নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 15/04/2019
আগামী ৩০ মে থেকে ইংল্যান্ডের শুরু হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর বিশ্বকাপ। রণকৌশল ঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের শক্তিমত্তা পরখ করে নিচ্ছে অংশগ্রহণকারী দশটি দল। একই সঙ্গে চলছে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল বাংলা ইনসাইডার-এর বিশেষ আয়োজন বিশ্বকাপে, বিশ্ব কাঁপে…। কাউন্ট ডাউন স্টোরিতে এবার থাকছে বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চে দেশগুলোর কোন কোন তারকা থাকবেন স্পটলাইটে। এবার থাকছে ক্রিকেট বিশ্বের নতুন শক্তি বাংলাদেশ। আজ থাকছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তাঁর অধিনায়কত্ব।
ক্রিকেট মাঠে মাশরাফি হাঁটলেই মানুষ খুশি হয়। ব্যাট হাতে চার-ছয় মারলে তো কথাই নেই, সিঙ্গেল নিলেই খুশি। আর কিছু না করে শুধু মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলেও খুশি হয় মানুষ। কারণ জীবনের যেকোনো সংগ্রামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার নাম মাশরাফি।
কারণ দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ডিসিপ্লিন ভাঙার অভিযোগ উঠেনি তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি একটি বিতর্ক হয়নি তাকে নিয়ে। প্রতিবার ডান পা’টা আগে দিয়ে মাটিকে সালাম করে প্রবেশ করেন মাঠে। ব্যাটিংয়ে নামার সময় তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। এর ব্যাখ্যা তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট রুটি-রুজি, তাই সালাম করি মাঠ, আর আকাশের দিকে তাকাই কারণ আল্লাহকে স্মরণ করি’।
নতুন বলে টাইগারদের একমাত্র ভরসা ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু মুস্তাফিজ আসার পর তাঁর তুলে দেন নতুন বল। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিবর্ণ রুবেল-তাসকিনের উপর ভরসা রাখেন তিনি। দলে হঠাৎ সুযোগ পাওয়া ইমরুল ডেকে বলেন, ভয়হীন ক্রিকেট খেল, আর তাতেই বাজিমাত। পরম যত্নে আগলে রাখেন মিরাজ-লিটনদের। এটাকেই বলে ‘‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’। মাঠে এবং মাঠের বাইরে তাঁর নিপুণ পরিচালনায় বর্তমানে বাংলাদেশ দল হয়ে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন শক্তি। আসন্ন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তাঁর অধিনায়কত্ব হবে অন্য যেকোন দলের জন্য ‘এক্স ফ্যাক্টর’।
১৭ বছরের ক্যারিয়ারে মোট ১১ বার ইনজুরিতে পড়েছেন তিনি। দু’পায়ে অস্ত্রপচার হয়েছে অন্তত সাতবার। এরপরও খেলে যাচ্ছেন তিনি। চোটের কারণে এবং অনেকটা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে খেলা হয়নি দেশের মাঠে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ।
২০০৯ সালের শুরুতে অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের সহকারী ছিলেন মাশরাফি। পরবর্তীতে ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি মোহাম্মদ আশরাফুলের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। এবং তার সহকারী করা হয় সাকিব আল হাসান। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন তিনি। এই চোটের কারণে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠের বাইরে ছিলেন ডানহাতি এই পেসার।
এরপর জাতীয় দলে ফিরলেও খেলেছেন সাকিব ও মুশফিকের অধীনে। কিন্তু হারতে হারতে মানসিক ভাবে ভঙ্গুর এক দলকে তার হাতে তুলে দেয় বিসিবি। ২০১৫ বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে পুনরায় ফেরেন অধিনায়কত্ব। ৫-০ ব্যবধোনে সেই সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
২০১৫ বিশ্বকাপে বিপ্লব ঘটায় বাংলাদেশ। সেবার প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে টাইগাররা। বিশ্বকাপ পরবর্তী ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সহ বেশ কয়েকটি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও খেলে টাইগাররা। এছাড়া এশিয়া কাপ সহ বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ।
দেশের ক্রিকেট প্রেমিরা অচমকা ধাক্কা খান ২০১৭ সালে ৬ এপ্রিল। কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি বলে ঘোষণা দেন। ম্যাশই দেশের প্রথম ক্রিকেটার, যে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় মাঠে অবসর নেয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফির অধিনায়ত্বের রেকর্ড:
ফরম্যাট |
ম্যাচ |
জয় |
হার |
টাই/ড্র |
ফলবিহীন |
সাফল্য |
টেস্ট |
১ |
১ |
০ |
০ |
০ |
১০০ |
ওয়ানডে |
৭৩ |
৪০ |
৩১ |
০ |
২ |
৫৬.৩৩ |
টি-টোয়েন্টি |
২৮ |
১০ |
১৭ |
০ |
১ |
৩৭.০৩ |
পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। দেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে (৭৩) টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়তে থাকা হাবিবুল বাশার সুমন অধিনায়কত্ব করেছেন ৬৯ ম্যাচ। মাশরাফির অধীনে সবচেয়ে বেশি জয় (৪০ ম্যাচ) পেয়েছে বাংলাদেশ। আর সুমনের সময় ২৯ ম্যাচে বিজয় উৎসব করেছে টাইগাররা।
আগের জানিয়েছেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর অবসরে যাবেন তিনি। এজন্য যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতে। নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য। দেশপ্রেমের অনবদ্য শক্তি লালিত হয় তাঁর দেহে। তাই তো শুধু নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে নয়, লড়াকু সৈনিকের মত লড়ে যান ক্রিকেট মাঠে। লড়াইয়ের জন্য উৎসাহ দেন সকলকে। আসন্ন বিশ্বকাপে যে কোন দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশ। মাশরাফির নেতৃত্বে ক্রিকেট মাঠে জান-প্রাণ বাজি রেখে লড়বেন টাইগাররা। তাই ‘মাশরাফির অধিনায়কত্বকে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ মনে করছেন অন্য ৯ দলের টিম ম্যানেজম্যান্ট।
বাংলা ইনসাইডার/আরইউ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭