নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলগুলো উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে মনোনয়নপত্র বিক্রি করছিল। মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও দলে দলে ব্যানার, ফেস্টুনসহ নানা সাজে সজ্জিত হয়ে, মিছিল করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টনে সন্ত্রাস এবং নারকীয় তাণ্ডব দেখল দেশবাসী। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ঘটা এই ঘটনার জন্য দায়ী কে, সেটা নিয়ে এখন খোদ বিএনপির মধ্যেই কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে, বিএনপির নেতারা একে অপরকে সন্দেহের বানে বিদ্ধ করছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, ‘দলের মহাসচিবসহ নির্বাচনপন্থীদের উস্কানি এবং ইন্ধনেই পুলিশ এই অক্রমণের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এই ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের মধ্যে নির্বাচন বিরোধী হিসেবে পরিচিত মির্জা আব্বাসকে আসামি করে একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুটি স্রোত কাজ করছিল। এরমধ্যে মির্জা আব্বাস এবং রুহুল কবির রিজভীরা ছিলেন নির্বাচন বিরোধী। অপরদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জমির উদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমদ, এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা ছিলেন নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন, ‘নির্বাচন বিরোধীদেরকে কোণঠাসা করতেই গতকালের এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’
গতকালের ঘটনায় বিএনপির একাধিক নেতা ৪ টি পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন।
চারটি পর্যবেক্ষণের প্রথমটি হচ্ছে, সকাল থেকেই বিএনপি অফিসের সামনে মিছিল চলছিল, তখন পুলিশ কোনো রকমের বাধা দিল না। পুলিশ স্বাভাবিক অবস্থাতেই তাঁর দায়িত্ব পালন করছিল। যেই মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে মিছিল আসলো, তখন পুলিশ বাধা দিল কেন? বিএনপি কার্যালয়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুপুর একটায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দলীয় কার্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দুপুর সাড়ে ১২ টায় তিনি টেলিফোন করে বলেন যে, তিনি দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারছেন না।’ বিএনপির একাধিক নেতা প্রশ্ন করেছেন, মির্জা ফখরুল কি আগে থেকেই জানতেন এরকম একটা সহিংস ঘটনা ঘটবে?
দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টেলিফোন করে পল্টনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। মির্জা ফখরুল পুলিশের কর্মকর্তাদের পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের দিকে নজর রাখতে বলেন। তাহলে কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আগে থেকেই জানতেন, এরকম একটা ঘটনা ঘটবে? সেই জন্যেই কি তিনি আগে থেকেই পুলিশকে পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে নজর রাখতে বলেছিলেন?
তৃতীয় পর্যবেক্ষণ: মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কারণে তিনি এখন পলাতক। বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মির্জা আব্বাস সবসময় একটা ভূমিকা রাখতো। বিশেষ করে ঢাকার আসনগুলো কাকে কোন আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে, এগুলো নির্ধারণে মির্জা আব্বাসের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চাইছিলেন যে, এই কর্তৃত্বটা শুধু তাঁর একার থাকবে। তিনি ঐক্যের স্বার্থে এবং দলের প্রয়োজনে ঢাকার আসনগুলোর একটি বড় অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দিতে চাইছিলেন। সেখানে তাঁর বড় বাধা ছিলেন মির্জা আব্বাস। এ ঘটনায় মধ্যে দিয়ে মির্জা আব্বাস এখন পলাতক জীবনে চলে যাওয়ায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠক, মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মির্জা ফখরুলের একক কর্তৃত্বে হবে। তিনি এখন যেভাবে যাকে চাইবেন তাকেই মনোনয়ন দিতে পারবেন। এজন্যই কি এই হামলায় ঘটনা ঘটানো হয়েছিল?
চতুর্থ পর্যবেক্ষণ: বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় যে সংবাদ সম্মেলন করলেন, সংবাদ সম্মেলনে তিনি হেলমেট পড়া যে যুবকের ছবি দেখিয়ে বললেন এরা কারা? এই ছবিগুলো এত দ্রুত সময়ে তিনি কোথায় থেকে পেলেন? তাহলে নিশ্চয়ই ঘটনাস্থলে তাঁর লোকজন ছিল। এরকম একটা ঘটনা ঘটানো হবে এবং মির্জা আব্বাসকে দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরানোর জন্যই কি এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না এই প্রশ্নও এখন উঠেছে বিএনপির মধ্যে।
বিএনপির অনেকেই মনে করেন, সরকারের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্পর্ক অনেক ভালো। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মির্জা ফখরুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও নানা কারণে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন। কাজেই এ ঘটনায় পুলিশকে হঠাৎ আক্রমণ করা এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করার কাজে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশকে ব্যবহার করেছেন কি না, সেই প্রশ্নও বিএনপির মধ্যে উঠেছে।
গতকাল বিএনপি অফিসের সামনের সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির একপক্ষ এখন আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছেন। তবে যে পক্ষ বা যারাই নির্বাচনকে ঘিরে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য যে মহৎ নয় সেটা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। নির্বাচন ঘিরে অতীতের মতো বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও সহিংসতা, মারামারি, হানাহানি, পেট্রোল-বোমা, আগুন সন্ত্রাস ফিয়ে আসুক তা কারও কাম্য নয়।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
সরকারের
পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন
দাবিতে আগামীর আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে একমঞ্চে চায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন
আন্দোলনের অন্যতম মিত্র ১২ দলীয় জোট।
তাদের পরামর্শ, বিএনপির বাইরে সাংগঠনিকভাবে জামায়াত শক্তিশালী। তাই মাঠের আন্দোলন
সফল করতে হলে জামায়াতসহ
বাম-ডান ও ইসলামী
ঘরানার সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে।
তারা বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে একমঞ্চ থেকে আন্দোলন পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমরা তখন একমঞ্চে প্রায় চলেও এসেছিলাম। কিন্তু যুগপতেরই দুএকটি শরিক দল ও জোটের বিরোধিতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ২৮ অক্টোবর জামায়াতও মাঠে ছিল। কিন্তু পৃথকভাবে তারা কর্মসূচি করেছে। ওইদিন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
রোববার (১২ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তাদের এমন পরামর্শ দেন ১২ দলের কয়েকজন নেতা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর একদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও যুগপৎভাবে কোনো কর্মসূচি মাঠে গড়ায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে মিত্রদের পরামর্শ নিতে তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এ দিন ১২ দলের পর একই স্থানে এলডিপির সঙ্গেও বৈঠক করেছে দলটি।
গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর ১২ ও ১৩ জানুয়ারি যুগপতের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের ভার্চুয়ালি সিরিজ বৈঠক হয়। যেটাকে তখন বিএনপি ও শরিকদের পক্ষ থেকে ‘সৌজন্য বৈঠক’ বলা হয়েছিল। সেখানে সরকারি নানামুখী চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও নির্বাচনে না যাওয়া এবং যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত রাখায় বিএনপির পক্ষ থেকে মিত্রদের সাধুবাদ জানানো হয়।
জানা
গেছে, বৈঠকের শুরুতে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের
বর্তমান অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে
আন্দোলনের নতুন কী কর্মসূচি
নেওয়া যায়- সে ব্যাপারে
১২ দল নেতাদের কাছে
পরামর্শ চাওয়া হয়। তখন জোটের
কয়েকজন নেতা নির্বাচন বর্জন
করে যুগপৎ কিংবা যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা সবাইকে নিয়ে
ঈদুল আজহার পর ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে
নামার পরামর্শ দেন। এ সময়
বিক্ষিপ্তভাবে দুএকজন নেতা ঢাকায় একমঞ্চ
থেকে সমাবেশ এবং ঢাকার বাইরে
সব মহানগরে একই আদলে সমাবেশের
মতো কর্মসূচির প্রস্তাব করেন।
বৈঠক
শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১২
দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। এটা
আমাদের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার
অংশ। আমরা মাঝে মাঝেই
বসি, আলোচনা করি। দেশে দ্রব্যমূল্যের
ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে মানুষের
দুর্ভোগ, দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা, দুর্নীতি-অনাচার, সীমান্ত সংকট, সীমান্তে মানুষ হত্যা, সীমান্তে অনুপ্রবেশসহ নানা বিষয় নিয়ে
আমরা আলোচনা করেছি।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, আগামীতে আন্দোলন কীভাবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা চেয়েছে। আমরা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট পড়েছিল ৩৬.১৮ শতাংশ।
আগামী তিন ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রচার আরো জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে
নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রবিবার (১২ মে) ইসি সূত্র জানায়, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর
আলম ইসির মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মাসিক সমন্বয় সভায় এই নির্দেশনা
দেন।
ওই সভায় ইসি সচিব বলেন, ইসির মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ
দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
প্রথম পর্যায়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত
করে পরবর্তী পর্যায়ের নির্বাচন আরো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট
সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এ ছাড়া মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী
কার্যক্রম আরো গতিশীল করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয় সভায়।
উল্লেখ্য, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬.১৮
শতাংশ। এর মধ্যে ১১৭ উপজেলায় ব্যালটে ভোট হয়। ভোটের হার ৩৭.২২ শতাংশ। ২২ উপজেলায় ভোট
হয় ইভিএমে, ভোটের হার ৩১.৩১ শতাংশ।
এদিকে, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৯ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী এক হাজার ৮২৮
জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান
পদে ৫২৯ জন।
এই ধাপের ভোট হবে আগামী ২১ মে। তৃতীয় ধাপের ভোট ২৯ মে। এই ধাপের
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল। আজ সোমবার প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ
দেওয়া হবে।
আর চতুর্থ ধাপে ৫৬ উপজেলায় ৭৩৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৭২, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৬ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯৯ জন রয়েছেন। এই ধাপের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। ভোট হবে ৫ জুন।
নির্বাচন কমিশন ইসি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবশেষে শরিকদের অভিমান ভাঙাতে উদ্যোগী হয়েছে। শিগগিরই শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ মে গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
নির্বাচন এলেই গুরুত্ব বাড়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের। নির্বাচন শেষে কমতে থাকে জোটের রাজনৈতিক তৎপরতা। বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলগুলোর ভরাডুবির পর প্রশ্ন উঠেছে ২০ বছর বয়সী এই জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও। প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়নি এমন অভিযোগ শরিক দলের নেতাদের।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় আলাদা কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট আছে। আমি খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে বৈঠক করব। মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে ভিত্তি করে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১৪-দলীয় জোট। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার-দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে এ জোট।
দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করা এই জোটের শরিক দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। এর মধ্যে তিনটি দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। এরা হলো- গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র।
শরিকদের মধ্য থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চারজন, দশম সংসদে সংরক্ষিত দুজনসহ ১৩ জন, একাদশ সংসদে আটজন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুজনে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের রেজাউল করিম তানসেন না জিতলে এবার মুখ রক্ষা করাই কঠিন হতো ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের।
আওয়ামী
লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, টানা ১৫ বছর
ক্ষমতায় থেকেও সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি করতে পারেনি শরিক
দলগুলো। আওয়ামী লীগের ওপর অত্যধিক নির্ভরতায়
কমে গেছে দলগুলোর জনভিত্তি।
প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ছোট দলের বড়
নেতাদের ভাবমূর্তি। সব মিলিয়ে জোটের
শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের জন্য পরিণত হয়েছে
বোঝায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি তাদের পুরনো ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা নতুন জোট গঠন করে রাজপথে নামলে আওয়ামী লীগও আবার ১৪-দলীয় জোট বা মহাজোট সক্রিয় করবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে দেখলে ১৪ দলের তৎপরতা দৃশ্যমান করবে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জোটের রাজনীতিকে চাঙা করে তুলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নেত্রী বৈঠকের কথা বলেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি।
জোটের মুখপাত্র, সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু গণমাধ্যকে বলেন, জোটের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। জোট আছে, থাকবে। নেত্রী সময় দিলেই আমরা শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন দাবিতে আগামীর আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে একমঞ্চে চায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের অন্যতম মিত্র ১২ দলীয় জোট। তাদের পরামর্শ, বিএনপির বাইরে সাংগঠনিকভাবে জামায়াত শক্তিশালী। তাই মাঠের আন্দোলন সফল করতে হলে জামায়াতসহ বাম-ডান ও ইসলামী ঘরানার সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে
আগামী ১৪ ও ১৫ মে দুদিনের ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে তাঁর। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম গুঞ্জন বা এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করলেও এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিতে তেমন কোন উত্তেজনা বা আতঙ্কও নেই যেমনটি ছিল নির্বাচনের আগে আগে। তবে ডোনাল্ড লুর সফর ঘিরে নতুন করে আশার বুক বাঁধছে বিএনপি। রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দলটির মধ্যে। এরই মধ্যে বিএনপি গত শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ করেছে। পাশাপাশি সরকারবিরোধী দেশের সব সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করেছে দলটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ নিরসন না হতেই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভক্তি বাড়ছে, বাড়ছে সহিংসতা। এবার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি দলটি কেন্দ্রীয়ভাবেও কাউকে সমর্থন দেয়নি। এর ফলে নির্বাচনে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কোন মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু সে নির্দেশনা মানছেন আওয়ামী লীগের কেউই। বরং মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পরিবারের সদস্য বা মাই ম্যানদের পক্ষে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। এর ফলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। আর যার ফলে বাড়ছে কোন্দল, বাড়ছে সহিংসতা। সংসদ নির্বাচনের পর পরই দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে যেমন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই রকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।