাণিত হয়।

মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি নাগরিক টেলিভিশনের টকশোতে এসে পাকিস্তান বন্দনায় মুখর হয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মান্নার এহেন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। কারণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচক বলছে, অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

নাগরিক টেলিভিশনের টকশোতে বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে বহুল ব্যবহৃত বাক্যাংশকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে মান্না বলেন, ‘বাংলাদেশ কোন দেশের রোল মডেল বলেন তো? পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। যাকে আমরা সবচাইতে সমালোচনা করি।’মান্নার এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে সঞ্চালক তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন ‘পাকিস্তানের অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো?’উত্তরে মান্না বলেন, ‘হ্যাঁ, ডেফিনেটলি। তাদের গ্রোথ ইয়ে টিয়ে সব দিক থেকে অনেক বেশি স্টেবল এবং তাদের ইনস্টিটিটিউশনগুলো অনেক বেশি স্টেবল।’

বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছর পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে ওই ২৪ বছরে পূর্ব পাকিস্তানে বলতে গেলে কোনো রকম উন্নয়নই হয়নি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের মোট জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ থাকত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০পর্যন্ত ২০ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাক্কালিন ব্যয় ছিল ১১,৩৩৪ কোটি রূপি আর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্কালিন ব্যয় ছিল ৪,৫৯৩ কোটি রূপি। তাছাড়া ১৯৪৭- ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৪.৭%। কিন্তু রপ্তানি আয় বেশি করলেও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমদানি ব্যয় বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩১.১%। রপ্তানি উদ্বৃত্ত অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের আমদানির জন্য ব্যয় করা হতো। আর জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানের তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয় যার প্রত্যেকটিতেই পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল দ্বিগুণ।

রাজনৈতিক ভাবেও পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করেছে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। পূর্ব পাকিস্তানি নেতাদের সরকার গঠনের সুযোগ না দিতে অন্যায়ভাবে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন বাতিল করে সরকারকে উচ্ছেদ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা থাকলেও পশ্চিমা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে তা বানচাল হয়ে যায়।

এছাড়া প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানিদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের মন্ত্রণালয়গুলোতে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ৯৫৪ জনের মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ১১৯ জন আর ১৯৬২ সালে সিভিল সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল মাত্র ২০.৮%। বিদেশে ৬৯ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৬০ জনই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের।  এছাড়া ১৯৫৫ সালের এক হিসেবে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর মোট ২২১১ জন কর্মকর্তার মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ৮২ জন। ১৯৬৬ সালে সামরিক বাহিনীর ১৭ জন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ১ জন ছিল বাঙালি। এ সময় সামরিক অফিসারদের মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র ৫%।

শিক্ষা ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সঙ্গে বৈষম্য করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা। পাকিস্তান শাসনামলের ১৯৫৫-১৯৬৭ সালের মধ্যে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০৮৪ মিলিয়ন রুপি আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছিল ৭৯৭ মিলিয়ন রুপি।

সেই শোষণ-নিপীড়নের নাগপাশ ছিঁড়ে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে আবার শুরু হয় বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা। অবশেষে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বদলে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। গত ১০ বছরে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে যোজন যোজন ব্যবধানে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

মানব উন্নয়ন সূচক

ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন- ২০১৮ অনুযায়ী মানব উন্নয়ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। চলতি বছর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে ১৩৬তম যেখানে ১৫০ এ অবস্থান করছে পাকিস্তান।

শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। গেছে।বাংলাদেশের মানুষের গড়ে গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর আর পাকিস্তানে ৬৬ দশমিক ৬ বছর। এছাড়া মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, স্কুলে পাঠগ্রহণসহ প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে। নবজাতক-মৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এক হাজার জীবিত শিশু জন্মগ্রহণ করলে বাংলাদেশে ২৮ দশমিক ২ জন নবজাতক মারা যায়। পাকিস্তানে এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ, ৬৪ দশমিক ২। একইভাবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভালো করেছে। বাংলাদেশে ১ হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৩৪ দশমিক ২ জন মারা যায়। পাকিস্তানে তা দ্বিগুণের বেশি, ৭৮ দশমিক ৮ জন।

শিক্ষাক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার এখন ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ আর পাকিস্তানে ৫৭ শতাংশ।

ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন- ২০১৮ অনুযায়ী, নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়ে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বেশি।

বৈশ্বিক মানবসম্পদ সূচক বা হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স

বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা বৈশ্বিক মানবসম্পদ সূচক বা হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্সেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের ১৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর জরিপ করে তৈরি করা এই বৈশ্বিক মানবসম্পদ সূচকে দেশগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বেঁচে থাকার অন্যান্য অনুষঙ্গগুলো বিবেচনা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া একজন শিশু বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীল হওয়ার সম্ভাবনা ৪৮ শতাংশ যা পাকিস্তানে ৩৯ শতাংশ। বাংলাদেশে ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জন শিশুই ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে চার বছর বয়সী শিশু স্কুল শুরু করলে ১৮ বছর হওয়ার আগে স্কুলজীবনের ১১ বছর শেষ করতে পারে। পাকিস্তানে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ৯৩ শতাংশ শিশু। আর পাকিস্তানে চার বছর বয়সী শিশু স্কুল শুরু করলে ১৮ বছর হওয়ার আগে শেষ করতে পারে স্কুল জীবনের ৮ দশমিক ৮ বছর।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচক

ক্ষুধা নির্মূলের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের সাফল্যই বেশি। চলতি বছরের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (জিএইচআই) ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬ তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে ২০ ধাপ পিছিয়ে থেকে ১০৬ এ। সূচক অনুযায়ী, খাদ্য সংকটে ভারত এবং পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। অপুষ্টি, খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা, কৃশকায় বা শীর্ণকায় শিশু ও শিশুমৃত্যুর হারের ওপর ভিত্তি করে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানী ভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড যৌথভাবে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে থাকে।

উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের সূচক

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রকাশিত ‘সুষম প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির ৭৯টি দেশের তালিকায় পাকিস্তান ৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে ৩৮তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জীবনযাত্রার মান, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ও ঋণ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক এ সূচক তৈরি করেছে ডব্লিউইএফ।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকেও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ১২৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪১।

ব্র্যান্ড ভ্যালু

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফিন্যান্স’ প্রকাশিত ‘নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৭’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দেখা যায় ব্র্যান্ড ভ্যালুতে পাকিস্তানের চেয়ে ৬ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্বের কোনো দেশকে মূল্যায়নের অন্যতম মাপকাঠি ব্র্যান্ড ভ্যালু। সেই মাপকাঠিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম আর পাকিস্তানের ৫০। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনিয়োগ, সমাজ এবং পণ্য ও সেবা এই তিনটি বিষয়কে ২৬টি মানদণ্ডে বিবেচনা করে একটি দেশের ব্র্যান্ড যাচাই করা হয়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ

উদীয়মান অর্থনীতির দেশ

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুতিমূলক উন্নয়ন সূচকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪ আর পাকিস্তানের অবস্থান ৫২। সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৩ দশমিক ৯৮ যেখানে পাকিস্তানের স্কোর অনেকটাই কম, ৩ দশমিক ৫৫। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত বার্ষিক এই সূচক তৈরিতে ১০৩টি দেশের অর্থনীতির তিনটি পৃথক স্তম্ভ বিবেচনায় আনা হয়েছে৷ সেগুলো হলো, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সমতা বিধান৷

জিডিপি

গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক। জিডিপিতেও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানি ওয়েবসাইট দ্যা কান্ট্রি ইকোনমির তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে পাকিস্তানের জিডিপির হার ছিল ৫.৭ শতাংশ আর বাংলাদেশে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জিডিপির পরিমাণ ছিল ৭.৪ শতাংশ।

জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট

জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সেও (জিডিআই) পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। জিডিআই এ বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৮৮১। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের স্কোর শূন্য দশমিক ৭৫০।

কর্মসংস্থান

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। পাকিস্তানে এই হার ৫২ শতাংশ।

নিরাপত্তা

বাংলাদেশে হত্যার শিকার হয় শতকরা ২ দশমিক ৫ জন। আর পাকিস্তানে এই হার প্রায় দ্বিগুণ, ৪ দশমিক ৪ জন।

পরিবেশের ভারসাম্য

বাংলাদেশ মাথাপিছু ০.৫ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর পাকিস্তান নির্গমন করে থাকে ০.৯ টন কার্বনডাই অক্সাইড। বায়ু দূষণের প্রভাবে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৪৯ জন যা পাকিস্তানে যা ১৭৩ দশমিক ৬ জন। দূষিত পানি ও পয়নিষ্কাশন অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে মৃত্যু হয় লাখে ১৮ দশমিক ৬ জনের। এই হার পাকিস্তানে ১৯ দশমিক ৬ জনের।

শুধু তাই নয় ক্রিকেট, ফুটবল অর্থাৎ খেলার মাঠেও পাকিস্তানকে নিয়মিত ধরাশায়ী করছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত আর পাকিস্তান সারা বিশ্বে পরিচিত ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে। খোদ পাকিস্তানি টিভিতে সে দেশীয় বুদ্ধিজীবীরা হাহাকার করে বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের মতো বানিয়ে দাও।’ অথচ মাহমুদুর রহমান মান্না টিভি চ্যানেলে কী অবলীলায় মিথ্যাচার করলেন। একে মান্নার ভীমরতি ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মিথ্যাচার আর পাকিস্তান প্রীতির নিদর্শন সত্যিই দুঃখজনক।

বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বিশেষ করে আইএসআই এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বিএনপির। ভারত সুনির্দিষ্টভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে আইএসআইয়ের পেইড এজেন্ট বলেছে। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে প্রমাণিত হয়ে গেছে তারেকের পরিকল্পনায় সংঘটিত সেই গ্রেনেড হামলায় আইএসআই সম্পৃক্ত ছিল। তাদের সাহায্যেই কাশ্মীর থেকে আর্জেস গ্রেনেড এসেছে। এমন অবস্থায় মান্নার পাকিস্তান প্রীতি দেখে তাঁকে বাংলাদেশে আইএসআই এর নব্য এজেন্ট মনে করলে ভুল হবে না বলেই ভাবছে দেশের রাজনীতি সচেতন নাগরিকরা।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭