ইনসাইড পলিটিক্স

সরকারের সমালোচনা করতে সুশীল প্ল্যাটফর্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/02/2019


Thumbnail

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর রাজনীতি বিরোধী দলশুন্য হয়ে গেছে। সংসদে যেমন শক্তিশালী বিরোধী দল নেই, সংসদের বাইরেও শক্তিশালী বিরোধী দলের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকমহল, দাতা দেশ ও সাহায্যকারী সংস্থা মনে করছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলশূন্যতা একটি বড় সমস্যা। গণতন্ত্রে যদি বিরোধী দল বা গোষ্ঠী না থাকে তাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না এবং গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির যে অবস্থা তাতে যে কোন একটি দলের পক্ষে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সহজসাধ্য নয়।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল এবং বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাংলাদেশে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীনপ্রায়। বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের মতো সেরকম শক্তি এখন আর বিএনপির নেই। দলটিতে নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হয়েছে, নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত। রাজনৈতিকভাবেও তারা দিগভ্রান্ত। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বাস্তবসম্মত হবে না বলে মনে করেন তারা।

একইভাবে সংসদীয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকেও ক্ষয়িষ্ণু এবং বিলোপপ্রায় একটি দল হিসেবে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। তারা মনে করছে, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ। তারা ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত সে সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তারা সেসময় ব্যর্থ হয়েছিল। নতুন সংসদেও তারা বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও তারা ক্ষয়িষ্ণু ও অত্যন্ত দুর্বল এবং তাদের অস্তিত্ব বিপন্নপ্রায়। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পর এই দলের নেতৃত্ব কে নিবেন এবং তার নেতৃত্বে দলটি কতটুকু সফলতা পাবে তা নিয়েও কূটনীতিক মহলে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্তর্জাতিক অনেক মহলই আশাবাদী ছিল এবং তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়েছিল। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতির কারণে ইউরোপ এবং আমেরিকা ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী ছিল। কিন্তু নির্বাচন ও নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল হতাশ। ঐক্যফ্রন্টের মূল সমস্যা-নীতি ও আদর্শগত কোন ঐক্য নয় এটি ছিল একটি নির্বাচনী ঐক্য। তাছাড়াও এই ফ্রন্টের মধ্যে নানা রকম মতপার্থক্যের কারণে ঐক্যবদ্ধভাবে আত্মপ্রকাশ করা এই মোর্চার জন্য প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়াও বাম ফ্রন্ট ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি যারা আছে তারা একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আপাতত চটজলদি কোন বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা তাদের জন্য অসম্ভব ব্যাপার।

আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে দাতা দেশ এবং কূটনীতিকরা বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে একটি শক্তি হিসেবে দেখছিল। যেন গণমাধ্যম বিরোধী শক্তি হিসেবে সরকারের সমালোচনা করে সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনগত কারণে গণমাধ্যমও সরকারের সমালোচনা করা ও সরকারকে জবাবদিহিকতার আওয়তায় আনার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

এজন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল একটি সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স বা সুশীল সমাজের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছে যেটা সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম খতিয়ে দেখে সমালোচনার প্ল্যাটফর্ম হবে। তারা মনে করে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী সুশীল সমাজ রয়েছে যাদেরকে একটু ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেই বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ‍সুশীল সমাজের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাদের কথায় মানুষ আলোড়িত হয় এবং বিশ্বাস করে। সেজন্যই গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের সুশীল সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে নানা রকম বক্তব্য বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এটা বিক্ষিপ্তভাবে না করে তারা যেন একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম থেকে করে সেজন্য তাদেরকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার কাজ চলছে।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেকের সঙ্গে গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টিআইবির চেয়ারপার্সন ড. সুলতানা কামাল, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানসহ আরও কয়েকজন। তারা বলেছেন যে, বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স করা অবশ্যই জরুরি যাদের রাজনৈতিক কোন অভিপ্রায় নেই। যেহেতু সুশীল সমাজ নিজেরা ক্ষমতায় আসতে চায় না কাজেই তাদের বক্তব্য এবং সমালোচনাগুলো তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে হবে। কাজেই তাদের কথাগুলো মানুষ শুনবে। এজন্য তারাও এ ব্যাপারে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করছেন।

তবে তারা মনে করছেন এই প্ল্যাটফর্মের জন্য একজন নেতা দরকার। এক্ষেত্রে সুশীল সমাজের যাদের সঙ্গে কূটনীতিকরা কথা বলেছেন তাদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এটা নেতা হতে পারেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস। কিন্তু অনেকে মনে করছেন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকাররে সম্পর্ক খুবই শীতল এবং নাজুক পর্যায়ে। তাকে নেতৃত্বে নেয়া হলে সরকার তাতে প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং অ্যালায়েন্সটা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তারা মনে করছে এমন একটি অ্যালায়েন্স করা উচিৎ যাদের প্রতি সরকারের কোন নেতিবাচক মনোভাব থাকবে না, কিন্তু তাদের সমালোচনা ও উপদেশ সরকারের গ্রহণের মানসিকতা থাকবে। এরকম বিবেচনায় তারা স্যার ফজলে হোসেন আবেদের নাম প্রস্তাব করছেন। কিন্তু ফজলে হোসেন আবেদ এ ধরনের কর্মতৎপরতা থেকে সবসময় নিজেকে দূরে রাখেন। অনেকে সুলতানা কামালকে প্ল্যাটফর্মের প্রধান করার চিন্তাভাবনা করছে। তবে কূটনীতিকরা মনে করছেন এই প্ল্যাটফর্মের কোন নেতা দরকার নেই। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, দারিদ্র বিমোচন, সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান হবে এই প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা নিজেরা আলোচনা করবেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত আসবে।

তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধরা বলছেন বাংলাদেশে নেতৃত্ব ছাড়া কোন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা বাস্তবসম্মত নয়। সেটা টেকসই হয় না এবং ভবিষ্যতে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকে অ্যালায়েন্সের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের নাম প্রস্তাব করছেন। তবে এসবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কূটনীতিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই তৎপরতা আরও দৃশ্যমান হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। এই প্ল্যাটফর্মই সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচক এবং সরকারক জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭