ইনসাইড গ্রাউন্ড

সেই সব মজার কাণ্ড এখন আর ঘটান না আম্পায়াররা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/01/2019


Thumbnail

ক্রিকেট যে শুধু ১১ জনের খেলা নয়, বিষয়টা আমাদের অজানা নয়। মাঠে গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যারা খেলাটিকে সার্থক ও সফল করে তোলেন, সেই আম্পায়ারদের কথাই আমাদের একদম মনে থাকে না। একটা সময় শুধু খেলোয়াড় নয়, আম্পায়াররাও দৃষ্টি আকর্ষণ করতো দর্শকের। আম্পায়ারের কীর্তি দেখার জন্য দর্শক টিভি সেট কিংবা মাঠে ছুটে যেতেন। এখন আর তেমন কেউ নেই।

ডেভিড শেফার্ডের মত এখন আরও কেউ লাফায় না!

স্কোরবোর্ডে ‘১১১’ উঠলেই দর্শকরা বা টিভি ক্যামেরা খুঁজে নিতো তাকে। শেফার্ড ছোট্ট একটা লাফ দিতেন। এটাই ছিল ডেভিড শেফার্ডের ‘ট্রেডমার্ক’। কোনো দলের স্কোর যখন ১১১ হতো, তখন তিনি মাঠে এক পা তুলে দিতেন লাফ। এর জন্য সারাবিশ্বে ছিলেন বিশেষভাবে পরিচিত। যখনই আম্পায়ারিং করতে নামতেন, দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন সবাই। এমন কেন করে তার উত্তরটাও দিয়েছিলেন মজার করে,‘এই ‘১১১’ হলো ক্রিকেটারদের জন্য অপয়া স্কোর! এই স্কোরে অনেক সময় খেলোয়াড়রা আউট হয়ে যায়। যাতে আউট না হয় সেজন্য আমি এক পা তুলে লাফ দিই’। তিনি যখন চারের সংকেত দেখাতেন তখন তার হাতকে এমনভাবে নাড়াতেন যা দেখলে মনে হতো তিনি মাঠে নাচছেন। সেটাও দর্শকদের আনন্দ দিতো।

শুধু এই লাফটির জন্য নয়, শেফার্ড ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা আম্পায়ারদের একজন বলেই তাকে এখনও শ্রদ্ধাভরে মানুষ স্বরণ করে।

বিলি বাউডেনের মত বাঁকা আঙুল নেই কারো!

কিউই আম্পায়ার বিলি বাউডেনের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। আম্পায়ারদের মধ্যে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র। কোনো ব্যাটসম্যান আউট হলে তাকে তিনি আউটের সিদ্ধান্ত দেখাতেন তর্জনী বাঁকা করে। ছয়ের সংকেতের সময়ও তার দুই হাতের দুই তর্জনী বাঁকা হত। চারের সংকেত কখনও দিতেন নেচে নেচে। আর এসবে তাকে বিনোদনের প্যাকেজ বলা হত। ‘ক্রুকেট ফিংগার’ বলা হত এটাকে। শুধু আউট কেন, বিলির সব ‘সিগন্যাল’য়েই মোটামুটি তার সেই রোগের প্রভাব আছে। আঙুল সোজা করতে পারেন না ঠিকমতো, বোলারদের জাম্পার, সুয়েটার ধরে রাখতে পারেন না বলে কোমরে বেঁধে রাখেন। অবশ্য বাঁকানো আঙুলে আউট দেবার একটা ‘দার্শনিক’ ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন বিলি। এর মানে হলো ‘অর্ধেক অর্ধেক, শেষ নয়’

‘বাকনার’ আউট হয়েছে?

এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাকনার ছিলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত। যথেষ্ট সময় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন। বোলার ও ফিল্ডাররা দীর্ঘক্ষণ তীব্র আবেদন করে শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে যখন ধরেই নিতেন ব্যাটসম্যান নটআউট, তখন ধীরে ধীরে এক রাজসিক ভঙ্গিতে আঙুল তুলতেন বাকনার। তার এই স্বতন্ত্র রাজসিক ভঙ্গি ক্রিকেটবিশ্বে স্লো ডেথ হিসেবে খ্যাতি পায়।

বিতর্ক বড্ড ভালবাসতেন হেয়ার

একের পর এক বোলিং করছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। আর একটু পরপর ডান হাত উঁচিয়ে আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার বলছেন, ‘না’। ১৯৯৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে শুরু হওয়া মেলবোর্ন টেস্টে মুরালির ক্যারিয়ারটাকেই শঙ্কার মুখে ফেলে দিয়ে তার বিরুদ্ধে চাকিংয়ের অভিযোগ এনে। অস্ট্রেলিয়ান এই আম্পায়ার উপমহাদেশের স্পিনারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগের আঙ্গুল তুলতেন। যা ছিল ক্রিকেটের আলোচিত বিষয়। উপমহাদেশের তিন সেরা বোলার ভারতের হরভজন সিং, পাকিস্তানের সাকলাইন মুশতাক এবং শ্রীলঙ্কার মুরালিধরনদের তো পিছুই ছাড়তেন না। ২০০৬ সালে ওভাল টেস্টের চতুর্থ দিনে বল টেম্পারিং করার অভিযোগ এনে পাকিস্তানকে ৫ রানের জরিমানা করেন। পাকিস্তানও প্রতিবাদ জানিয়ে চা বিরতির পর খেলায় না ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তানতে মাঠে নামায়। কিন্তু আম্পায়ররা আর মাঠে নামেননি। তারা ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করেন। বোঝেন কাণ্ডটা!

ঠাণ্ডা মাথার টোফেল

সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা মাথার পরিচয় দিয়েছেন জীবনে বহুবার। ২০০৪ থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বার হয়েছেন আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার। ১৯৯৯ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ওয়ানডে দিয়ে আম্পায়ার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ান টাফেল। ২৩ মাস পর টেস্টেও অভিষেক। বলা হয়ে থাকে সাইমন টোফেলের সিদ্ধান্ত ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মতোই নিখুঁত। আর এই নিখুঁতের জন্যই তিনি থাকতেন আলোচনায়।

শেষ কথা

এটা এমন একটা পেশা, যত সূক্ষ্মভাবে ম্যাচ পরিচালনা করুন, আপনি প্রশংসা কমই পাবেন। যদি আলোচনায় আসতে চান, তাহলে বিতর্কিত হতে হবে। এখন ভুল হয়, তবে বিতর্ক কম হয় আম্পায়ারদের নিয়ে। একটা সময় তো আম্পায়ারদের নিয়মিত কুশপুত্তলিকা দাহ হতো।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/এমআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭