নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 12/12/2019
আজ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদার জামিন নাকচ করে দিয়েছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। মূলত স্বাস্থ্যগত কারণেই এই আবেদন করা হয়েছিল এবং খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি জামিন পেয়ে যাবেন।
আপিল বিভাগ এই জামিন শুনানির জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছিলেন। মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতেই আপিল বিভাগ তাকে জামিন না দিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নততর চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্তে বিএনপি ক্ষুব্ধ হলেও তারেক জিয়া উল্লসিত। লন্ডন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, আদালতের রায় তারেককে যখন টেলিফোনে জানানো হয় তখন তারেক জিয়অ খুশিতে বলে ওঠেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’। যদিও তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে সরকার বিএনপিকে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিলো। এরফলে বিএনপি সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করবে এবং সেভাবেই মুক্তি হবে। খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে তারেকের উল্লসিত হওয়ার ভিন্ন কারণ রয়েছে বলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন।
কারণ গত বছরের ৭ ফ্রেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারেক জিয়াকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেন। তখন থেকে বিএনপির একচ্ছত্র আধিপত্য কিংবা কর্তৃত্ব তারেকের হাতেই। এর মাধ্যমে তারেক জিয়া বিএনপিকে তার পকেটস্থ সংগঠনে পরিণত করেছেন। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোরও নেতৃত্ব তার ইচ্ছাতেই হচ্ছে।
এখন খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপিতে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বে খালেদাপন্থীরা মনে করেন যে, খালেদা জিয়ার যদি জামিন হতো তাহলে খালেদা জিয়ার একক কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যেত। তখন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে পরিগণিত হতো। কারণ বিএনপিতে এখনও বেগম খালেদা জিয়াই সবচেয়ে জনপ্রিয়। দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তিনিই অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির কারণেই খালেদা জিয়াকে তারা মেনে নিচ্ছেন। যদিও বিএনপির তৃনমূলে একসময় তারেক জিয়ার জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে তারেকের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। তার একের পর এক সিদ্ধান্ত বিএনপিতে নানারকম বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
এখন বিএনপি স্পষ্টত দ্বিধা বিভক্ত। খালেদাপন্থী বিএনপি এবং তারেকপন্থী বিএনপি এই দুটি ধারা তৈরী হয়েছে বিএনপিতে। এ কারণেই বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তি না পাওয়ার পেছনে তারেকের হাত রয়েছে। কারণ বিএনপির এমপি হারুন অর রশিদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন করেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন যে, তোমাদের যে নেতা লন্ডনে বসে আছেন, তিনি তার মায়ের মুক্তি চান কিনা এটা আগে আমাকে জানাও। এর জবাবে হারুন কিছু বলতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে যে, তারেক জিয়া আইনজীবীদেরকে খালেদা জিয়ার মামলাগুলোকে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন না করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে রাজপথে যেন বিএনপি জোড়ালো আন্দোলন করতে না পারে সেজন্যই তারেক জিয়া নানা রকম নির্দেশনা বা পরামর্শ দিচ্ছেন বলে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন। এরকম বাস্তবতায় খালেদা জিয়ার মুক্তি তারেকের অনাগ্রহে আটকে আছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিএনপির একটি অংশ মনে করছে যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্যারোলেও হতে পারে কিন্তু প্যারোলের জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার দরকার তারেকের জন্য সেটা আটকে গেছে। আর এসব থেকে যেটা উপসংহার টানতে চান বিএনপির অনেক নেতা তা হলো তারেক জিয়া খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে নেতৃত্ব থেকে তারেক জিয়াকে সরে যেতে হবে।
আর গত দুই বছরে তারেক জিয়া যে অপকর্মগুলো করেছেন সেই অপকর্মগুলোর সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়া ওয়াকিবহাল হবেন। কাজেই এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নিয়ে এসে বিপদে পড়তে চান না তারেক জিয়া। আর এ কারণেই খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে আছে বলে অনেকেই মনে করেন।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭