ইনসাইড হেলথ

করোনা নিয়ে ১০ মিথ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/03/2020


Thumbnail

সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নাগালের বাইরে। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের মিছিল, প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ, নতুন নতুন অঞ্চল। এই পরিস্থিতিতেই করোনার আগুনে গুজব আর বিভ্রান্তির ঘি ঢালা হচ্ছে অনেকদিন থেকে। একেই করোনা এখন মুর্তিমান আতঙ্ক, তার ওপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্যাদি পুরোবিশ্বেই তাণ্ডব বইয়ে দিচ্ছে। এমনিতে এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, কোনো পথ্য নেই। এখন সবারই অপেক্ষা করোনা কবে বিদায় নেবে, কবে এই লাশের মিছিল থামবে। সবার মনে মনে, প্রতিটি ঘরে ঘরে এই প্রার্থনা।

কিন্তু একশ্রেণীর লোক এই করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত যথেষ্ট বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ফেলেছে। সেই বিভ্রান্তি গুজব এখনো লোকমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু গুজব আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিছু আমাদের অন্যপথে পরিচালিত করছে, কিছু আবার সঠিক তথ্যকে আড়াল করে দিয়ে আমাদের সচেতনতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক গুজবকে বিশ্বাস করে ফেলে। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যায়।

এ পর্যন্ত করোনা নিয়ে অনেক গুজব, বিভ্রান্তিই সামনে এসেছে। তেমন ১০ বিভ্রান্তি নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের আলোচনা-

১. করোনা উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় সংক্রমিত হয় না, গরম এলেই করোনার প্রাদুর্ভাব চলে যাবে- এই কথা অনেকদিন থেকেই শুনছি আমরা। কিন্তু এটি সঠিক নয়। গবেষক এবং স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে ঠাণ্ডা আবহাওয়া কার্যকর এমনটা ভাবার কারণ নেই। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়াসহ সব ধরনের পরিবেশে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই থাকে।

২. কেউ আবার বলেছিলেন এই ভাইরাস মুসলমানদের আক্রমণ করবে না। মুসলিমপ্রধান দেশ বা অঞ্চলে করোনা কখনোই থাবা ফেলবে না। এই বিষয়টিও পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সব ধরনের দেশ বা অঞ্চলেই করোনা ছড়াচ্ছে। সর্বশেষ মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবে করোনা মহামারী আকারে ছড়াচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

৩. হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্রে গরু মানেই গোমাতা, দেবতা। গরুর মলমূত্র তাদের কাছে পবিত্র, রোগবালাই সারানোর দাওয়াই। অনেকেই মনে করেন গোমূত্র পান করলে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড–১৯ সেরে যাবে। আমজনতা থেকে শুরু করে অনেক বড়সড় নেতাদেরও দাবি গোমূত্র করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর। বিভিন্ন এলাকায় গোমূত্র বিক্রি ও পানের হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু আদতে এই গোমূত্রেরও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গোমূত্র অতিমাত্রায় পান করে অনেকে যে অসুস্থ হয়েছে, সেই কথাও আমরা জানি।

৪. কিছুদিন আগেই শোরগোল উঠলো থানকুনি পাতা নিয়ে। এই পাতা নাকি করোনা নির্মূল করবে। অনেকেই উঠেপড়ে লাগলো থানকুনি পাতার খোঁজে। থানকুনির ঔষধিগুণ আছে ঠিকই, কিন্তু রাতারাতি করোনা সারাবে, সেটা সম্ভব নয়। তিল তেল ও রসুন করোনা ঠেকায়- এমন কথাও শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু এগুলো করোনা সারিয়ে তুলবে, এমন প্রমাণ এখনো কোথায় মেলেনি।

৫. কেউ বলছেন সারা শরীরে অ্যালকোহলে দেওয়ার কথা। এতে কখনোই করোনা মরে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি করোনা শরীরে প্রবেশ করেই, তাকে মারতে সারা শরীরে অ্যালকোহল, ক্লোরিন বা ব্লিচিং ছড়িয়ে কোনো লাভ নেই। বরং এ ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শ চোখ ও মুখের ত্বক ও ঝিল্লির ক্ষতি করে। আপনি সর্বোচ্চ আপনার ঘরদোর পরিস্কার করতে পারেন।

৬. অনেকের ধারণা, করোনা থেকে বাঁচার উপায় গরম পানিতে গোসল করা। শুধু গরম পানিতে গোসল করলেই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব না। তাছাড়া, বেশি গরম পানিতে গোসল করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গরম পানিতে গোসল নয়, বরং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠেকাতে পারে এই ভাইরাস।

৭. করোনা হলে মাংস খাওয়াই উচিৎ নয়, এই ধারণাও ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার সঙ্গে এখন পর্যন্ত মাংস খাওয়া বা না খাওয়ার তেমন কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মুরগির মাংসে বা খাসির মাংস থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। তবে যেকোনো ভাইরাস থেকে বাঁচার সহজ উপায় রান্নার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা।

৮. পোষ্য থেকে ছড়ায় করোনা, এটাও অনেকের ধারণা। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত জানা গেছে, পশুপাখি থেকে করোনা ছড়ায় না একেবারেই। বরং বাড়ির পোষ্যকেও এই অসুখ থেকে দূরে রাখা উচিত। দু-একটি ক্ষেত্র বাদে কুকুর, বিড়াল বা পাখিদের শরীরে এই জাতীয় ভাইরাসের অস্তিত্বের সেভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, পোষ্যদের সঙ্গে বাইরে বের হলে বা তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করলে সকলকেই পরিস্কার হয়ে নিতে হবে।

৯. শুরু থেকেই বলা হচ্ছিলো, করোনায় বৃদ্ধ ও কম বয়সীরাই ঝুঁকিতে আছে, শিশুরা একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত। এটা একেবারেই ঠিক নয়। করোনাভাইরাসের অন্যান্য প্রকরণের মতো যেকোনো বয়সী মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। তবে যেকোনো ব্যক্তি, তিনি বয়স্ক কিংবা স্বল্পবয়সী যে-ই হোন না কেন, যদি তার আগে থেকেই কোনো রোগ থাকে, তাহলে তার আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি। তাই সচেতনতা জরুরি। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ঘটনা বয়স্কদের, তবে বাচ্চারাও এর আশঙ্কা থেকে মুক্ত না।

১০. মশার কামড় থেকে করোনা হতে পারে, এটা নিয়েও প্রশ্ন আর বিভ্রান্তি ছিল। মশা হয়ত করোনা বহন করে, একজনের শরীর তেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়। এমন কোনো প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে নেই যে, মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে। নতুন এই করোনাভাইরাস শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে। আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি, সংস্পর্শ ও থুতুর মাধ্যমেই তা অন্যের শরীরে প্রবেশ করে।

সুরক্ষিত থাকতে হলে এগুলোকে উপেক্ষা করুন। বিজ্ঞান কি বলে শুনুন, বৈজ্ঞানিক পরামর্শ মেনে চলে সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭