ইনসাইড থট

নিরাপত্তা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর সফর সংখ্যা কমবে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২:২৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮


Thumbnail

হাল ছাড়েনি বিএনপি। যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা নিয়েই ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের নামে মাঠে থেকে সরকার পতনের চেষ্টা জারি রেখেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চাদরে মোড়া বিএনপি-জামায়াত। আপাতদৃষ্টিতে সরকারকে নির্বিকার মনে হলেও নির্বাচনের সময়ে হিংসা, সন্ত্রাস ও অরাজকতায় মেতে ওঠার পরিকিল্পনার কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে আসায় চিন্তা বেড়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের। কারণ এই নির্বাচনে একাত্তরের ঘাতক এবং পঁচাত্তরের হত্যাকারীরা হাত মিলিয়েছে। যাদের মাথার মণি তারেক রহমান। তার সন্ত্রাসী ভূমিকা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা তারেক রহমানের ওপর চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির জন্য ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ জানানোর জন্য বলেছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সফরের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয় অনিবার্য জানলে তারেক রহমানের সন্ত্রাসী দল কী করতে পারে ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা মনে রাখলেই তা অনুমান করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।   

গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মহল্লার বড় বড় মসজিদ থেকে একযোগে আচমকা মিছিল বের করে অচল করার পরিকিল্পনা ছিল জামায়াত-বিএনপি’র। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার সকালেই জামায়াত-বিএনপি’র পরিকিল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যায়। এর পরে তারা গুরুত্বপূর্ণ সব মসজিদের সামনে পুলিশ মোতায়েন করলে জামায়াত-বিএনপি’র পরিকিল্পনা ভেস্তে যায়। এসব ষড়যন্ত্রে জামায়াত-বিএনপি’র অনেক মহিলা নেতা কর্মীকে সম্পৃক্ত করা হয় যার ফলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আর প্রমাণের ভিত্তিতে কয়েকজনকে আটক করা হয়। চক্রান্তে যুক্ত কয়েকজনকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সারা দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশিও চালানো হয়েছে।    

গোয়েন্দা সূত্র আর দাবী করেছে যে, ভোটের আগে হিংসা, খুনোখুনি ও অরাজকতা তৈরির চক্রান্তের বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে। তারা আরও নিশ্চিত হয়েছেন যে, এসব প্রক্রিয়ায় টাকা ও পরামর্শ দিয়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই যুক্ত রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচনী প্রচারকে রক্তাক্ত করা ছাড়াও জনপ্রিয় কিছু মানুষের ওপর জঙ্গি হামলার চক্রান্তের খবর পেয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে অন্য একটি খবর। তা হচ্ছে বাম ঘরানার কিছু গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রীকে টাকার বিনিময়ে কিনে তাদের ব্যবহার করে গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা। গোয়েন্দা সূত্রে জানায় যে, এই চক্রান্তের অনেকটাই এখন তাঁদের কাছে স্পষ্ট। আশুলিয়ায় সারি সারি গার্মেন্টস কারখানার লক্ষাধিক কর্মীর প্রায় সকলেই মহিলা। ৩০ তারিখে নির্বাচনের ৪-৫ দিন আগে তেমনই দু’একজনকে ‘ধর্ষণ ও খুনের নাটক’ সাজিয়ে বাকি শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় চক্রান্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্র আর দাবি করে যে, বিএনপির কয়েকজন নেতা ও সরকার-বিরোধী এক বাম শ্রমিক নেতা এই চক্রান্তে যুক্ত।

বহুল প্রচারিত একটা বাংলা দৈনিকের খবরে বলা হয় যে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীরও বেশ প্রভাব রয়েছে। শ্রমিকদের রাস্তায় নামানোর বিষয়ে তারাও তৎপর হয়েছে। কয়েক মাস আগে পরিবহনে শৃঙ্খলার দাবিতে স্কুল পড়ুয়ারা রাস্তায় নেমে বেশ কয়েক দিন জনজীবন স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সেই ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ ছিনতাই করে শিবির-ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা ছিল অনেক বেশী। গোয়েন্দাদের দাবি, গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিয়েও সেই ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’-এর কায়দায় কাজটি করিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ধূলিস্যাৎ করতে চাইছে এই চক্রান্তকারীরা।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পরে নামী লেখক, শিল্পী বা অভিনেতাদের ওপর হামলার তথ্য মিলেছে। পুলিশের দাবি ঢাকার বনানীর একটি নির্মাণধীন বাড়ি থেকে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পরে তারা স্বীকার করেছে, জনপ্রিয় অভিনেতা খিজির হায়াৎকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের পাঠানো হয়েছিল। ‘মি. বাংলাদেশ’ নামে জঙ্গিবাদ-বিরোধী একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করায় খিজিরের নাম হিটলিস্টে তুলেছে জঙ্গি নেতারা। হামলার আগে তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল এই দুই জঙ্গি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর পোস্টারে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে না। জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও তাদের বিশেষ বাহিনীকে চাঙ্গা রাখতে এটা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের অনেক নেতা নাখোশ হয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যতই বিএনপি জোটের শরিক দল হোক না কেন, তাদের একটি দলীয় আদর্শ আছে। তারা প্রতীক হারালেও রাজনৈতিক আদর্শ হারাইনি। আর নির্বাচনে জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়েছে কেবল লন্ডনের বিশেষ নির্দেশে জামাতের তথা ২০ দলীয় জোটের স্বার্থে, কোন একটি দলের স্বার্থে নয়। এতে বিএনপিরও লাভ আছে। তাই পোস্টার-ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি ব্যবহার করা না করা খুব নগণ্য বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

একজন বিখ্যাত কলামিস্টের কথা দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন যে, ‘একাত্তরের অসমাপ্ত যুদ্ধকে সমাপ্ত করবে ২০১৮ সালের নির্বাচন যুদ্ধ। জুলিয়াস সিজারের বন্ধু সেজে তাকে হত্যা করেছিল বিশ্বাসঘাতক ব্রুটাস। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু অনুসারী সেজে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে কয়েকজন ব্রুটাস বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দলের মঞ্চে গিয়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনাশের জন্য। একদিকে দেশে চলছে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই স্লোগান, অন্যদিকে বিদেশে বসে চলছে `কালনেমির লংকাভাগের` পরিকল্পনা’। বিজয়ের এই মাসে আমরা যেন দিশেহারা না হই, কারণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম’।  

লেখক: সায়েদুল আরেফিন

তথ্যঋণঃ অনলাইন পোর্টাল, সোশ্যাল মিডিয়া, অন্যান্য

 

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আজকের বাংলাদেশের আরেক নাম শেখ হাসিনা


Thumbnail

১৭ মে বাংলাদেশের জন্য অনন্য দিন। ঘুরে দাঁড়াবার দিন। সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনার দিন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার দিন। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার নির্দেশে এবং তাঁর নেতৃত্বে ৯ মাসের এক বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর থেকেই তিনি আরেক যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথপরিক্রমা শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য তিনি এক রূপকল্প নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই রূপকল্পের পথ ধরে উন্নয়নের অভিযাত্রায় যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু একজন নেতাকে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন, আমাদের অভিযাত্রা। বাংলাদেশের অস্তিত্বই মুখ থুবড়ে পড়েছিল ওই নারকীয় তাণ্ডবের মাধ্যমে। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানো এবং একটি ব্যর্থ, পরনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের লক্ষ্য। যেন বাংলাদেশের বিজয় অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই খুনি মোশতাক, জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশকে উল্টো পথেই নিয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের গণতন্ত্র হয়েছিল ভূলুণ্ঠিত, আইনের শাসন নির্বাসিত হয়েছিল, জনগণের অধিকার ছিল না। দারিদ্র্য-ক্ষুধা এক সর্বনাশা অক্টোপাস বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছিল। ঠিক ওই সময় আমাদের জীবনে আসে ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিনে জাগরণের মন্ত্র নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। জনগণ যখন অধিকারহীন, বুটের তলায় যখন গণতন্ত্র পিষ্ট, ঠিক সেই সময় জনগণের অধিকার আদায় এবং জাতির পিতার স্বপ্নপূরণের ডাক দিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন তিনি। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার এক সাহসী সংগ্রাম শুরু করেন।

স্মরণ করা যেতে পারে, পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করেছিলেন। এটি বোধহয় সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব এক লীলা। তিনি যদি দেশে থাকতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশের এই অবস্থা থাকত না। বাংলাদেশ এতদিনে একটি বর্বর, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। দেশে না থাকার কারণে জাতির পিতার দুই কন্যা বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন। আর তাঁরা বেঁচে যাওয়ার কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। দার্শনিক শেখ হাসিনাকে এ সময় দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়েছে। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান দেশে নারকীয় অবস্থা তৈরি করেছিলেন। স্বৈরাচারী একনায়ক জানতেন শেখ হাসিনা যদি দেশে ফিরেন, তাহলে জনগণ জেগে উঠবে। জনগণের এই জাগরণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য স্বৈরাচারী একনায়ক জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে না দেওয়ার সব প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু জাতির পিতার কন্যা তিনি, ভয় তাঁর রক্তে নেই। আর এ কারণেই জিয়াউর রহমানের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রকে পায়ে দলে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল বাঙালির জাগরণের নব সূচনার দিন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরও তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাস্তার ওপর বসে তিনি পিতা-মাতা-ভাইদের জন্য দোয়া করেছেন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের ১৭ এই ৪৩ বছরের বাংলাদেশের যে পথযাত্রা সেই পথযাত্রার একমাত্র নায়ক হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই ৪৩ বছরের বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন- সব আবর্তিত হয়েছে একজনকে ঘিরে। তিনি হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশে তিনি একমাত্র জনগণের নেতা। এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশের যে রূপকল্প এবং বাংলাদেশের যে সংগ্রামের ইতিকথা সেটির প্রধান চরিত্র হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল- একাত্তর এবং পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি, তারা হলেন এই ৪৩ বছরের ইতিহাসে নতুন নব্য রাজাকার, নব্য ভিলেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আমি মনে করি, বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে একটি পরাধীন, একটি পরনির্ভর, একটি হতাশাগ্রস্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেজন্য যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা সব রকমের চেষ্টা করেছিলেন। আর দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর থেকে যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রাম হলো সোনার বাংলা পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম করার পথটা খুব কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে প্রতি মুহূর্তে এবং প্রতিটি পদে পদে। এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, বাংলাদেশের যা কিছু কৃতিত্ব, বাংলাদেশের যা কিছু প্রাপ্তি সবই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। তিনি এই ৪৩ বছরে বাংলাদেশকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখানে বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশকে এখন কল্পনাও করা যায় না। আর ১৯৮১ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন বাংলাদেশ কেমন ছিল? রাতে কারফিউ ছিল, কারাগারে ছিল হাজার হাজার বন্দি, বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা হতো। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ছিল না। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসন। আর এ কারণেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সংগ্রামের অভিযাত্রায় তিনি স্বৈরাচারের পতনের ডাক দেন। তাঁর নেতৃত্বেই মূলত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু একটি নির্বাচিত সরকারও যে স্বৈরাচার হতে পারে ১৯৯১ সালে আমরা প্রত্যক্ষ করি, মানুষের ভোটের অধিকার আবার হরণ করার চেষ্টা করা হয়। আবার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের ওপর কালো থাবা এসে পড়ে। এ সময় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনেন। এখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের বদলে যাওয়া। দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যদি আমরা তাঁর শাসনকালকে একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব আমার বাড়ি আমার খামার, আশ্রয়ণ, কমিউনিটি ক্লিনিক, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি হাজারো কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি যেমন বৈষম্য মুক্তির গান গেয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা দিয়েছেন জনগণকে। একদিকে তিনি বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার আমূল উন্নয়নে যেমন বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার অভিযাত্রা শুরু করেন, তেমনি উন্নয়নের সুফল যেন তৃণমূল পায় তার ব্যবস্থাও করেন। সবচেয়ে বড় কথা- তিনি জনগণের ক্ষমতায়নকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তিনি শুরু করেন ‘দিন বদলের অভিযাত্রা’। ডিজিটাল বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেস। গত ১৫ বছরের উন্নয়নের বিবরণ লিখে শেষ করা যাবে না। এ সময় সামাজিক বৈষম্য কমেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নেওয়া হয়েছে যুগান্তকারী উদ্যোগ। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার রূপকার শেখ হাসিনা। তিনিই আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা। তিনি বিকল্পহীন, অপরাজিতা। ’৭৫-পরবর্তী শেখ হাসিনাই একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি জনগণের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একমাত্র নক্ষত্র।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

তেতাল্লিশ বছর আগে দেশে ফিরেছিলো বাংলাদেশ


Thumbnail

দেখতে দেখতে স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স তিপান্ন বছর পার করলো স্বাধীন বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে ঘটে গেছে নানা ঘটনা দূর্ঘটনা। আছে সাফল্যের কথা সাথে আছে বেদনার উপাখ্যান। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনর্গঠনে ব্যস্ত ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে একদল ঘাতক তাঁর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘটনাচক্রে বেঁচে যান বিদেশে অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ছুটি কাটাতে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ গিয়েছিলেন বেলজিয়ামে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল ছিল জার্মানি। উঠেছিলেন বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সংবাদটি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও ড. ওয়াজেদ জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদের মারফত পান। এমন একটি ভয়াবহ সংবাদ তাঁদের কাছে শুধু চরম একটি বিয়োগান্তাক ঘটনাই ছিল না, অবিশ্বাস্যও ছিল। বেলজিয়ামে অবস্থানকালে সবচেয়ে অমানবিক আচরণটি করেছিলেন রাষ্ট্রদূত সানাউল হক। তিনি জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ফোনে বলেন, তিনি যেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের তাঁর বাড়ি থেকে সত্বর নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেকটা জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মতোই। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে বেলজিয়াম সীমান্তে পৌঁছে দিতে রাজি হন। এক রাতেই একটি দেশের জন্মদাতার পরিবারের একান্ত ঘরের মানুষ হয়ে যান গৃহহীন। এক কথায় উদ্ভাস্তু।

জার্মানিতে অবস্থানকালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জার্মানিতে দায়িত্বরত ভারতের রাষ্ট্রদূত ওয়াই কে পুরির সহায়তায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অনুরোধ করলে ইন্দিরা গান্ধী তাতক্ষণিক রাজি হয়ে যান। আগস্টের ২১ তারিখ শেখ হাসিনা দিল্লির উদ্দেশে জার্মানি ত্যাগ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের মাতৃস্নেহে গ্রহণ করেন। নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাঁদের নাম বদলে নাম রাখা হয় মি. ও মিসেস মজুমদার। ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্য একটি গবেষকের চাকরিরও ব্যবস্থা করে দেন। শেখ হসিনা প্রথমবারের মতো ইন্দিরা গান্ধীর কাছেই ঢাকার পুরো ঘটনার বর্ণনা শুনতে পান।

শেখ হাসিনা যখন দিল্লিতে তখন জেনারেল জিয়া বাংলাদেশকে মোটামুটি মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করে ফেলেছেন। শাহ আজিজের মতো চিহ্নিত রাজাকারকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। ঘাতক আবদুল আলিমকে বানিয়েছেন মন্ত্রীসভার সদস্য। জামায়াতের প্রধান গোলাম আযমকে বাংলাদেশে আসতে দিয়েছেন। বাহাত্তরের সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না বলে একটি ধারা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে উচ্চ পদে পদায়ন করেছেন। পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান চালু করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১১ হাজার পাকিস্তানি দালাল রাজাকার—আলবদর বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে ছিল। জিয়া তাদের মুক্ত করে দেন। বাতিল করেন দালাল আইন। যে দেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগকে জিয়া পদদলিত করেছেন।

জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগের সব শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীকে জেলে পুরেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অনেকটা ছত্রভঙ্গ। এই সময় দলের হাল ধরেছিলেন শহীদ তাজউদ্দীনের স্ত্রী বেগম জোহরা তাজউদ্দীন। সঙ্গে ছিলেন দলের কিছু তরুণ নেতা। কিন্তু সবাই জানতেন দলকে নবজীবন দেওয়ার জন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর একজন উত্তরাধিকার। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেন দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা দিল্লি গিয়ে শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরিয়ে আনেন। শেখ হাসিন দেশ ফিরবেন এই সংবাদ জানাজানি হয়ে গেলে জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ি গঠিত হয় ‘শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রতিরোধ কমিটি’। নেতেৃত্বে মির্জা গোলাম হাফিজ, জিয়ার আমলের সংসদের স্পিকার। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরবেন এই সংবাদে দেশের মানুষ এমন উজ্জিবিত হয়ে উঠেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত মির্জা গোলাম হাফিজ তার কর্মসূচী বতিল করে ঘরে ঢুকে যান।

যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন, তখন তা বঙ্গবন্ধু আর বাঙালির বাংলাদেশ ছিল না। যখন ফিরলেন তখন তা পরিণত হয়ে গিয়েছিল জেনারেল জিয়া আর পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশ। যে শেখ হাসিনার ১৯৭৫ সালে বিদেশ যাওয়ার সময় সব কিছু ছিল, সেই শেখ হাসিনা যখন স্বদেশ ফিরলেন তখন তাঁর কিছু নেই। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন সর্বহারা। এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো মানুষের মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পরাটা স্বাভাবিক। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে উঠে শেখ হাসিনা মনোযোগ দিলেন আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে। জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলটি একাধিকবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু আবার সমহিমায় ফিরে এসেছে নতুন অবয়বে আর শক্তিতে। যার পিছনে ছিল দলের তৃণমূল নেতা কর্মীদের আত্মত্যাগ ।

জিয়ার বাংলাদেশে শেখ হাসিনার থাকার জায়গাও নেই। উঠলেন এক ফুফুর বাড়িতে। স্বজনদের জন্য দোয়া করতে যেতে চাইলেন ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরের নিজ বাড়িতে। অনুমতি মিলল না। সামনের রাস্তায় বসে দলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে দোয়া পড়লেন। কাকতালীয়ভাবে জিয়া এক সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৩১ মে ১৯৮১ সালে নিহত হন। তারপর জিয়ার উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের হাত ঘুরে ক্ষমতা দখল করলেন জেনারেল এরশাদ। তিনিও তাঁর পূর্বসূরির রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করার কাজে মনোনিবেশ করার দিকে নজর দিলেন। জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর কাজ সমাপ্ত করেছিলেন আর স্বৈরশাসক এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যোগ করে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্টে্র পরিণত করেন। অবস্য সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত সংবিধানে এই অন্তর্ভূক্তিকে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।

আশির দশকের মাঝামাঝি দেশের ছাত্রসমাজ প্রথমে শুরু করল এরশাদবিরোধী আন্দোলন। কিছুদিনের মধ্যে তাতে যোগ দিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এরশাদের চাতুর্য আর রাষ্ট্রীয় পেশিশক্তির সঙ্গে তারা ঠিক পেরে উঠছিল না। তখনো আওয়ামী লীগ দল গোছাতে ব্যস্ত। দলের অনেকেই এরশাদের সঙ্গে আগেই হাত মিলিয়েছে। জিয়ার সঙ্গে চলে গিয়েছিল বেশ কজন। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করা ছাড়া এই দেশে কোনো গণ—আন্দোলন সফল হয়নি। কিছুদিন পরই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের পরে এই গণ—আন্দোলন সফল হয় এবং ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এই সরকারের একমাত্র কাজ ছিল একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা আর নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর  করা।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে ভুল নির্বাচনী কৌশল, প্রতিপক্ষকে সঠিক মূল্যায়ন না করা, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপনে নির্বাচনী আঁতাত আর শেখ হসিনার নেতৃত্বের জোট থেকে আলাদা হয়ে বাকশালের পৃথক প্রার্থী দেওয়ার কারণে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করতে ব্যর্থ হয়। এই পরাজয়ে অনেকের মনোবল ভেঙে গেলেও শেখ হাসিনা তাঁর পূর্বের অভিজ্ঞতা ‘আবার ফিরে আসিব’র মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে শক্ত হাতে দলকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করেন খালেদা জিয়া। এই সরকারের একমাত্র উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল দেশের শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যেতে সংবিধান সংশোধন করা।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। তবে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন করতে তাদের প্রয়োজন হয় জাসদ (রব) আর জাতীয় পার্টির সমর্থন। সরকারের নাম হয় মহাজোট সরকার। উত্তরাধিকারসূত্রে শেখ হাসিনা পান একটি আওয়ামী লীগবিরোধী প্রশাসন আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধী দল, যারা সুযোগ পেলেই সংসদে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত আর নানা অজুহাতে হরতাল ডেকে দেশকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করত। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়াল যে ‘ক্ষমতায় নেই কেন দেশবাসী জবাব চাই’র মতো অবস্থা। দেশ শাসনে পদে পদে বাধা। শেখ হাসিনার এই মেয়াদে তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার না করার জন্য জিয়া যে ইনডেমনিটি আইন সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন তা সংসদে বাতিল করে উন্মুক্ত বিচারিক আদালতে পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার শুরু করতে পেরেছিলেন, যা ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বর্তমানে টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী। যে শেখ হসিনা ১৭ মে ১৯৮১ সালে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশে ফিরেছিলেন, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে যে শেখ হাসিনা বাবার গড়ে তোলা দলটিকে নিজের মেধা, ও  মননে গড়ে তুলেছেন, আর একাধিকবার জীবন—মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে এসেছেন, সেই শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলা নামের দেশটির একজন প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বিশ্বনন্দিত একজন রাষ্ট্রনায়কও বটে। তাঁর টানা চার  দফার মেয়াদে সফলতার সঙ্গে তিনি সামলেছেন একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিডিআর বিদ্রোহ আর খালেদা জিয়া পরিচালিত ২০১৩—১৪ সালের পেট্রলবোমার সন্ত্রাস। দেশে ফেরার পর হতে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার যার সব থেকে ভয়ঙ্করটা ছিল ২০০৪ সালে তার জনসভাস্থলে বেগম জিয়ার পূত্র তারেক রহমানের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে গ্রেনেড হামলা। আল্লাহর রহমতে সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে হতে সেই যাত্রায় শেখ হাসিনা  বেঁচে গিয়েছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সময় তিনি দলের অনেক নেতার সহায়তাও পাননি। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরাধিকার। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন সরকার গঠন করেন, তখন বাংলাদেশ ছিল একটি নিম্ন আয়ের দেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল চার শ ডলারের নিচে আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশে বর্তমান মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৮০০ ডলারের বেশী আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমনে সাত গুন। কৃষিতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রতত্তে্ব লিপ্ত, তখন এই শেখ হাসিনাই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থেই হবে। অনেকের সে কী ঠাট্টা! আজ সেই পদ্মা সেতু বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সামনের বছর তা চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পক্ষেই বলা সম্ভব এখন থেকে কোনো বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ তার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হলো সুড়ঙ্গপথ, যা ছিল মানুষের কল্পনারও বাইরে। সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু। সেই বাংলাদেশ এখন ২৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরূ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে সচল হবে রূপপুর। বাংলাদেশের উপগহ্র মহাকাশে ঘুরছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে মহাকশে যাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উপগ্রহ। জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের সিঁড়ি অতিক্রম করার পথে। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশটি উন্নত বিশে^র তালিকায় উঠে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার টানা চার মেয়দে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বাংলাদেশ এখন বিশে^ তেত্রিশতম অর্থনীতির দেশ। গত ১৫ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ।

একজীবনে একজন মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা শেখ হাসিনা করে ফেলেছেন যদিও করতে পারতেন আরো অনেক কিছু। তাঁর সামনে সব সময় পথ আগলে দাঁড়িছে দেশের সবজান্ত সর্বনাশা আমলাতন্ত্র ও কিছু চাটুকার । তাঁর সামনে এই মুহূর্তে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। এই ভয়াবহ রোগটি দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে গিলে  খেয়েছে। এটি করতে হলে যথাযথ মানুষকে যথাযথ জায়গায় পদায়ন করতে হবে। দেশটিকে অর্ধশিক্ষিত মোল্লাদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। তার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা দরকার।

শেখ হাসিনা এই দেশকে বিশ্বদরবারে একটি পরিচিতি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। শেখ হাসিনা আরো দীর্ঘায়ু হোন এই প্রার্থনা করি। দেশকে দিয়েছেন তিনি অনেক কিছু। যা দিয়েছেন তার চেয়ে বেশী কিছু চাওয়াটা হয়তো সমীচিন হবে না। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনা করে চাওয়ারমতো এখন আর কাওকে দেখা যাচ্ছে না। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নয়, দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ৭ মে ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা যখন বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন, সেদিন গণতন্ত্র দেশে ফিরেছিল। তাঁর শাসনামলের সব অর্জন ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন যোগ্য মানুষের যথার্থ মূল্যায়ন। আর জরুরী ভিত্তিতে দেশকে আমলাতন্ত্রের সর্বনাশা অভিশাপ হতে মুক্ত করা, দূর্নীতেকে সমূলে উৎপাটন করা।

জয়তু শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ।

 

লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন । ১৫ মে ২০২৪



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ডা. কাইয়ুম তালুকদার যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ এর প্রবক্তা। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উন্নয়ন কৌশল জাতির পিতার ভাবনা থেকেই উৎসারিত। অল্প সময়ের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রান্তিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষের আপন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে জনগণের বিপুল সমর্থনে আবার সরকার গঠন করেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে আর কোন অপশক্তি যেন কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করতে না পারে সেজন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করেন। বর্তমানে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার ‘বাতিঘর’ এই প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে জনগণ জমি দিচ্ছেন, সরকার ভবন করে দিচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ মানেই স্মার্ট উদ্যোগ। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার উদ্ভাবন মানেই জনবান্ধব কর্মসূচি। কমিউনিটি ক্লিনিক পাল্টে দিচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ফরিদা ইয়াসমিন, এমপি যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা স্মরণ করতে চাই সে দিনটি যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেন। সমগ্র বাঙালীর আনন্দিত উদ্বেলিত অপেক্ষার দিন। সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যাকে স্বাগত জানিয়েছে সেদিন। সেদিন তিনি দেশে আসার পর ৩২ নম্বরে ঢুকতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন একটি মিলাদ করবেন, নিজের বাড়িতে ঢুকবেন কিন্তু সেটি তিনি পারেননি। তাকে রাস্তায় বসে মিলাদ পড়াতে হয়েছে। তার ওপর এত জুলুম বাধা বিপত্তি সব কিছু পেরিয়ে আজকে তিনি বাংলাদেশের শুধু রাষ্ট্রনায়ক না, তিনি সারা বিশ্বের একজন নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না। বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রীকে সেরকম গুরুত্ব না দিলেও পারত কিন্তু তারা শেখ হাসিনাকে উপেক্ষা করতে পারেন না। কারণ তিনি শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাঁর যে স্বপ্ন, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেটি সকলের কাছে একটি বিস্ময়। আজকে পাকিস্তানিরা বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। 

ছিয়ানব্বইয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক এর মত একটি উদ্যোগ এটি কেউ চিন্তাও করেননি। এটা একেবারে শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কিন্তু সরকারের পালা বদল হবার সাথে সাথে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেছে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিলেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হওয়ার ফলে আবার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো একেবারে ভূতড়ে বাড়ির মত হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পরের বার ক্ষমতায় এসে সেই ক্লিনিকগুলো আবার চালু করেন। জাতিসংঘ এটিকে মডেল হিসেবে নিয়েছে এবং ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল। আজকের দিনে এসে বুঝা যায় যে এটি আসলে কতটা ইনোভেশন ছিল। শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ আজ অন্যান্য দেশ অনুসরণ করতে চায়। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১৮ কোটি মানুষের ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল। কিন্তু বাংলার নব্য মির্জাফরেরা জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করেছিল। ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে জীবনে বেচে যান। কোন অন্যায় না করেও পিতার অসাধারণ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত স্বাধীন বাংলাদেশে আসতে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সামরিক শাসক এবং শাসনের কারণে বরণ করতে হয়েছিল নির্বাসিত জীবন। দেশের আপামর জনগণ, আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা শেখ হাসিনার এই অকৃত্রিম ভালোবাসাকে হৃদয়ের বেরোমিটার দিয়ে মাপতে পারে তাকে বাংলায় রুখবে কে। তাইতো ঐক্যের প্রতীক হয়ে বাঙালির ভাগ্যাকাশে জ্বলজ্বলে স্বধীনতার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা নামের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার আলোর বিচ্ছরণ ঘটাচ্ছে ১৮ কোটি মানুষের প্রতিটি হৃদয়ে। বাঙালির ভাগ্য উন্নয়নের চাকা এখন সঠিক পথে সঠিক গন্তব্যের দিকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ধাবমান। 

১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন তিনি বাংলার মাটিতে পা রাখেন সেদিন তার পথ ছিল অনেকটা কন্টকাকীর্ণ। নিজের বাড়ি, নিজের পিতার বাড়িতে একজন সাধারণ নাগরিকেরও প্রবেশের অধিকার থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনার সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে, দেশের মাটিতে পা রাখার পর শেখ হাসিনার হৃদয়ের টেবিলে দু’টি ফাইল ছিল। দু’টি ফাইলের একটি ছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পিতা-মাতাসহ স্বজন হারানো মমগাথা ও তাঁর বিচার প্রসঙ্গ। অন্যটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ তথা বাঙালী জাতির ভাগ্য উন্নয়ন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে না ফিরতেন, তবে বাঙালি জাতির ভাগ্য কখনো আলোর মুখ দেখতো না। তলিয়ে থাকতো অটল অন্ধকারে। তাইতো বাংলার মানুষ সবাই ধারণ করে একটি শ্লোগান, ‘১৮ কোটি মানুষের ঠিকানা, জননেত্রী শেখ হাসিনা।’  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন