ইনসাইড থট

নিরাপত্তা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর সফর সংখ্যা কমবে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/12/2018


Thumbnail

হাল ছাড়েনি বিএনপি। যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা নিয়েই ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের নামে মাঠে থেকে সরকার পতনের চেষ্টা জারি রেখেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চাদরে মোড়া বিএনপি-জামায়াত। আপাতদৃষ্টিতে সরকারকে নির্বিকার মনে হলেও নির্বাচনের সময়ে হিংসা, সন্ত্রাস ও অরাজকতায় মেতে ওঠার পরিকিল্পনার কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে আসায় চিন্তা বেড়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের। কারণ এই নির্বাচনে একাত্তরের ঘাতক এবং পঁচাত্তরের হত্যাকারীরা হাত মিলিয়েছে। যাদের মাথার মণি তারেক রহমান। তার সন্ত্রাসী ভূমিকা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা তারেক রহমানের ওপর চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির জন্য ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ জানানোর জন্য বলেছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সফরের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয় অনিবার্য জানলে তারেক রহমানের সন্ত্রাসী দল কী করতে পারে ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা মনে রাখলেই তা অনুমান করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।   

গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মহল্লার বড় বড় মসজিদ থেকে একযোগে আচমকা মিছিল বের করে অচল করার পরিকিল্পনা ছিল জামায়াত-বিএনপি’র। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার সকালেই জামায়াত-বিএনপি’র পরিকিল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যায়। এর পরে তারা গুরুত্বপূর্ণ সব মসজিদের সামনে পুলিশ মোতায়েন করলে জামায়াত-বিএনপি’র পরিকিল্পনা ভেস্তে যায়। এসব ষড়যন্ত্রে জামায়াত-বিএনপি’র অনেক মহিলা নেতা কর্মীকে সম্পৃক্ত করা হয় যার ফলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আর প্রমাণের ভিত্তিতে কয়েকজনকে আটক করা হয়। চক্রান্তে যুক্ত কয়েকজনকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সারা দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশিও চালানো হয়েছে।    

গোয়েন্দা সূত্র আর দাবী করেছে যে, ভোটের আগে হিংসা, খুনোখুনি ও অরাজকতা তৈরির চক্রান্তের বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে। তারা আরও নিশ্চিত হয়েছেন যে, এসব প্রক্রিয়ায় টাকা ও পরামর্শ দিয়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই যুক্ত রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচনী প্রচারকে রক্তাক্ত করা ছাড়াও জনপ্রিয় কিছু মানুষের ওপর জঙ্গি হামলার চক্রান্তের খবর পেয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে অন্য একটি খবর। তা হচ্ছে বাম ঘরানার কিছু গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রীকে টাকার বিনিময়ে কিনে তাদের ব্যবহার করে গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা। গোয়েন্দা সূত্রে জানায় যে, এই চক্রান্তের অনেকটাই এখন তাঁদের কাছে স্পষ্ট। আশুলিয়ায় সারি সারি গার্মেন্টস কারখানার লক্ষাধিক কর্মীর প্রায় সকলেই মহিলা। ৩০ তারিখে নির্বাচনের ৪-৫ দিন আগে তেমনই দু’একজনকে ‘ধর্ষণ ও খুনের নাটক’ সাজিয়ে বাকি শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় চক্রান্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্র আর দাবি করে যে, বিএনপির কয়েকজন নেতা ও সরকার-বিরোধী এক বাম শ্রমিক নেতা এই চক্রান্তে যুক্ত।

বহুল প্রচারিত একটা বাংলা দৈনিকের খবরে বলা হয় যে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীরও বেশ প্রভাব রয়েছে। শ্রমিকদের রাস্তায় নামানোর বিষয়ে তারাও তৎপর হয়েছে। কয়েক মাস আগে পরিবহনে শৃঙ্খলার দাবিতে স্কুল পড়ুয়ারা রাস্তায় নেমে বেশ কয়েক দিন জনজীবন স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সেই ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ ছিনতাই করে শিবির-ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা ছিল অনেক বেশী। গোয়েন্দাদের দাবি, গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিয়েও সেই ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’-এর কায়দায় কাজটি করিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ধূলিস্যাৎ করতে চাইছে এই চক্রান্তকারীরা।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পরে নামী লেখক, শিল্পী বা অভিনেতাদের ওপর হামলার তথ্য মিলেছে। পুলিশের দাবি ঢাকার বনানীর একটি নির্মাণধীন বাড়ি থেকে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পরে তারা স্বীকার করেছে, জনপ্রিয় অভিনেতা খিজির হায়াৎকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের পাঠানো হয়েছিল। ‘মি. বাংলাদেশ’ নামে জঙ্গিবাদ-বিরোধী একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করায় খিজিরের নাম হিটলিস্টে তুলেছে জঙ্গি নেতারা। হামলার আগে তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল এই দুই জঙ্গি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর পোস্টারে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে না। জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও তাদের বিশেষ বাহিনীকে চাঙ্গা রাখতে এটা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের অনেক নেতা নাখোশ হয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যতই বিএনপি জোটের শরিক দল হোক না কেন, তাদের একটি দলীয় আদর্শ আছে। তারা প্রতীক হারালেও রাজনৈতিক আদর্শ হারাইনি। আর নির্বাচনে জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়েছে কেবল লন্ডনের বিশেষ নির্দেশে জামাতের তথা ২০ দলীয় জোটের স্বার্থে, কোন একটি দলের স্বার্থে নয়। এতে বিএনপিরও লাভ আছে। তাই পোস্টার-ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি ব্যবহার করা না করা খুব নগণ্য বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

একজন বিখ্যাত কলামিস্টের কথা দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন যে, ‘একাত্তরের অসমাপ্ত যুদ্ধকে সমাপ্ত করবে ২০১৮ সালের নির্বাচন যুদ্ধ। জুলিয়াস সিজারের বন্ধু সেজে তাকে হত্যা করেছিল বিশ্বাসঘাতক ব্রুটাস। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু অনুসারী সেজে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে কয়েকজন ব্রুটাস বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দলের মঞ্চে গিয়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনাশের জন্য। একদিকে দেশে চলছে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই স্লোগান, অন্যদিকে বিদেশে বসে চলছে `কালনেমির লংকাভাগের` পরিকল্পনা’। বিজয়ের এই মাসে আমরা যেন দিশেহারা না হই, কারণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম’।  

লেখক: সায়েদুল আরেফিন

তথ্যঋণঃ অনলাইন পোর্টাল, সোশ্যাল মিডিয়া, অন্যান্য

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭