ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচন প্রশ্নে বিভক্ত বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/06/2017


Thumbnail

নির্বাচন প্রশ্নে বিভক্তি দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তুত করলেও, আরও বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে দলে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে মূলত ত্রিমাত্রিক দ্বন্ধ রয়েছে দলে। এগুলো হলো প্রথমত, যদি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ওই নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না?

দ্বিতীয়ত, আদালতে দণ্ডিত হয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে দল নির্বাচনে যাবে কিনা? তৃতীয়ত, সহায়ক সরকার, রূপরেখা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির এমন কোনো দাবিই যদি সরকার মেনে না নেয়, সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচনে যাবে কি না?

জানা গেছে, এক কথায় যে কোনো পরিস্থিতিতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পক্ষে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি বড় অংশ। সাবেক একাধিক সেনা কর্মকর্তাসহ এসব নেতাদের মতে, গত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে দল যে ভুল করেছে, তার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না। এমনকি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি কোনো মামলায় দণ্ডিত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তবুও দলের উচিত হবে নির্বাচনে যাওয়া। শুধু তাই নয়, সহায়ক সরকার বা বিএনপির যে কোনো দাবিই যদি সরকার মেনে না নেয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া নেতৃত্বে দল নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবুও তারা নির্বাচনে যাবেন। সর্বোপরি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকেও যদি নির্বাচন দেয় এবং তাতে দল যাই সিদ্ধান্ত নিক, তাদের নেতৃত্বে দলের বৃহৎ একটি অংশ নির্বাচনে যাবেই।

তবে সহায়ক সরকার ইস্যুতেই দলে বর্তমানে কথাবার্তা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এক ইফতার অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার এ সংক্রান্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সামনে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে এই সরকারের রূপরেখা প্রস্তুত হয়ে গেছে, তবুও আদৌ এই সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে স্থির থাকা উচিত হবে কিনা এই নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতবিরোধ প্রকট হচ্ছে।

সমালোচনা করে নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রীকে ছুটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে রূপরেখায়। অথচ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে হবে নির্বাচন। ওই সময় সংসদ কার্যকর থাকবে। তাহলে সংসদ নেতা হবেন কে? তাছাড়া রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে সংবিধানে বলা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে সংবিধানে কোনো কিছু বলা হয়নি।

সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের বিরোধীতাকারীদের উত্থাপিত এমন বিষয়ের জবাব অবশ্য দিচ্ছেন স্বপক্ষে থাকা অন্য নেতারা। তারা বলছেন, সংবিধানে এ সংক্রান্ত বিধান নাই, তবে নজির আছে।

উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিদেশ সফরে গেলে তৎকালীন আইনমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকের আয়োজনও করেছিলেন।

তবে এই যুক্তিকে যুঁতসই মনে করেন না রূপরেখার রিরুদ্ধে থাকা নেতারা। তাঁরা বলেন, নজির অনুসারে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে ছুটিতে যেতে পারেন। কিন্তু যেহেতু ওই সময় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। তাই প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে যেতে সম্মত হলেও প্রচার-প্রচারণার কারণে বিদেশে যাওয়া অসম্ভব।

তারা আরও বলছেন, রূপরেখা কী হবে, এটি দ্বিতীয় প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, এই পথে হাঁটাই উচিত হবে কিনা? অর্থ্যাৎ, সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে থাকা ঠিক হবে কিনা? সহায়ক সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাম যাই দেওয়া হোক, তা অর্জন করতে গেলে আন্দোলন করতে হবে। তাই আগে নিশ্চিত হতে হবে, এই আন্দোলনে জেতার সক্ষমতা দলের আছে কিনা?

জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়েও নিজেদের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে পারেনি বিএনপি, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে দিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন করাতে পারেনি দলটি, বরং এর আগে ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তিনি, এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনও ঠেকাবে ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে তারা, বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তির পরের দিন ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি শুরু করে টানা তিন মাসের আন্দোলন করেছিল বিএনপি। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। বরং দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের মানুষ হত্যা ও পেট্রোল বোমা হামলাসহ নানা কারণে মামলায় জড়াতে হয়েছে। সব মিলে এসব আন্দোলনে বরাবরই ব্যর্থ হয় বিএনপি। আর আমাদের দেশের মানুষের সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে যারা আন্দোলনে হেরে যায়, তাদেরকে ভোটেও হারায় ভোটাররা।

এসব যুক্তিতে তারা বলছেন, যে দাবিতেই হোক, আন্দোলনে যাবার আগে, নিশ্চিত হতে হবে আসলে এতে জেতার সামর্থ আমাদের আছে কিনা? অন্তত গত প্রায় এক যুগের ইতিহাস বলছে, এই সামর্থ আমাদের নেই এবং আমরা ক্ষমতার বাহিরে। এমনকি আমরা বিরোধী দলেও নেই।
বরং স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই দল ক্ষমতায় চলে যাবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।

এদিকে সহায়ক সরকারের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে যাঁরা অবস্থান নিচ্ছেন, তাঁদের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অন্যরা। সহায়ক সরকারের পক্ষে থাকা এই নেতারা মনে করছেন, এটি সরকারের অপতৎপরতার একটি অংশ। সরকারই বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশকে দিয়ে এই বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছে।


বাংলা ইনসাইডার/এমএএম




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭