ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত থাকবে নির্বাচনে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/11/2018


Thumbnail

অনেক অনিশ্চয়তা ও সংশয়ের পর শেষ পর্যন্ত বিএনপি আজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিটিংয়ে নির্বাচনে ৭ দফা দাবি অর্জিত না হওয়ায় নির্বাচনে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এরপরও লন্ডন থেকে তারেক জিয়া নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানসহ নানা সমীকরণের কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাচ্ছে।

কিন্তু এরই মধ্যে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি সত্যিই নির্বাচনে যাবে? নাকি এটি একটি কৌশল। শেষ মুহূর্তে তারা মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করে নেবে নাতো বিএনপি? কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে মনে করা হচ্ছে, বিএনপি যতটা না নির্বাচনে যেয়ে জয়ী হতে চায়, তার চেয়ে বেশি দেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক অচলাবস্থা বা সংকট সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলতে চায়।

বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের আন্দোলনেরই একটি কৌশল। গতকাল শনিবার দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি ৩ দফা বৈঠক করেছে। প্রথমে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক, পরে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ও সর্বশেষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। তিনটি বৈঠকেই আলোচনা করা হয়েছে, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কেউ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কাজেই, সেটি প্রমাণ করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপি মনে করছে, তারা যে দাবিগুলো দিয়েছে তাঁর একটি বড় অংশ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। যেমন: লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সব দলকে সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া, বিরোধী দলের ওপর হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া, বিরোধী দলের ওপর দমন, পীড়ন, নিপীড়ন, নির্যাতন না করা ইত্যাদি দাবিগুলো। যেহেতু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, কাজেই এ সময়টাতে এসব কাজের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন সেই দায়িত্ব কতটা সুষ্ঠুভাবে পালন করবে, সেটাই এখন দেখতে চায় বিএনপি।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নীতিগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ৫টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি।

১. বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র কিনবে ও জমা দেবে বিএনপি। যদিও নির্বাচনের আইনে রয়েছে, একজন প্রার্থী ৩টির বেশি আসন থেকে দাঁড়াতে পারবে না। তবুও ৫ আসন থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার চেষ্টা করবে বিএনপি।

২. নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি করেছে বিএনপি। একমাস না হলেও, যদি ৭-১০ দিন পেছানো যায় বিএনপি সেটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবে।

৩. বিএনপি দেখতে চায়, নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন বা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে, প্রশাসনের বিষয়টি বিএনপি সবসময় গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিএনপির দাবি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে মাঠ পর্যায়ে ও উচ্চ পর্যায়ে প্রশাসন নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে। অনেককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে, তাঁরা দুটি উদাহরণ দিয়েছে। এদের মধ্যে একজন হলো মন্ত্রিপরিষদের সচিব জনাব শফিউল আলম, তথ্য সচিব জনাব আবদুল মালেক।

বিএনপির বক্তব্য, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে যারা থাকবে, তাঁরা নির্বাচনের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারবে না। কাজেই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের স্বার্থে খুব শিগগিরই সচিব-আমলাদের বদলের জন্য দাবি উত্থাপন করবে বিএনপি।

৪. বিএনপি মনে করছে, তফসিল ঘোষণার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেহেতু নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। কাজেই, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের দলীয় বলে পরিচিত, তাদের পরিবর্তনের ব্যাপারেও বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

৫. নির্বাচন কমিশন সকল দলের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছে কি না, সে বিষয়টিও দেখছে বিএনপি। যে সব মন্ত্রী, এমপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তাঁরা যদি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাহলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। সেজন্য নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা পর্যন্ত বিএনপি পর্যবেক্ষণ করবে, নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না। সরকার আসলেই অর্থবহ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাইছে কিনা।

বিএনপি যদি দেখে, তাদের দাবিগুলোর দিকে নির্বাচন কমিশন মনোযোগী নয়। সরকার আসলে জোরপূর্বক নির্বাচন করতে চায়, সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশে মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং একগুঁয়েমির কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে সরে আসে। দলের সব কর্মীরা নির্বাচন থেকে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ২২ জানুয়ারির নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। সে রকমই একটি পরিস্থিতি এবার তৈরি করতে চাইছে বিএনপি। বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা না থাকে, সেক্ষেত্রে তারা স্ব-উদ্যোগে আন্দোলন করবে। সেই আন্দোলন সরকারের পক্ষে মোকাবেলা করা কঠিন হবে।’

একইভাবে বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘সরকারের জন্য এটি একটি অগ্নি পরীক্ষা। সরকার যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, তাহলে সরকারকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কাজ না করে, তবে তাঁর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘটনা নতুন নয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়, ভোট গ্রহণের দিন বিএনপি দুই সিটি করপোরেশন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। যদিও নির্বাচনের দিন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনও তাঁরা একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়। বরিশাল সিটি নির্বাচনের দিন বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপি হয়তো এতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই তারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে। এতে দেশে একটা আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং সরকারের পক্ষে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭