ইনসাইড পলিটিক্স

পল্টনে সহিংসতা: দুই মির্জার লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/11/2018


Thumbnail

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলগুলো উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে মনোনয়নপত্র বিক্রি করছিল। মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও দলে দলে ব্যানার, ফেস্টুনসহ নানা সাজে সজ্জিত হয়ে, মিছিল করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টনে সন্ত্রাস এবং নারকীয় তাণ্ডব দেখল দেশবাসী। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ঘটা এই ঘটনার জন্য দায়ী কে, সেটা নিয়ে এখন খোদ বিএনপির মধ্যেই কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে, বিএনপির নেতারা একে অপরকে সন্দেহের বানে বিদ্ধ করছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, ‘দলের মহাসচিবসহ নির্বাচনপন্থীদের উস্কানি এবং ইন্ধনেই পুলিশ এই অক্রমণের  ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এই ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের মধ্যে নির্বাচন বিরোধী হিসেবে পরিচিত মির্জা আব্বাসকে আসামি করে একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুটি স্রোত কাজ করছিল। এরমধ্যে মির্জা আব্বাস এবং রুহুল কবির রিজভীরা ছিলেন নির্বাচন বিরোধী। অপরদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জমির উদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমদ, এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা ছিলেন নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন, ‘নির্বাচন বিরোধীদেরকে কোণঠাসা করতেই গতকালের এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’

গতকালের ঘটনায় বিএনপির একাধিক নেতা ৪ টি পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন।

চারটি পর্যবেক্ষণের প্রথমটি হচ্ছে, সকাল থেকেই বিএনপি অফিসের সামনে মিছিল চলছিল, তখন পুলিশ কোনো রকমের বাধা দিল না। পুলিশ স্বাভাবিক অবস্থাতেই তাঁর দায়িত্ব পালন করছিল। যেই মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে মিছিল আসলো, তখন পুলিশ বাধা দিল কেন? বিএনপি কার্যালয়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুপুর একটায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দলীয় কার্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দুপুর সাড়ে ১২ টায় তিনি টেলিফোন করে বলেন যে, তিনি দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারছেন না।’ বিএনপির একাধিক নেতা প্রশ্ন করেছেন, মির্জা ফখরুল কি আগে থেকেই জানতেন এরকম একটা সহিংস ঘটনা ঘটবে?

দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টেলিফোন করে পল্টনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। মির্জা ফখরুল পুলিশের কর্মকর্তাদের পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের দিকে নজর রাখতে বলেন। তাহলে কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আগে থেকেই জানতেন, এরকম একটা ঘটনা ঘটবে? সেই জন্যেই কি তিনি আগে থেকেই পুলিশকে পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে নজর রাখতে বলেছিলেন?

তৃতীয় পর্যবেক্ষণ: মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার  কারণে তিনি এখন পলাতক। বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মির্জা আব্বাস সবসময় একটা ভূমিকা রাখতো। বিশেষ করে ঢাকার আসনগুলো কাকে কোন আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে, এগুলো নির্ধারণে মির্জা আব্বাসের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চাইছিলেন যে, এই কর্তৃত্বটা শুধু তাঁর একার থাকবে। তিনি ঐক্যের স্বার্থে এবং দলের প্রয়োজনে ঢাকার আসনগুলোর একটি বড় অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দিতে চাইছিলেন। সেখানে তাঁর বড় বাধা ছিলেন মির্জা আব্বাস। এ ঘটনায় মধ্যে দিয়ে মির্জা আব্বাস এখন পলাতক জীবনে চলে যাওয়ায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠক, মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মির্জা ফখরুলের একক কর্তৃত্বে হবে। তিনি এখন যেভাবে যাকে চাইবেন তাকেই মনোনয়ন দিতে পারবেন। এজন্যই কি এই হামলায় ঘটনা ঘটানো হয়েছিল?

চতুর্থ পর্যবেক্ষণ: বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় যে সংবাদ সম্মেলন করলেন, সংবাদ সম্মেলনে তিনি হেলমেট পড়া যে যুবকের ছবি দেখিয়ে বললেন এরা কারা? এই ছবিগুলো এত দ্রুত সময়ে তিনি কোথায় থেকে পেলেন? তাহলে নিশ্চয়ই ঘটনাস্থলে তাঁর লোকজন ছিল। এরকম একটা ঘটনা ঘটানো হবে এবং মির্জা আব্বাসকে দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরানোর জন্যই কি এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না এই প্রশ্নও এখন উঠেছে বিএনপির মধ্যে। 

বিএনপির অনেকেই মনে করেন, সরকারের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্পর্ক অনেক ভালো। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মির্জা ফখরুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও নানা কারণে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন। কাজেই এ ঘটনায় পুলিশকে হঠাৎ আক্রমণ করা এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করার কাজে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশকে ব্যবহার করেছেন কি না, সেই প্রশ্নও বিএনপির মধ্যে উঠেছে।

গতকাল বিএনপি অফিসের সামনের সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির একপক্ষ এখন আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছেন। তবে যে পক্ষ বা যারাই নির্বাচনকে ঘিরে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য যে মহৎ নয় সেটা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। নির্বাচন ঘিরে অতীতের মতো বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও সহিংসতা, মারামারি, হানাহানি, পেট্রোল-বোমা, আগুন সন্ত্রাস ফিয়ে আসুক তা কারও কাম্য নয়।  

বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭