ইনসাইড পলিটিক্স

কে বাংলাদেশের মাহাথির?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/11/2018


Thumbnail

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠিত হয়েছিল তখন একে বলা হয়েছিল মাহাথির ফর্মুলা। আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির মোহাম্মদ অবসরে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি তাঁর দলের অনাচার, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং নিজেরই এক সময়ের শীষ্য নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। আর এটি করতে গিয়ে মাহাথির তাঁর সময়ের প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলান। কারান্তরীণ আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় তাঁদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল যে জয়ী হলে দুই বছর মাহাথির প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, এর মধ্যেই তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক মেরুকরণ হলো, ড. কামাল হোসেনের কাছে বিএনপির নেতারা গিয়ে ধরনা দিলেন। তখন এটাকে ‘মাহাথির ফর্মুলা’বলা হলো। ‘মাহাথির ফর্মুলা’ বলা হচ্ছিলো কারণ ড.কামাল হোসেনের যে দলের মাধ্যমে রাজনীতিতে উত্থান  সেই দলের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং খালেদা জিয়াকে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যে তিনি জনপ্রিয় এবং এজন্য তাঁকে আটক করে রাখা হয়েছে।  সরকারের নানা অনিয়ম, মানবতা বিরোধী কাজ, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে মাহাথির হিসেবে ড. কামাল হোসেনকে প্রতিস্থাপন করা হলো। অবশ্য ভিতরে ভিতরে তাঁদের যে যোগসাজশ এবং সমঝোতা সেখানে বলা হয়েছে যে ঐক্যফ্রন্ট যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে ড. কামাল হোসেন দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং তিনি তখন খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। তারপর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন।

কিন্তু, আমরা যদি মালয়েশিয়ার সঙ্গে তুলনা করি, মাহাথির মোহাম্মদ ছিলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক, প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর হাত ধরেই মালয়েশিয়ায় একটা বিপ্লব ঘটেছিল এবং তুমুল জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে তিনি অবসর নিয়েছিলেন। ড. কামাল হোসেনের ক্ষত্রে ঘটনাটা তা নয়। ড. কামাল হোসেন রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া একটি আসনে নির্বাচনে জয়ী হওয়া ছাড়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কোনো সাফল্য নেই। এরপর তিনি তিনটি নির্বাচন করেছেন, তবে তিনবারই তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কাজেই ফর্মুলা যেটাই হোক না কেন, ড. কামাল হোসেন মাহাথির না, তাঁর রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি জাতির পিতার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে অর্ধেক সময় ছিলেন আইনমন্ত্রী, অর্ধেক সময় ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাতির পিতার মৃত্যুর পরও তাঁর কোনো বলিষ্ঠ ভূমিকাও চোখে পড়েনি।

আবার যে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে খালেদা জিয়ার তুলনা করা হচ্ছে সেই তুলনাও ভিত্তিহীন। আনোয়ার ইব্রাহিম মাহাথিরের দল করত এবং মাহাথির তাঁকে উত্তরাধিকার শীষ্যের মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং তাঁকে উপপ্রধানমন্ত্রীও করেছিলেন। কাজেই আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গেও খালেদা জিয়ার তুলনা করাটাও অবান্তর। বরং রাজনীতিতে এখন যে ঘটনা প্রবাহগুলো চলছে সে ঘটনা প্রবাহে শেখ হাসিনাকেই এখন মাহাথিরের সঙ্গে তুলনা করা যায়।  কারণ: 

১. মাহাথির যেমন ব্যর্থ, একটি অনুন্নত রাষ্ট্র থেকে মালয়েশিয়াকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছিলেন, দেশটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন, একই ভাবে শেখ হাসিনাও বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা, দারিদ্রের রাষ্ট্র থেকে, মোটামুটি ব্যর্থ একটি রাষ্ট্র থেকে আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।

২. মাহাথির যখন মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তখন তাঁকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক মালয়েশিয়ায় অর্থায়ন বন্ধ করেছিল এবং মাহাথিরও মালয়েশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছিলেন।

৩. মাহাথির যেমন একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও সেদেশে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিলেন ঠিক সেরকমক ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।

৪. মালয়েশিয়ায় যেমন মাহাথিরের এত উন্নয়ন এবং ভালো কাজের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মাহাথির ফোবিয়ায় ভুগত এবং মাহাথির কঠোর, নিষ্ঠুর, বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি গ্রহণ করেন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই ইত্যাদি নানারকম সমালোচনা ও অভিযোগ করত  পশ্চিমা বিশ্ব। ঠিক তেমনি ভাবে ইদানীংকালে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করার চেষ্টা করে কেউ কেউ। কাজেই মাহাথির যেমন শেষ বিচারে দলের উর্ধ্বে উঠে গিয়েছিলেন, দলের চেয়ে তাঁর একক জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী ছিল, মালয়েশিয়ায় তিনি অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিলেন ঠিক তেমনি ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দলের উর্ধ্বে উঠে গেছেন। যে কোনো বিচারে, যে কোনো জরিপে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি এবং দলের উর্ধ্বে তিনি বাংলাদেশের একজন অবিসংবাদিত নেতা হয়েছেন। শেখ হাসিনার চরম শত্রুও বিশ্বাস করে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে ধারা তিনি ছাড়া তা ব্যাহত হতেই পারে। বিশেষ করে সম্প্রতি রাজনৈতিক সংলাপ এবং কয়েকটি ঘটনাতে তিনি একটি বিষয় প্রমাণ করেছেন, দলের উর্ধ্বে উঠে একজন রাষ্ট্রনায়োকোচিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। মাহাথির যেমন, জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন সেরকম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঘোষণা করেছেন যে,  ‘এই নির্বাচনই আমার শেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনের পরে আমি অবসরে যাবো।’ মাহাথির যেমন রাজনীতিতে অবসরের পরে জাতির বিবেক এবং অভিভাবক হিসেবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন, সবকিছুর উপর নজর রেখেছেন, যখন প্রয়োজন হয়েছে তিনি আবার ফিরে এসেছেন। তেমনি, শেখ হাসিনাও এই নির্বাচনের পর টুঙ্গিপাড়ায় চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। অবশ্য, চলে গেলেও তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবেই থাকবেন বলে আশা সবার।

ড. কামাল হোসেন নাকি শেখ হাসিনা এই দুই বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষকে যদি নির্বাচন করতে বলা হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকেই মাহাথির হিসেবে নির্বাচন করবে। মাহাথিরের মতই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাজসিক একটা অবসর নিবেন আগামী মেয়াদের দায়িত্ব পালন শেষে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত অভিভাবক হিসেবেই তিনি থাকবেন সবসময়। 

বাংলা ইনসাইডার/এসআর/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭