ইনসাইড পলিটিক্স

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে অপপ্রচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/07/2019


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি, সঠিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ যখন উর্ধ্ব গতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে অগ্রসর হচ্ছে, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ প্রকল্প সম্পর্কে সাম্প্রতিককালে অপপ্রচার শুরু করেছে একটি মহল। গত ২দিন আগে এরূপ একটি অশনি সংকেতের কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের। দেখা গেল অপপ্রচার সম্পর্র্কে তার ধারনা সঠিক। পরদিনই র‌্যাব পদ্মা সেতু নিয়ে অপপ্রচার চালানোর দয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর কোন স্বপ্ন নয়। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে অনেক অংশ। নিজ অর্থায়নে এত বড় অংকের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বক্ষমতার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতা লাভের পরপরই এ দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল শূন্য, এখন প্রায় ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার, এখন প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগের হার ছিল জিডিপির প্রায় ৯ভাগ, এখন ৩২ ভাগের বেশী এবং রপ্তানী আয় ছিল ০.৭ বিলিয়ন ডলার, এখন তা ৪৭ বিলিয়ন ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি (৭.৮৬), গড় আয়ু (৭২.৮ বছর), শিক্ষার হার (৭২.৮%), নবজাতক মৃত্যু প্রতি হাজারে (২৮.২ জন), নারীর ক্ষমতায়ণসহ মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের উপরে। কর্মক্ষম জনশক্তির প্রাপ্যতা, দক্ষতা, প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং উন্নয়নের অন্যান্য উপাদানের উপর ভিত্তি করে লন্ডনের প্রখ্যাত অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান Pricewaterhousecoopers(Pwc) আগামী দিনের বিশ্ব কেমন হবে এ বিষয়ে `World in 2050’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পেশ করেছে, সেখানে উল্লেখ্য করা হয়েছে যে আগামী বছরগুলোতে পৃথিবীতে যে ০৩টি দেশ দ্রুত গতিতে উন্নতি করবে, তার একটি হচ্ছে বাংলাদেশ।

উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত গতিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বহুমুখী বিভিন্ন কর্মসূচী/প্রকল্পের মধ্যে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প অন্যতম। বর্তমান নাম আমার বাড়ী আমার প্রকল্প। প্রায় ৬০ লক্ষ দরিদ্র পরিবারের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা সৃষ্টি, স্বল্প সুদে মৌসুমী ঋণ প্রদান, কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতি বাড়ীকে আধুনিক কৃষি খামারে রূপান্তর ও দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে প্রকল্পের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের গতি এসছে। সদস্যবৃন্দ প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছেন। পকল্পের কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। প্রকল্পের কার্যক্রমের পাশাপাশি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক পরিচালনার জন্য জুন/২০১৬ সালের পূর্বে গঠিত ৪০২১৫ টি সমিতি, জনবল ও সম্পদ ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক ৪৮৫ টি শাখায় অন-লাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেন পরিচালনার জন্য প্রত্যেক সমিতিতে ২ জন করে লেনদেন ম্যানেজার (সমিতির সদস্য) নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। জনবলের ঘাটতি থাকায় খেলাপী ঋণের হার বেড়েছিল। জনবল সমস্য সমাধান হওয়ায় সে হারও নামছে সন্তোষজনক গতিতে। স্থানান্তরিত জনবলের পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্যাংকের ও প্রকল্পের এ উন্নয়নের সময়ে হঠাৎ করে কিছু কর্মকর্তা ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে ঢাকায় এসে স্থায়ী হওয়ার দাবীসহ ৭ টি দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। ফেসবুকে আবার এ আন্দোলনে গতি প্রদানের জন্য কর্মকর্তা/কর্মচারী পাশাপাশি কিছু অনাকাঙ্খিত ব্যাক্তি সংযুক্ত, যা সঙ্গত কারনেই প্রশ্নের সৃষ্টি করে।

দাবীর মধ্যে আছে ব্যাংকে জনবলের স্থায়ী নিয়োগ। ব্যাংক সূত্রে জানা যায় জুন/২০১৬ মাসের পূর্বে নিয়োগকৃত ৫৩৬৮ জন জনবলের মধ্যে ৪৭৫৬ জন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়ে স্থায়ী নিয়োগ হয়েছে। অবশিষ্ট ৬১২ জনের শৃঙ্খলাজনিক কারণে ও লো-পারফরমেন্সে কারণে স্থানান্তরিত হয়নি। তারা পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হবেন। পদোন্নতির কার্যক্রমও বাস্তবায়ন পর্যায়ে। পদোন্নতি নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অন্য দাবীসমূহের মধ্যে প্রধান হচ্ছে চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদারের পদত্যাগ বা অপসারণ। আন্দোলনকারীগণের প্রতিনিধিবৃন্দ গত ১০/০৭/১৯ তারিখ এসব দাবী নিয়ে ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এম.ডি জনাব আকবর হোসেনের সাথে আলোচনা করেছেন। তাদের দাবী চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবী মানা হলে তাদের অন্য দাবীর প্রতি আগ্রহ নেই।

অর্থাৎ দাবী হচ্ছে, চেয়ারম্যানের অপসারণ বা পদত্যাগ। কিন্তু কি কারনে তা বোধগম্য নয়। ফেসবুকে এ আন্দোলন বেগবান করার জন্য কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে যাদের পোষ্ট দেখা যায়, এর মধ্যে একজন হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, যিনি এ প্রকল্প ও ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার একাধিক পোষ্টে এ আন্দোলনকে বেগবান করার আহবান আছে। সাথে আছে এ্যডভোকেট সিদ্দিক নামের একজন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায় এ্যডভোকেট সিদ্দিকের প্রযোজনায় প্রকল্পের নামে “কিস্তির জ¦ালা” নামে একটি পূর্নদৈর্ঘ চলচ্চিত্র তৈরী করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া প্রকল্প থেকে কোন অর্থ না নিয়ে কিভাবে এ চলচ্চিত্র তৈরী করেছেন তা অজানা। চলচ্চিত্র মাঠ পর্যায়ে সিনেমা হলে মুক্তি প্রদানের পূর্বক্ষণে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে বাধা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। কিস্তির জ¦ালা সিনেমার কিছু অংশ ইউটিউবে আছে। দেখা যায় সেখানে এনজিওদের কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক নেতিবাচর কথা বলা হয়েছে এবং পুলিশ দরিদ্র মানুষের বাড়ীঘর ভেঙ্গে এনজিওদের ঋণ আদায় করছে। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ এসব কাজ করেনা এবং এনজিওদের উন্নয়ন কার্যক্রমে দৃশ্যমান অবদান আছে। কাজেই এই সিনেমা প্রচার করতে না দেওয়াই যৌক্তিক ছিল। প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ সিনেমার আর্থিক উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন আছে, আর এসব কারণেই এ আন্দোলনে এ্যডভোকেট সিদ্দিক সম্পৃক্ত হয়েছেন।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা আন্দোলন করতে পারেন না বা ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেন না। কিন্তু গত ০৮/০৭/১৯ তারিখের ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকের ৪৮৫ টি শাখার মধ্যে ১৬৬ টি শাখার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং খোলা হয়নি। অন-লাইনে ব্যাংকিং খোলার পাসওয়ার্ড আছে শুধুমাত্র শাখা ব্যাবস্থাপকের কাছে। তিনি অন-লাইন কার্যক্রম খোলেননি বলে এসব শাখায় কোন লেনদেন করা সম্ভব হয়নি বা  হচ্ছেনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দরিদ্র মানুষ যাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। কাজেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বিশেষ উদ্যেগ বিঘ্নিত করার জন্য কারা কি কারনে কাজ করছেন তা জরুরী ভিত্তিতে সনাক্ত করে এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭