কালার ইনসাইড

‘ইসলামের বিপক্ষের সিনেমা নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/11/2018


Thumbnail

খিজির হায়াত খান, অভিনয়ে নাম লিখিয়েছিলেন নিজের পরিচালনায় ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ সিনেমার মাধ্যমে। পরবর্তীতে দেশের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলাধুলা বিষয়ক সিনেমা ‘জাগো’ পরিচালনা করে আলোচনায় আসেন। নায়ক হয়ে মাতাতে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ সিনেমায় আসছেন। তিনি মুখেমুখি হয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের। 

বাংলা ইনসাইডার: পরিচালনা থেকে অভিনয় কিভাবে?

খিজির হায়াত খান: সিচুয়েশন বাধ্য করেছে। একজন আর্টিস্ট শেষ মুহূর্তে আসেনি। তাছাড়া এটার টপিকটাই এত সেন্সেটিভ। যেই পূর্ব প্রস্তুতি দরকার ছিল। শুটিংয়ে যেভাবে সময় দেয়ার দরকার ছিল। যেই লোকেশনে শুট করবো। যেভাবে শুট করবো। এটার জন্য আসলে প্রতিষ্ঠিত কারো কাছে সময়টা এক্সপেক্ট করাটা বা কারো সময় পাওয়াটা বা তাকে আসলে ওই পরিমানের পারিশ্রমিক দেওয়াটা সম্ভব হচ্ছিল না। খুবই রিস্কি একটি প্রজেক্ট। এই রিস্কটা আমি আসলে আমাদের যারা প্রতিষ্ঠিত, তাদের পাইনি। এরপরে যেটা, আরেকটা অপশন ছিল নতুন কাউকে নেয়া। নতুন কাউকে দিয়ে এতবড় রিস্ক আমি নিতে চাইনি। সে কারণে নিজে ক্যামেরার সামনে চলে আসছি।

প্রস্তুতি কেমন ছিল?

প্রায় ৮ মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। ৮ মাস প্রস্তুতি নেয়ার পর গত বছরের নভেম্বরের ১০ তারিখ শুটিং শুরু হয়। এই নভেম্বরে মুক্তি। অ্যাকশনের জন্য ট্রেনার ছিলেন, এডওয়ার্ড ফ্রান্সিস গোমস। তিনি ট্রেনড করেছেন। এছাড়া সিনেমাটির সুইমিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সমুদ্রের মধ্যে ফাইট সিকোয়েন্স ছিল। অ্যাকটিংয়ের জন্য আলাদা করে প্রশিক্ষন নিয়েছি। ভাগ্যিস নাচ ছিল না। সেক্ষেত্রে বেচে গিয়েছি। আর এই ক্যারেক্টারটায় আমি অ্যাক্টিং করার চেষ্টা করিনি। যে ক্যারেক্টারটা প্লে করেছি। ওটা যদি আমি হতাম। আর ওখানে যদি আমার সঙ্গে এমন ঘটনাগুলো ঘটতো। তাহলে আমি যা করতাম। আমি ওটাই করার চেষ্টা করেছি। এখন আসলে ওটা কতটুকু অভিনয় হয়েছে আর কতটুকু রিয়েলিস্টিক হয়েছে। দর্শকই তার বিচার করবে।



নিজের চোখে সিনেমার সেরা দৃশ্য কী?

দুটি দৃশ্যকে আমি একটু বেশি এগিয়ে রাখবেন। একটা ফিজিক্যালি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। সমুদ্রের মধ্যে একটি ফাইট সিকোয়েন্স। যেখানে আমাকে ভেসে থাকতে হয়। আমার মনে আছে, জানুয়ারী মাসের ঠান্ডার মধ্যে ৮ ঘন্টা পানিতে ভেসে থাকতে হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে ফাইট সিকোয়েন্স আমার জন্য খুবই একটা টাফ সিকোয়েন্স ছিল। আর সবচেয়ে ইমোশনাল ছিল যখন আমার ফ্যামিলিটাকে আমি হারাই। মর্গের ভিতরে দৃশ্যটা আমরা করেছিলাম। ওই দৃশ্যটা ইমোশনালি খুবই খুবই টাফ ছিল। এই দুইটা দৃশ্য আমার জন্য বলবো খুবই কঠিন ছিল। একটি ফিজিক্যালি। আরেকটি ইমোশনাল।

কোন প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে?

এ ধরনের একটি সিনেমা করার জন্য টাকা যোগাড় করা ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কারণ এ ধরনের সিনেমার জন্য টাকা যোগাড় করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। আর হ্যা, আমার এবং আমার ইউনিটের কিছু সদস্যদের উপর তো জীবনের হুমকি আছেই। ওইটা স্পেসেফিক আর বললাম না। এটা একটা যুদ্ধের মতো। যুদ্ধের ময়দানে আছি। হুমকি তো আসবেই। সেটা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। তবে কেউ ছবিটা সম্পর্কে না জেনে না বুঝে এ নিয়ে মন্তব্য না করলে খুশি হবো। গল্পটা নিয়ে মানুষের মধ্যে বাইর থেকে নানা ধারণা হতে পারে। আমি বলবো আগে সিনেমাটি দেখুন। তারপর বিচার- বিশ্লেষন করেন। আমরা ভাবছিলাম হয়তো সিনেমা রিলিজের পর হুমকি আসবে, কিন্তু সিনেমা রিলিজের আগেই আমাদের ইউনিটের অনেকের জন্য নানা হুমকি আসছে!

ধর্ম ও জঙ্গিবাধ উঠে এসেছে সিনেমায়?

হ্যা। আমাদের মূল থিটাই এটা। সিনেমাটি ইসলামের বিপক্ষে নয়, এটা জোর দিয়ে বলছি। ইসলামের সপক্ষের একটি ছবি। আমরা দেখাতে চেয়েছি কিভাবে ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে লক্ষ্যভ্রষ্ট তরুণদের যে অন্ধকারে ফেলে দেয়া হয়।



এমন গল্প কেন বেছে নেয়া?

গল্পটি খুবই একটি ব্যাক্তিগত জায়গা থেকে বেেেছ নেয়া। আমার খুব কাছের বন্ধুকে হলি আর্টিজনে হারাই। আমার আরও কিছু বন্ধু , ছোট ভাই তারা জঙ্গিবাদের দিকে চলে গেছে। যখন এমন একটা ইস্যুতে আপন মানুষগুলোকে হারাতে শুরু করবেন। তখন তো আপনারও কিছু করতে ইচ্ছে করবে। তো আমি একজন ফিল্ম মেকার। আমি কি করতে পারি! আমি ফিল্মই বানাতে পারবো। আমি তো অস্ত্র নিয়ে প্রতিহত করতে পারবো না। ফিল্মটাই আমার কাছে অস্ত্র। তাই এই এমন একটি সিনেমা করা।

পরিচালক আবু আকতারুল ইমান। প্রথম ছবি। তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী?

‘মাটির ময়না’তে তিনি তারেক মাসুদের প্রধান সহকারী ছিলেন। এছাড়াও সোহানুর রহমান সোহান, এজে মিন্টু, শাহ আলম কিরণের মতো বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমারও সহকারী ছিলেন। একটা অভিমানে উনি এতদিন সিনেমা বানাননি। ডকুমেন্টরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দেড়শোর বেশি আন্তর্জাতিক ক্লাইন্টের জন্য ডকুমেন্টরি নির্মাণ করেছেন। ৫২ বছর বয়সে তাকে পরিচালনায় আনলাম। ওনার সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে কাজ করেছি। আমার প্রডাকশন হাউজের ডকুমেন্টরিগুলো উনি দেখেন। তার সঙ্গে আমার অনেকদিনের রিলেশন। আমার কাছে মনে হয়েছে একজন মানুষ যিনি সারা জীবন কমার্শিয়াল মুভির মধ্যে ছিলেন। কিন্তু সিনেমাটি বানাননি। এটা আসলে আমাদের একটা হতাশার জায়গা। ওনাকে আমি বলেছি আপনি একটি কমার্শিয়াল স্ট্রাকচারে সিনেমাটি বানাবেন। যেখানে ফাইট থাকবে, গান থাকবে কিন্তু দিনশেষে এই সেন্সেটিভ ম্যাসেজটা দিবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে উনি সেটা শতভাগ দক্ষতার সঙ্গে ওনার কাজটি করতে পেরেছেন।

নায়িকা লাক্স সুন্দরী সানু কেমন করেছেন?

খবুই হার্ডওয়ার্কিং একজন অভিনেত্রী। সে আপ্রান চেষ্টা করেছে তার চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য। সে আমাকে প্রচুর হেল্প করেছে। সে তো প্রতিদিন ক্যামেরার সামনে দাড়ায়নি। আমি দাড়িয়েছি। কিন্তু তিনি ক্যামেরার সামনে না দাড়ালেও হেল্প করেছেন। আমাদের গল্পের যে চরিত্রটা, তার জন্য শানুর মতোই একজন অভিজ্ঞ অ্যাকট্রেস দরকার ছিল। রোমান্টিক সিনে তো আমার হাত পা কাপছিল। কিসের সিনও ছিল। ও যথেষ্ট হেল্প করেছে। আমার জন্য সমুদ্রের মাঝে ফাইট করা যতটা না কঠিন ছিল, তারচেয়ে বেশি কঠিন ছিল রোমান্টিক সিন বা গানের দৃশ্যে অভিনয়। চলন্ত বাইকে চুমুর সিন ছিল। চলন্ত বাইকে চুমুর সিন করা যে কত ডিফিকাল্ট। সেটা আমি বুঝলাম। পর্দায় হয়তো অনেকের সহজ লাগবে। সহজ কিছু হয়েছে বলে ধরে নিবে। আরেকটা দৃশ্য ছিল ওকে কোলে তুলে লেকের মত একটা জায়গা ক্রস করবো। ও পায়ে ব্যাথা পায়। ১২/১৩ বার টেক হয়েছে দৃশ্যটি।

পরিশেষে, সিনেমাটি নিয়ে কী বলতে চান?

আমরা একটা দায়িত্বের জায়গা থেকে। অত্যান্ত ঝুকি এবং সেন্সেটিভ একটা জায়গা থেকে এই সিনেমাটি বানিয়েছি। সাদাকে সাদা বলেছি, যেটা কালো সেটা দেখিয়েছি। মানুষ বুঝে নিবে। আমাদের দেশের তরুণদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জঙ্গিবাদের দিকে। দর্শকের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে। তারাও যেন ছবিটা দেখে এবং ছবিটা ছড়িয়ে দেয়। আমরা যদি একটা ছেলে বা মেয়েকেও এই সিনেমার মাধ্যমে বাঁচাতে পারি। তাহলেই বুঝবো যে আমাদের ছবি সফল।



বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭