ইনসাইড বাংলাদেশ

ফিরে দেখা লোডশেডিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/05/2017


Thumbnail

জৈষ্ঠের তাপদাহে অতিষ্ট জনজীবন। তার ওপর লোডশেডিং। হাঁসফাঁস অবস্থা। অসহনীয় হয়ে উঠছে জীবন। বর্তমান অবস্থা দেখে মানুষ ভুলে গেছে বিগত বছরগুলোতে লোডশেডিংয়ের কথা।

২০০১-২০০৬ সালের কথা মনে আছে? বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ অলিখিত এক দ্বৈত শাসনের কবলে পড়েছিল। বিশেষভাবে, ক্ষমতাশীল হাওয়া ভবনের অবৈধ হস্তক্ষেপ, চাঁদাবাজি ও স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক পরিকল্পনার মত সাময়িক বিদ্যুৎ পরিকল্পনার বেশিরভাগ টাকাও লুঠপাট হয়েছিল। সারাদিনে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ যেত হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। মনে করিয়ে দেই, বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ একটু আসলেই ঈদের নতুন জামা পাওয়ার মতো আনন্দ লাগতো মানুষের ঘরে।

জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির সমস্যা যে কত ভয়াবহ হয়েছিল তা সকলের জানা । তারপরও জানানো ভালো, ২০০৫ সালে সারাদেশে প্রতিদিন ৯শ’মেগাওয়াট লোডশেডিং হতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতহীন অবস্থা সারাদেশে জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ২০০১-২০০৬ সালের মাঝামাখি মাত্র ১৬% উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অথচ আমরা সবাই জানি, বিগত কয় বছরে জনসংখ্যা এবং বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। গত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই করুণ অবস্থার ফল বর্তমান অবস্থাকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে তা বলাটা ভুল হবে কি?

বিএনপি সরকারের আমলে রাজধানীর শনির আখড়ায় বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা সাধারণ মানুষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ স্থানীয় সাংসদ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। রমজানে দেশের বিভিন্ন স্থানেই বিদ্যুতের দাবিতে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ মানুষ।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বড় কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের পাঁচ বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন খাতে। বিতরণ ও সঞ্চালনের ওই পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল অপ্রয়োজনীয় ও পরিকল্পনার বাইরে। সে সময় একটি মাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেটি টঙ্গিতে স্থাপন করা হয়েছিল সেই ৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র স্থাপনেও বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট হয়। নিম্নমানের কাজ ও দুর্বল মেশিনপত্রের কারণে কেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের মাত্র ছয় ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রটি সেই সময় ৮১ বার বন্ধ হয়েছে এবং এখনও বন্ধ রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পুরো জোট আমলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মানোন্নয়ন ও মেরামত বাবদ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। মূলত কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি। খুলনা শিকলবাহা কেন্দ্রটি মেরামতের নামে কয়েক বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত খুলনা ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিন কিস্তিতে ৪৪৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। খুলনা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩শ’ কোটিটাকার মেরামত কাজ হয়েছে। শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৪ কোটি টাকা খরচ করে দু দফা মানোন্নয়ন করাহলেও উৎপাদন এক মেগাওয়াটও বাড়েনি। বরং ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে পাঁচ লাখের বেশি খুঁটি কেনা হয় এবং তা ছিল দুর্নীতির একটি বড়খাত। বিএনপি সরকার ৫ বছর শুধু খাম্বা কিনেছে, বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে জোট সরকার বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। রাজধানীতে ডেসার বিদ্যুৎ উপসঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সংস্কার প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমান অবস্থা একটু ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে দেশে সর্বমোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৫,৬২২ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার। সারাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮৮.৪৪ শতাংশই আসে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে। এছাড়া শতকরা ৪.০২ ভাগ আসে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে, শতকরা ৩.৮৯ ভাগ ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি থেকে, শতকরা ২.০৪ ভাগ ডিজেল তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি থেকে এবং ১.৬১ ভাগ আসে পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে।


২০১১ সালে পিডিবির গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২,১৫৯.৮৭৯। এর মধ্যে গৃহস্থালী গ্রাহক ৪২.৭%, বাণিজ্যিক ৮.১৭%,শিল্প ৪১.০২%, কৃষি (সেচ) ৫.৬১% এবং অন্যান্য ২.৫%। ২০০৯ সালে পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১,৯২২,৩৬১। ২০১০-১১ অর্থ বছরে পিডিবির রাজস্ব আয় ছিল ১৫৭.১১৭ মিলিয়ন টাকা। ১৯৯৯ সালে আয় হয় মাত্র ২৩,৮৬২ মিলিয়ন টাকা।

২০১৬ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় রেকর্ড সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট থেকে ২০১৫তে তা ১১ হাজার ২৭১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এই সরকার।

এটা অস্বীকার করা যায় না যে, বর্তমানে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু এটাও মানতে হবে বিএনপির আমল থেকে আওয়ামী লীগের সময় বিদ্যুতের যন্ত্রণা অনেকটাই কম পাচ্ছে সাধারণ জনগণ।

বাংলা ইনসাইডার/টিআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭