কালার ইনসাইড

সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বঙ্গবন্ধু (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2019


Thumbnail

মুক্ত ও উদারপন্থীরা সংস্কৃতিপ্রেমী হবেন এটাই স্বাভাবিক। যেমনটি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ছিল বঙ্গবন্ধুর বিস্তর আগ্রহ। বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী এমনকি অভিনয়শিল্পীদেরও সবসময় উৎসাহ দিতেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প ‘বিএফডিসি’। শুধু প্রতিষ্ঠাই করেননি। বাংলাদেশের একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর অভিনীত ছবির নাম ‘সংগ্রাম’।

চাষি নজরুল ইসলাম পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘সংগ্রাম’ ছবিতে ছোট্র একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। সে সময়ের চিত্রনায়ক কামরুল আলম খান খসরুকে খুব স্নেহ করতেন বঙ্গবন্ধু।

দেশ স্বাধীনের আগে খসরু ছিলেন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তার হাত ধরেই ১৯৬৯ সালে মুসলিম লীগের এনএসএফ গুণ্ডা বাহিনী ঢাকা থেকে উৎখাত হয়েছিল। বীরত্বের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে এরপর তিনি চলচ্চিত্রে আসেন। স্নেহ করতেন বলেই একদিন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সোজা বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে আসেন খসরু। সে সময় চাষী নজরুল ইসলাম নায়ক খসরুকে নিয়ে ‘সংগ্রাম’ ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই ছবির চিত্রনাট্যের শেষ দিকে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্যালুট করছে। এই দৃশ্য কীভাবে ধারণ করা যায় সে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। একপ্রকার দুঃসাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন খসরু। সে সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁদের কথোপকথন চাষী নজরুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বর্ননা করেছিলেন এভাবে-

খসরু: আপনার কাছে একটা কাজে আইছি।
বঙ্গবন্ধু: কী কাজ? ক?
খসরু: আমরা আর্মির মার্চ পাস্টের একটা দৃশ্য করব। আপনি স্যালুট নিবেন।
বঙ্গবন্ধু: চুপ, আমি ফিল্মে অ্যাক্টিং করবো না। (ধমকের সুরে)
খসরু: এটা তো অ্যাক্টিং হইল না।
বঙ্গবন্ধু: অ্যাক্টিং হইল না কী? যা, এখান থেকে। (আবারো ধমকের সুরে)
খসরু: না আপনাকে করতেই হবে। আপনি না হলে সিনেমাটা শেষ করতে পারব না।
বঙ্গবন্ধু: মান্নানরে ডাক দেখি। (তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান)

(স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান এসে খসরু ও চাষী নজরুলকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।)

খসরু: বঙ্গবন্ধুরে অ্যাক্টিং করতে হইব।
আবদুল মান্নান: বঙ্গবন্ধু অ্যাক্টিং করব, এ-ও সম্ভব?
খসরু: সম্ভব না হইলে কিন্তু আপনারে অ্যাক্টিং এ দাঁড় করাইয়া দিমু। আপনি বঙ্গবন্ধুরে উল্টাপাল্টা কিছু বইলেন না। শুধু বলবেন, অ্যাক্টিং করা যায়।

(সবাইকে নিয়ে মন্ত্রী আব্দুল মান্নান আবার ফিরে গেলেন বঙ্গবন্ধুর রুমে)

বঙ্গবন্ধু: কী তাইলে?’
আবদুল মান্নান: ওই ঠিকই আছে। তয় করবেন কবে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে বঙ্গবন্ধু রাজি হলেন কাজটি করে দিতে। খসরুকে বললেন, “যা, করে দেব।”

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পিলখানায় শুটিংয়ের ব্যবস্থা হল। মার্চপাস্টের বিশাল আয়োজন। একবার মিস হলে সব শেষ। এক চান্সেই শট ওকে করতে হবে। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালেন। পেছনে সারি বেঁধে বসলেন জিয়াউর রহমান, কেএম সফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফসহ সেনাবাহিনীর সব শীর্ষ কর্মকর্তারা। মঞ্চের সামনে প্যারেড করে স্যালুট দিয়ে এগিয়ে চলেছে সুসজ্জিত সেনাদল। পরিচালকের কথা মতো স্যালুট গ্রহণের জন্য কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধু। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অধৈর্যের সুরে পরিচালকের সাথে কথোপকথন-

বঙ্গবন্ধু: এই, কতক্ষণ হাত তুইলা রাখব রে।
চাষী নজরুল: আর অল্প কিছুক্ষণ।
বঙ্গবন্ধু: আরে কী করস না করস তোরা।

এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধারণ হলো সংগ্রাম ছবির শেষ দৃশ্য। চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সুচন্দা, খসরু ও বঙ্গবন্ধু অভিনীত মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রাম মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। 

বাংলা ইনসাইডার 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭