ইনসাইড পলিটিক্স

মান্নার মূর্খতা: বাংলাদেশ-পাকিস্তান তুলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:০৪ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮


Thumbnail

আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই দায়িত্ব-জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে এসে অশিক্ষিত-মূর্খদের মতো তথ্য-উপাত্ত প্রদাণ করেন তাঁরা। এর সর্বশেষ উদাহরণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সম্প্রতি নাগরিক টেলিভিশনের টকশোতে পাকিস্তান সম্বন্ধে মান্না কিছু কথাবার্তা বলেছেন যা হয় তাঁর মূর্খতা প্রসূত অথবা তিনি নব্য পাকিস্তান প্রেমী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তবে যে কারণেই তিনি এসব কথা বলে থাকুন না কেন, পাকিস্তানের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর দেওয়া তথ্যগুলো যে নির্জলা মিথ্যা তা সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই প্রমাণিত হয়।

মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি নাগরিক টেলিভিশনের টকশোতে এসে পাকিস্তান বন্দনায় মুখর হয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মান্নার এহেন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। কারণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচক বলছে, অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

নাগরিক টেলিভিশনের টকশোতে বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে বহুল ব্যবহৃত বাক্যাংশকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে মান্না বলেন, ‘বাংলাদেশ কোন দেশের রোল মডেল বলেন তো? পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। যাকে আমরা সবচাইতে সমালোচনা করি।’মান্নার এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে সঞ্চালক তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন ‘পাকিস্তানের অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো?’উত্তরে মান্না বলেন, ‘হ্যাঁ, ডেফিনেটলি। তাদের গ্রোথ ইয়ে টিয়ে সব দিক থেকে অনেক বেশি স্টেবল এবং তাদের ইনস্টিটিটিউশনগুলো অনেক বেশি স্টেবল।’

বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছর পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে ওই ২৪ বছরে পূর্ব পাকিস্তানে বলতে গেলে কোনো রকম উন্নয়নই হয়নি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের মোট জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ থাকত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০পর্যন্ত ২০ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাক্কালিন ব্যয় ছিল ১১,৩৩৪ কোটি রূপি আর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্কালিন ব্যয় ছিল ৪,৫৯৩ কোটি রূপি। তাছাড়া ১৯৪৭- ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৪.৭%। কিন্তু রপ্তানি আয় বেশি করলেও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমদানি ব্যয় বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩১.১%। রপ্তানি উদ্বৃত্ত অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের আমদানির জন্য ব্যয় করা হতো। আর জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানের তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয় যার প্রত্যেকটিতেই পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল দ্বিগুণ।

রাজনৈতিক ভাবেও পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করেছে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। পূর্ব পাকিস্তানি নেতাদের সরকার গঠনের সুযোগ না দিতে অন্যায়ভাবে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন বাতিল করে সরকারকে উচ্ছেদ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা থাকলেও পশ্চিমা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে তা বানচাল হয়ে যায়।

এছাড়া প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানিদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের মন্ত্রণালয়গুলোতে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ৯৫৪ জনের মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ১১৯ জন আর ১৯৬২ সালে সিভিল সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল মাত্র ২০.৮%। বিদেশে ৬৯ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৬০ জনই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের।  এছাড়া ১৯৫৫ সালের এক হিসেবে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর মোট ২২১১ জন কর্মকর্তার মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ৮২ জন। ১৯৬৬ সালে সামরিক বাহিনীর ১৭ জন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ১ জন ছিল বাঙালি। এ সময় সামরিক অফিসারদের মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র ৫%।

শিক্ষা ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সঙ্গে বৈষম্য করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা। পাকিস্তান শাসনামলের ১৯৫৫-১৯৬৭ সালের মধ্যে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০৮৪ মিলিয়ন রুপি আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছিল ৭৯৭ মিলিয়ন রুপি।

সেই শোষণ-নিপীড়নের নাগপাশ ছিঁড়ে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে আবার শুরু হয় বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা। অবশেষে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বদলে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। গত ১০ বছরে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে যোজন যোজন ব্যবধানে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

মানব উন্নয়ন সূচক

ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন- ২০১৮ অনুযায়ী মানব উন্নয়ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। চলতি বছর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে ১৩৬তম যেখানে ১৫০ এ অবস্থান করছে পাকিস্তান।

শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। গেছে।বাংলাদেশের মানুষের গড়ে গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর আর পাকিস্তানে ৬৬ দশমিক ৬ বছর। এছাড়া মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, স্কুলে পাঠগ্রহণসহ প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে। নবজাতক-মৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এক হাজার জীবিত শিশু জন্মগ্রহণ করলে বাংলাদেশে ২৮ দশমিক ২ জন নবজাতক মারা যায়। পাকিস্তানে এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ, ৬৪ দশমিক ২। একইভাবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভালো করেছে। বাংলাদেশে ১ হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৩৪ দশমিক ২ জন মারা যায়। পাকিস্তানে তা দ্বিগুণের বেশি, ৭৮ দশমিক ৮ জন।

শিক্ষাক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার এখন ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ আর পাকিস্তানে ৫৭ শতাংশ।

ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন- ২০১৮ অনুযায়ী, নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়ে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বেশি।

বৈশ্বিক মানবসম্পদ সূচক বা হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স

বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা বৈশ্বিক মানবসম্পদ সূচক বা হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্সেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের ১৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর জরিপ করে তৈরি করা এই বৈশ্বিক মানবসম্পদ সূচকে দেশগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বেঁচে থাকার অন্যান্য অনুষঙ্গগুলো বিবেচনা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া একজন শিশু বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীল হওয়ার সম্ভাবনা ৪৮ শতাংশ যা পাকিস্তানে ৩৯ শতাংশ। বাংলাদেশে ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জন শিশুই ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে চার বছর বয়সী শিশু স্কুল শুরু করলে ১৮ বছর হওয়ার আগে স্কুলজীবনের ১১ বছর শেষ করতে পারে। পাকিস্তানে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ৯৩ শতাংশ শিশু। আর পাকিস্তানে চার বছর বয়সী শিশু স্কুল শুরু করলে ১৮ বছর হওয়ার আগে শেষ করতে পারে স্কুল জীবনের ৮ দশমিক ৮ বছর।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচক

ক্ষুধা নির্মূলের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের সাফল্যই বেশি। চলতি বছরের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (জিএইচআই) ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬ তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে ২০ ধাপ পিছিয়ে থেকে ১০৬ এ। সূচক অনুযায়ী, খাদ্য সংকটে ভারত এবং পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। অপুষ্টি, খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা, কৃশকায় বা শীর্ণকায় শিশু ও শিশুমৃত্যুর হারের ওপর ভিত্তি করে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানী ভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড যৌথভাবে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে থাকে।

উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের সূচক

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রকাশিত ‘সুষম প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির ৭৯টি দেশের তালিকায় পাকিস্তান ৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে ৩৮তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জীবনযাত্রার মান, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ও ঋণ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক এ সূচক তৈরি করেছে ডব্লিউইএফ।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকেও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ১২৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪১।

ব্র্যান্ড ভ্যালু

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফিন্যান্স’ প্রকাশিত ‘নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৭’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দেখা যায় ব্র্যান্ড ভ্যালুতে পাকিস্তানের চেয়ে ৬ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্বের কোনো দেশকে মূল্যায়নের অন্যতম মাপকাঠি ব্র্যান্ড ভ্যালু। সেই মাপকাঠিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম আর পাকিস্তানের ৫০। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনিয়োগ, সমাজ এবং পণ্য ও সেবা এই তিনটি বিষয়কে ২৬টি মানদণ্ডে বিবেচনা করে একটি দেশের ব্র্যান্ড যাচাই করা হয়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ

উদীয়মান অর্থনীতির দেশ

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুতিমূলক উন্নয়ন সূচকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪ আর পাকিস্তানের অবস্থান ৫২। সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৩ দশমিক ৯৮ যেখানে পাকিস্তানের স্কোর অনেকটাই কম, ৩ দশমিক ৫৫। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত বার্ষিক এই সূচক তৈরিতে ১০৩টি দেশের অর্থনীতির তিনটি পৃথক স্তম্ভ বিবেচনায় আনা হয়েছে৷ সেগুলো হলো, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সমতা বিধান৷

জিডিপি

গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক। জিডিপিতেও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানি ওয়েবসাইট দ্যা কান্ট্রি ইকোনমির তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে পাকিস্তানের জিডিপির হার ছিল ৫.৭ শতাংশ আর বাংলাদেশে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জিডিপির পরিমাণ ছিল ৭.৪ শতাংশ।

জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট

জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সেও (জিডিআই) পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। জিডিআই এ বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৮৮১। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের স্কোর শূন্য দশমিক ৭৫০।

কর্মসংস্থান

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। পাকিস্তানে এই হার ৫২ শতাংশ।

নিরাপত্তা

বাংলাদেশে হত্যার শিকার হয় শতকরা ২ দশমিক ৫ জন। আর পাকিস্তানে এই হার প্রায় দ্বিগুণ, ৪ দশমিক ৪ জন।

পরিবেশের ভারসাম্য

বাংলাদেশ মাথাপিছু ০.৫ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর পাকিস্তান নির্গমন করে থাকে ০.৯ টন কার্বনডাই অক্সাইড। বায়ু দূষণের প্রভাবে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৪৯ জন যা পাকিস্তানে যা ১৭৩ দশমিক ৬ জন। দূষিত পানি ও পয়নিষ্কাশন অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে মৃত্যু হয় লাখে ১৮ দশমিক ৬ জনের। এই হার পাকিস্তানে ১৯ দশমিক ৬ জনের।

শুধু তাই নয় ক্রিকেট, ফুটবল অর্থাৎ খেলার মাঠেও পাকিস্তানকে নিয়মিত ধরাশায়ী করছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত আর পাকিস্তান সারা বিশ্বে পরিচিত ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে। খোদ পাকিস্তানি টিভিতে সে দেশীয় বুদ্ধিজীবীরা হাহাকার করে বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের মতো বানিয়ে দাও।’ অথচ মাহমুদুর রহমান মান্না টিভি চ্যানেলে কী অবলীলায় মিথ্যাচার করলেন। একে মান্নার ভীমরতি ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মিথ্যাচার আর পাকিস্তান প্রীতির নিদর্শন সত্যিই দুঃখজনক।

বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বিশেষ করে আইএসআই এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বিএনপির। ভারত সুনির্দিষ্টভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে আইএসআইয়ের পেইড এজেন্ট বলেছে। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে প্রমাণিত হয়ে গেছে তারেকের পরিকল্পনায় সংঘটিত সেই গ্রেনেড হামলায় আইএসআই সম্পৃক্ত ছিল। তাদের সাহায্যেই কাশ্মীর থেকে আর্জেস গ্রেনেড এসেছে। এমন অবস্থায় মান্নার পাকিস্তান প্রীতি দেখে তাঁকে বাংলাদেশে আইএসআই এর নব্য এজেন্ট মনে করলে ভুল হবে না বলেই ভাবছে দেশের রাজনীতি সচেতন নাগরিকরা।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ    



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল

প্রকাশ: ০৯:১৯ এএম, ১৯ মে, ২০২৪


Thumbnail

মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সারা দেশেই বাড়ছে দলটির গৃহদাহ। দল পুনর্গঠন চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে দলীটির বিবাদ প্রকাশ্যে আসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশ সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন করছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা। তাদের অনেকে এলাকায় গিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করতে গোপনে উসকে দিচ্ছেন স্থানীয় নেতাদের। ঢাকায় ফিরে তারাই আবার দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে নিজেদের পথ প্রশস্ত করছেন। এতে পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস ঘনীভূত হচ্ছে।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ২৮ অক্টোবরের দলীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কারাগারে যাওয়া নেতাদের অনেকের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন দলীয় অনেকে। নিয়ে দলের ভিতরে রয়েছে বিতর্ক। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের (অডিও-ভিডিও) ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। অনেককে অঘোষিতভাবেওএসডিকরা হয়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে। নিয়ে ক্ষোভে কেউ কেউ রাজনীতি থেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। চলে যাচ্ছেন দেশ ছেড়ে।

এসব বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি মহাসাগরের মতো বিস্তৃত একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। দলে নেতাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে কোনো রকমের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বা কোন্দল নেই।

জানা গেছে, সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি বিরোধ-কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে চলমান উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বয়কটের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সারা দেশে সাংগঠনিক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ নেতাই তাদের নিজ নিজ এলাকায় সেই দায়িত্ব পালন করেননি। অনেকে এলাকাতেই যাননি। জেলা বিএনপির শীর্ষকর্তারাও তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি। বরং উল্লিখিত নেতাদের এলাকাতেই ভোট কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। নির্বাহী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব নেতার দ্বৈত ভূমিকায় তৃণমূলের নেতারা ক্ষুব্ধ।


বিএনপি   অভ্যন্তরীণ   কোন্দল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

মির্জাপুরে বিএনপির ২০ নেতাকে সতর্ক বার্তা

প্রকাশ: ০৯:০৩ এএম, ১৯ মে, ২০২৪


Thumbnail

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাচনে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ফিরোজ হায়দার খানের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ২০ নেতাকে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৮ মে) উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রউফ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আরিফ এবং পৌর বিএনপির সভাপতি হয়রত আলী মিঞা সম্পাদক এসএম মহসীন স্বাক্ষরিত পৃথক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। সতর্ক বার্তা পাওয়ার পর নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিলে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানানো হয়।

সতর্ক বার্তাপ্রাপ্ত নেতারা হলেন, উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন প্রিন্স, সদস্য আলী হোসেন রনি, প্রচার সম্পাদক সাঈদ আনোয়ার, গোড়াই ইউনিয়নের সাবেক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, বহুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অকরাম মল্লিক ভাওড়া ইউনিয়নের সাবেক সম্পাদক তপন হাসান খানসহ ২০ নেতা।


টাঙ্গাইল   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আবার তাপস-খোকন বিরোধ, আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

সারা দেশে আওয়ামী লীগে কোন্দল বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই ঢাকার আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট নেতা শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সাঈদ খোকনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য আকার রূপ নিয়েছে। কয়েকদিন আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুটির মেয়রদের মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে ঢাকা সিটির দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এখন তাপসের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র তাপস দীর্ঘদিন ধরেই সাঈদ খোকনকে কোণঠাসা করার জন্য প্রকাশ্য তৎপরতা দেখিয়েছেন। এই দুই নেতার বিরোধ এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে এক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যে সময় সারা দেশে আওয়ামী লীগ কোন্দল নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে।

আরও পড়ুন: জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে?

সাইদ খোকন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র ছিলেন। তার মেয়র থাকা অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নানা রকম অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তার সীমাহীন ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে সাঈদ খোকনকে আর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দেয়নি। তার বদলে ধানমন্ডি এলাকার এমপি শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন পান এবং নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি চার বছর অতিক্রম করেছেন। তাপস যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ব্যাপক উন্নয়ন করতে পেরেছেন এমনটি নয়৷ তবে দুর্নীতি বা অন্যান্য অভিযোগে তিনি সাঈদ খোকনের মত ব্যাপকভাবে সমালোচিত হননি।

অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনে দায়িত্ব গ্রহণ করে তাপস সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সেটি করতে যেয়ে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের অনুগত বেশ কয়েক জনকে চাকরিচ্যুত করেন। তিনি সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে বেশ প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তার কিছু নীতি এবং কর্মসূচির বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এরকম বিরোধের জেরে এক সময় সাঈদ খোকনের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগে। এবং দুজনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে সেই বিরোধ সাময়িকভাবে থেমে যায়।

আরও পড়ুন: অর্থকষ্টে বিএনপি

সাইদ খোকন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। গত নির্বাচনে তিনি ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে তিনি মেয়র হিসেবে তার কার্যক্রম এবং সাফল্যের কথা তুলে ধরেন৷ এই সাফল্যের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বর্তমান মেয়রের তীব্র সমালোচনা করেন এবং মেয়রের বিভিন্ন নীতি এবং অবস্থানের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

ধারণা করা হচ্ছে যে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখেই সাঈদ খোকন সমালোচনার তীর ছুড়েছেন তাপসের দিকে। এখন তাপস যে তাকে পাল্টা আঘাত হানবেন এটা বলাই বহুল্য। স্থানীয় ঢাকাবাসীরা মনে করছেন, ফজলে নুর তাপস মেয়র হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতি কমিয়েছেন। তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। দুজনেরেই ভালো মন্দ আছে। তবে সাঈদ খোকন মেয়র থাকা অবস্থায় দুর্নীতির একটি বড় ধরনের পার্সেপশন সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল যেটি তাপসের সময় তৈরি হয়নি। এখন মেয়র হিসেবে আবার দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে ফিরে আসতে চাইছেন সাঈদ খোকন। সে জন্যই তিনি বর্তমান মেয়রকে সমালোচনা করছেন বলেই অনেকে মনে করেন।

তবে তাপস এবং সাঈদ খোকনের এই বিরোধ আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এই সময় আওয়ামী লীগের দই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরোধ সরকার সম্পর্কে এবং দলের ভিতর ভুল বার্তা দিবে বলেই অনেকে মনে করছেন। 


আওয়ামী লীগ   সাঈদ খোকন   শেখ ফজলে নুর তাপস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর নির্বাচন বিরোধী অধিকাংশ বিরোধী শিবিরেই এখন হতাশা। বিশেষ করে আন্দোলনের ব্যর্থতা নেতা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা তৈরি করেছে। নতুন করে আন্দোলন শুরু করা বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কষ্টসাধ্য এবং কঠিন হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে জামায়াত যেন বিএনপির সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিএনপিকে চাঙ্গা করা এবং বাঁচিয়ে রাখার মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেছে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত।

গত কিছুদিন ধরেই জামায়াতের মধ্যে অত্যন্ত চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জামায়াত শুধু তাদের নিজেদের সংগঠনকে গোছাচ্ছে না বরং বিএনপিকেও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্ররোচিত করছে, প্রভাব বিস্তার করছে। জামায়াত এখন আবার শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতির মেরুকরণে জামায়াত এখন কর্তৃত্বের আসন গ্রহণ করেছে বলেও মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: অর্থকষ্টে বিএনপি

প্রশ্ন উঠেছে জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে? ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয়ের পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে এবং এই বিচারে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাকেই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং তারা সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েছে। একে একে জামায়াতের সব শীর্ষনেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হওয়ার পরও দলটি বিলুপ্ত হয়নি, ভেঙে পড়েনি। বরং বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জামায়াত এখন আগের চেয়ে সংগঠিত হচ্ছে এবং তৃণমূল পর্যন্ত এর সংগঠন বিস্তার করছে। জামায়াত দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জামায়াতের শোডাউন লক্ষ্য করার মতো। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের জামায়াতের সমাবেশ তার আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আমাদের কর্মী সমাবেশ। নির্বাচনের পরে জামায়াতের তৎপরতা। গত রমজানে পাঁচতারকা সোনারগাঁ হোটেলে জামায়াতের ইফতার পার্টি ইত্যাদি সবই জামায়াত কে নতুন শক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জামায়াত চাঙ্গা হচ্ছে কীভাবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে বাংলাদেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাজনীতির চির অবসান ঘটবে। এই দলগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু এই সমস্ত বিচারের এক দশক পরও দেখা যাচ্ছে যে জামায়াত নতুন করে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হল স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো মানুষকে আকর্ষণ করতে পারছে না। জামায়াত তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। অনেক স্থানে জামায়াত তাদের পরিচয় গোপন করে ধর্মপ্রচারের নামে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে দাওয়াত এবং নানা রকম ইসলামী কর্মসূচির মাধ্যমে জামায়াত একটি নতুন আবহাওয়া তৈরি করার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন: তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

তাছাড়া জামায়াতপন্থি যেসমস্ত ব্যবসায়ীরা তারা সরকারের সাথে একধরনের গোপন আঁতাত এবং সম্পর্ক তৈরি করছেন এবং আঁতাত ও সম্পর্কের মাধ্যমে তারা সরকারের সাথে ব্যবসা-বানিজ্য করছেন। সেই ব্যবসার টাকা সংগঠন করার জন্য দিচ্ছেন। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে তা হলো, জামায়াতের কর্মীরা দলকে নিয়মিত চাঁদা দিচ্ছেন এবং ছোট ছোট চাঁদার ফলে একটি বিপুল অর্থ জমা হচ্ছে। আর একারণেই জামায়াত এখন বিরোধী রাজনীতির কেন্দ্রে এসে দাড়িঁয়েছে। 


জামায়াত   বিএনপি   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

অর্থকষ্টে বিএনপি

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে চাইছে। কিন্তু আন্দোলন শুরু করার জন্য যে আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন, সেই আর্থিক সামর্থ্য এখন বিএনপির অনেক কমে গেছে। অর্থকষ্টে ভুগছে দলটি। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিষয়টি লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার কাছে অবহিত করেন। তারেক জিয়া তাদের বলেছেন, ‘আমারই চলতে কষ্ট হচ্ছে, আপনারা টাকা জোগাড় করুন’।

উল্লেখ্য যে, বিগত দুই বছর বিএনপির বেশ কিছু কর্মসূচি করেছিল এবং তাদের কাছে আর্থিক প্রবাহে একটা স্ফীতিভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা গোপনে গোপনে দুই নৌকায় পা দেওয়ার মতো আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীরা দলটিতে অর্থ সহায়তা বাড়িয়েছিল। তাদের আশা ছিল যে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন প্রতিরোধ করতে পারবে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে। আর এই কারণেই ডু অর ডাই অবস্থা থেকে অনেক ব্যবসায়ী বিএনপিকে দুই হাতে অর্থ ঢেলেছিল। আর এ কারণেই বিএনপির মধ্যে গত দুই বছর চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছিল। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। কর্মসূচি পালন করেছে। এই সমস্ত কর্মসূচির ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আশা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর আস্তে আস্তে বিএনপিতে অর্থ প্রবাহ কমতে থাকে।

আরও পড়ুন: তারেক কি যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হচ্ছেন?

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন যে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপিকে অনেকেই আর্থিক সহায়তা দিচ্ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হওয়া এবং বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রেক্ষিতে এখন বিএনপিকে সবাই এড়িয়ে চলতে চাইছে। যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা আগে বিএনপিকে অর্থ দিতেন তারা এখন বিএনপি নেতাদের টেলিফোন ধরছেন না বলেও কোন কোন নেতা অভিযোগ করেছেন। আর বিএনপিপন্থি যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর জন্য দুহাতে অর্থ দিয়েছেন তারা এখন হাত পা গুটিয়ে নিয়েছেন।

এখন ওই সমস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করছেন। নতুন করে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে কারও কারও মধ্যে। কারণ তারা মনে করছে, আন্দোলনে বিএনপি পরাজিত হয়েছে, এখন বিএনপির পেছনে অর্থ ঢালা মানে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলা। এ কারণেই বিএনপি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে চাঁদা আদায় করত সেই চাঁদার পরিমাণ এখন শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে।

আরও পড়ুন: হাইকমান্ডের হাতে বিএনপির ৩০০ নেতার ভাগ্য

বিএনপির অর্থ উপার্জনের একমাত্র উপায় হল, কমিটি গঠন করা এবং কমিটি গঠন করার মাধ্যমে বিভিন্ন নেতা কর্মীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা। কিন্তু নেতাকর্মীরা এখন আগের মতো সচল অবস্থায় নেই। বহু নেতাকর্মী জেলে। তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এমনকি অনেকে আদালতের খরচ মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে টাকা দিয়ে কমিটিতে জায়গা নেওয়াটা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখানেও আর্থিক অর্থ প্রাপ্তিতে একটি টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ কারণে বিএনপি এখন বহিষ্কার বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। বিভিন্ন নেতাকে ঢালাওভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। তখন তারা টাকা পয়সা দিয়ে দলে আবার জায়গা করে নিচ্ছেন। এভাবে কোনরকমে দলটি টিকছে।

তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, যারা অর্থসংগ্রহ করছে সে সমস্ত নেতারা ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। বিশেষ করে কয়েকজন নেতা যারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তারা একটি মোটা অংকের টাকা নিজেদের কাছে রেখে অল্প কিছু দলের জন্য বরাদ্দ করেছেন। তবে ওই সমস্ত নেতাদের অনেকেরই দাবি তারা নিজের কাছে কিছুই রাখেননি। বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা যে চাঁদা বা আথিক অনুদান পেয়েছেন তার একটি বড় অংশই তাদেরকে লন্ডনে পাঠাতে হয়েছে তারেক জিয়ার বিলাসী জীবনযাপনের জন্য।


বিএনপি   আওয়ামী লীগ   ব্যবসায়ী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন