ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনা যাদের কাছে ঋণী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/06/2019


Thumbnail

১১ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারান্তরীণ দিবস। ২০০৮ সালের এইদিনে ১০ মাস ২৫ দিন কারাভোগের পর তিনি মুক্ত হয়েছিলেন। সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ওয়ান ইলেভেন সরকার মাইনাস ফর্মূলা বাস্তবায়ন করার জন্য ১৬ জুলাই ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে তার সূধাসদনের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করেন। তার বিরুদ্ধে কিছু সাজানোর মামলা দায়ের করে তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের আগে তাকে দেশত্যাগের জন্যও প্ররোচিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে কারাগারেই যেতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগে সবসময়, বিশেষ করে দুর্যোগের সময় দেখা যায় যে শীর্ষ নেতারা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে না। তৃনমূল যৌক্তিক ভূমিকা পালন করে। ওয়ান ইলেভেনও তার ব্যতিক্রম নয়। ওয়ান ইলেভেনে দলের শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার কটুচালে লিপ্ত হয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যক্তি জোড়ালো ভূমিকা পালন করেছেন তার মুক্তির উদ্দেশ্যে। যাদের জোরালো ভূমিকার জণ্য শেখ হাসিনার বেশিদিন কারান্তরীন থাকা সম্ভব হয়নি এবং তাদের ভূমিকার জন্যই দেশে বিদেশে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য গণজাগরণ তৈরী হয়েছিল। আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেখ হাসিনা নি:সন্দেহে তাদের কাছে ঋণী। আসুন দেখে নেয়া যাক শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য কারা সেদিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছিলেন।

আইনগত

১৬ জুলাই বৃষ্টিমুখর ভোররাতে শেখ হাসিনার সুধাসদন বাসভবন থেকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন শেখ হাসিনা প্রথম যে কয়েকজনকে কল দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। আওয়ামী লীগ সভাপতির টেলিফোন পেয়ে তিনি সরাসরি চলে এসেছিলেন সুধাসদন। শেখ হাসিনার গাড়ির পেছনে তিনি আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এই কেসের আইনী লড়াইয়ে তিনিই ছিলেন প্রথম আইনজীবি। সাহারা খাতুন পরে একটি আইনজীবি প্যানেল তৈরী করেছিলেন। যাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ। এছাড়াও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অ্যডভোকেট ফজলে নূর তাপস শেখ হাসিনার আইনী দিকগুলো তদারকি করেছিলেন। এদের সঙ্গে পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিলেন আরো অনেক আইনজীবি। এই আইনজীবি প্যানেল শেখ হাসিনার পক্ষে জনমতকে প্রবল করেছিল। তারা আদালতকে এটা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে এই মামলাগুলো ছিল উদ্দেশ্যমূলক, শেখ হাসিনাকে হয়রানি করার জন্য এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত।

রাজনৈতিক

এসময় আওয়ামী লীগ বিভক্ত হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে অটুট রাখা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের কারণে আওয়ামী লীগ সেই সময়ে ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছিল এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল বিভক্ত। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যারা শেখ হাসিনার পক্ষে সোচ্চার থেকে তৃণমূলের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল তাদের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কথা। শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত তার অভিভাবকত্বেই আওয়ামী লীগ একটা নিশ্চিত ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও সেসময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে মতিয়া চৌধুরীও আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

চিকিৎসা

শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তির বিষয়টি সর্বপ্রথম আলোচিত হয়েছিল চিকিৎসকদের মধ্য দিয়ে। চিকিৎসকরাই প্রথম বলেছিলেন শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি। এই উচ্চারণটি করে যিনি অনন্য এবং শেখ হাসিনার মুক্তির পথের সূচনা করেছিলেন যিনি, তিনি হলেন বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনিই প্রথম কেন্দ্রীয় কারাগারে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছিলেন যে শেখ হাসিনা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, তিনি একাই তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার সামনে প্রতিকী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসা এবং মুক্তির দাবিতে। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী পরবর্তীতে অন্যান্য চিকিৎসকদেরকেও সাহস যোগান এবং তাদেরকে শেখ হাসিনার চিকিৎসার করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে যেসব চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ডা. শাহ আলম, ডা. শাহলা খাতুন এবং ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর কারণেই তারা শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে স্বারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

সমঝোতা

শেখ হাসিনার মুক্তিটি কোনো আন্দোলনের ফসল নয় বরং সমঝোতার ফসল। এই সমঝোতার ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেনাসমর্থিত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলের সঙ্গে দেন-দরবার করে তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মূল নেতারা অসমর্থ হলেও শেখ হাসিনার কিছু প্রিয়ভাজন ব্যক্তি সফল হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং তার পুত্র তানভীর ইমাম। তারা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন আপসরফার বৈঠক করেছিলেন। এছাড়া সকলের অজান্তে সেনাসমর্থিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় ভূমিকা রেখেছিলেন ড. গওহর রিজভী। সেসময় গওহর রিজভীর সুবিধা ছিল যে তিনি তেমন আলোচিত ছিলেন না বলে তাকে কেউ চিনতো না, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল সবার অগোচরে।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দ

শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য কেবল জাতীয়ভাবে প্রক্রিয়া যথেষ্ট ছিল না, আন্তর্জাতিক সম্মতিরও প্রয়োজন ছিল। এবং এই আন্তর্জাতিক সম্মতির ক্ষেত্রে প্রায় একক ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রণব মূখার্জি। মূলত প্রণব মূখার্জির উদ্যোগের কারণেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারের ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি হয়েছিল শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য। এক্ষেত্রে প্রণব মূখার্জিকে সহায়তা করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন।

এই বিভিন্নমূখী প্রক্রিয়ার কারণেই ১১ জুন শেখ হাসিনা মুক্তিলাভ করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে যে, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বাইরে শেখ হাসিনার একটা একান্ত বিশ্বস্ত অসংখ্য সহযাত্রী রয়েছে যাদের জন্য শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং ২০০৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার নবযাত্রা শুরু করতে পেরেছিলেন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭