নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ৩০ মার্চ, ২০২০
সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নাগালের বাইরে। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের মিছিল, প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ, নতুন নতুন অঞ্চল। এই পরিস্থিতিতেই করোনার আগুনে গুজব আর বিভ্রান্তির ঘি ঢালা হচ্ছে অনেকদিন থেকে। একেই করোনা এখন মুর্তিমান আতঙ্ক, তার ওপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্যাদি পুরোবিশ্বেই তাণ্ডব বইয়ে দিচ্ছে। এমনিতে এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, কোনো পথ্য নেই। এখন সবারই অপেক্ষা করোনা কবে বিদায় নেবে, কবে এই লাশের মিছিল থামবে। সবার মনে মনে, প্রতিটি ঘরে ঘরে এই প্রার্থনা।
কিন্তু একশ্রেণীর লোক এই করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত যথেষ্ট বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ফেলেছে। সেই বিভ্রান্তি গুজব এখনো লোকমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু গুজব আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিছু আমাদের অন্যপথে পরিচালিত করছে, কিছু আবার সঠিক তথ্যকে আড়াল করে দিয়ে আমাদের সচেতনতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক গুজবকে বিশ্বাস করে ফেলে। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যায়।
এ পর্যন্ত করোনা নিয়ে অনেক গুজব, বিভ্রান্তিই সামনে এসেছে। তেমন ১০ বিভ্রান্তি নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের আলোচনা-
১. করোনা উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় সংক্রমিত হয় না, গরম এলেই করোনার প্রাদুর্ভাব চলে যাবে- এই কথা অনেকদিন থেকেই শুনছি আমরা। কিন্তু এটি সঠিক নয়। গবেষক এবং স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে ঠাণ্ডা আবহাওয়া কার্যকর এমনটা ভাবার কারণ নেই। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়াসহ সব ধরনের পরিবেশে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই থাকে।
২. কেউ আবার বলেছিলেন এই ভাইরাস মুসলমানদের আক্রমণ করবে না। মুসলিমপ্রধান দেশ বা অঞ্চলে করোনা কখনোই থাবা ফেলবে না। এই বিষয়টিও পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সব ধরনের দেশ বা অঞ্চলেই করোনা ছড়াচ্ছে। সর্বশেষ মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবে করোনা মহামারী আকারে ছড়াচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
৩. হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্রে গরু মানেই গোমাতা, দেবতা। গরুর মলমূত্র তাদের কাছে পবিত্র, রোগবালাই সারানোর দাওয়াই। অনেকেই মনে করেন গোমূত্র পান করলে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড–১৯ সেরে যাবে। আমজনতা থেকে শুরু করে অনেক বড়সড় নেতাদেরও দাবি গোমূত্র করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর। বিভিন্ন এলাকায় গোমূত্র বিক্রি ও পানের হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু আদতে এই গোমূত্রেরও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গোমূত্র অতিমাত্রায় পান করে অনেকে যে অসুস্থ হয়েছে, সেই কথাও আমরা জানি।
৪. কিছুদিন আগেই শোরগোল উঠলো থানকুনি পাতা নিয়ে। এই পাতা নাকি করোনা নির্মূল করবে। অনেকেই উঠেপড়ে লাগলো থানকুনি পাতার খোঁজে। থানকুনির ঔষধিগুণ আছে ঠিকই, কিন্তু রাতারাতি করোনা সারাবে, সেটা সম্ভব নয়। তিল তেল ও রসুন করোনা ঠেকায়- এমন কথাও শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু এগুলো করোনা সারিয়ে তুলবে, এমন প্রমাণ এখনো কোথায় মেলেনি।
৫. কেউ বলছেন সারা শরীরে অ্যালকোহলে দেওয়ার কথা। এতে কখনোই করোনা মরে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি করোনা শরীরে প্রবেশ করেই, তাকে মারতে সারা শরীরে অ্যালকোহল, ক্লোরিন বা ব্লিচিং ছড়িয়ে কোনো লাভ নেই। বরং এ ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শ চোখ ও মুখের ত্বক ও ঝিল্লির ক্ষতি করে। আপনি সর্বোচ্চ আপনার ঘরদোর পরিস্কার করতে পারেন।
৬. অনেকের ধারণা, করোনা থেকে বাঁচার উপায় গরম পানিতে গোসল করা। শুধু গরম পানিতে গোসল করলেই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব না। তাছাড়া, বেশি গরম পানিতে গোসল করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গরম পানিতে গোসল নয়, বরং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠেকাতে পারে এই ভাইরাস।
৭. করোনা হলে মাংস খাওয়াই উচিৎ নয়, এই ধারণাও ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার সঙ্গে এখন পর্যন্ত মাংস খাওয়া বা না খাওয়ার তেমন কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মুরগির মাংসে বা খাসির মাংস থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। তবে যেকোনো ভাইরাস থেকে বাঁচার সহজ উপায় রান্নার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা।
৮. পোষ্য থেকে ছড়ায় করোনা, এটাও অনেকের ধারণা। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত জানা গেছে, পশুপাখি থেকে করোনা ছড়ায় না একেবারেই। বরং বাড়ির পোষ্যকেও এই অসুখ থেকে দূরে রাখা উচিত। দু-একটি ক্ষেত্র বাদে কুকুর, বিড়াল বা পাখিদের শরীরে এই জাতীয় ভাইরাসের অস্তিত্বের সেভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, পোষ্যদের সঙ্গে বাইরে বের হলে বা তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করলে সকলকেই পরিস্কার হয়ে নিতে হবে।
৯. শুরু থেকেই বলা হচ্ছিলো, করোনায় বৃদ্ধ ও কম বয়সীরাই ঝুঁকিতে আছে, শিশুরা একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত। এটা একেবারেই ঠিক নয়। করোনাভাইরাসের অন্যান্য প্রকরণের মতো যেকোনো বয়সী মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। তবে যেকোনো ব্যক্তি, তিনি বয়স্ক কিংবা স্বল্পবয়সী যে-ই হোন না কেন, যদি তার আগে থেকেই কোনো রোগ থাকে, তাহলে তার আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি। তাই সচেতনতা জরুরি। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ঘটনা বয়স্কদের, তবে বাচ্চারাও এর আশঙ্কা থেকে মুক্ত না।
১০. মশার কামড় থেকে করোনা হতে পারে, এটা নিয়েও প্রশ্ন আর বিভ্রান্তি ছিল। মশা হয়ত করোনা বহন করে, একজনের শরীর তেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়। এমন কোনো প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে নেই যে, মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে। নতুন এই করোনাভাইরাস শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে। আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি, সংস্পর্শ ও থুতুর মাধ্যমেই তা অন্যের শরীরে প্রবেশ করে।
সুরক্ষিত থাকতে হলে এগুলোকে উপেক্ষা করুন। বিজ্ঞান কি বলে শুনুন, বৈজ্ঞানিক পরামর্শ মেনে চলে সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা গ্রহণের কারণে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়
ভুগে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে এই
টিকা যারা নিয়েছেন তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বুধবার (৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সার্বজনীন
স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আয়োজিত সভায়
মন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কিছু দেশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। আমরাও যেহেতু অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা গ্রহণ করেছি, আমাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা
মন্তব্য করুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত
দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান
রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে
বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় বিয়ের আগে এই
রোগের জিন বাহক কি না তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বুধবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে
তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য খাতে ‘রূপকল্প-২০৪১’
বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব,
ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ
বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা
পৌঁছে দিতে এবং জনসাধারণকে সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ (এইচএনপি)
সেবা দেওয়ার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী
লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আমরা একটি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি
প্রণয়ন করে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল, নার্সিং
ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ
চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যাও বৃদ্ধি করেছি। গ্রামপর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায়
স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন
স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের
মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ফ্রি স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টি সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা
চালু করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্য
খাতের উন্নয়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের
গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ও অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যু হার,
অপুষ্টি, খর্বতা, কম ওজন ইত্যাদি হ্রাসে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা
থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সমাজের সচেতন নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে
থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে
তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং অনেক
ক্ষেত্রেই তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার
বিকল্প নেই। থ্যালাসেমিয়া বিস্তার রোধে বাহকদের এবং আত্মীয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ককে
নিরুৎসাহিত করতে হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের পর প্রয়োজনীয় সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি কর্তৃক ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’
উদযাপনের উদ্যোগকে রাষ্ট্রপতি স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবাই মিলে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ
গড়ব-এটাই হোক এবারের বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের অঙ্গীকার।’
তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ যা বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়।
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তানদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা
থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে থ্যালাসেমিয়া জিনবাহক নারী-পুরুষের
মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। এজন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার আগেই পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষ বা নারী কেউ এ রোগের বাহক কিনা তা নির্ণয় করা জরুরি।
এছাড়া রক্তস্বল্পতাজনিত ভয়াবহ এ রোগটি প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপতি ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন থ্যালাসেমিয়া
মন্তব্য করুন
গত পাঁচ বছরে চিকিৎসাসেবা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ৩৫ শতাংশ
নিষ্পত্তি করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। অন্যদিকে ৬৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন
বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
অভিযোগ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: অসুস্থতা নিয়েও পুরুষের তুলনায় বেশিদিন বাঁচে নারী: গবেষণা
বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে চিকিৎসাসেবাসংক্রান্ত
৬৬টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ সময় নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩টি অভিযোগ।
সে হিসাবে ৩৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৪৩টি অভিযোগ,
যা মোট অভিযোগের ৬৫ শতাংশ।
এর মধ্যে ২০২৩ সালে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত ২৫টি অভিযোগ নিয়ে কাজ
করেছে মানবাধিকার কমিশন, যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের ৩১ মার্চ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ২০২৩ সালের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর
করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে ২০২৩ সালের ২৫টি অভিযোগের মধ্যে ভুক্তভোগী কর্তৃক দায়ের করা
অভিযোগ দুটি।
অন্যদিকে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) হয়ে গ্রহণ করা অভিযোগের
সংখ্যা ২৩, যা এ সময় কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সুয়োমটো অভিযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
ভুক্তভোগীদের দায়ের করা দুটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হলেও কমিশন কর্তৃক গৃহীত ২৩টি অভিযোগের
মধ্যে মাত্র তিনটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ২০টি অভিযোগ। সে হিসাবে গত বছর চিকিৎসাসেবা
সংক্রান্ত অভিযোগের ৮০ শতাংশ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
এদিকে, ২০২০ সালে করোনাকালীন সর্বনিম্ন দুটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে
কমিশন।
এর মধ্যে একটি অভিযোগ জমা পড়ে আর কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দায়ের
করে অন্যটি। ওই বছর কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এর ধারা ১২ অনুযায়ী, দেশের নাগরিকরা কমিশনে চিকিৎসাসেবা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের অব্যবস্থাপনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে সংস্থাটি। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কমিশন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর কোন কোন ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন তার গুরুত্ব বিবেচনা করে উচ্চ আদালতে রিট করে কমিশন।
আরও পড়ুন: করোনা টিকা ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চিকিৎসাসেবা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার
জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আগ্রহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন
আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘যেসব অভিযোগ কমিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য আমরা নিয়মিত তাগিদ দিয়ে থাকি।
চিকিৎসাসেবা খাতের অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরো বেশি আগ্রহী
হতে হবে।’
এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে কমিশন
অনেক ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা নিতে এসে অনিয়মের শিকার রোগীদের
অভিযোগ জমা পড়তে পড়তে পাহাড় হয়েছে। আবার ভুল চিকিৎসা, সেবা নিতে গিয়ে অনিয়মের শিকার
হয়েছেন এমন অভিযোগও অনেক। স্বাস্থ্যসেবার প্রকৃত চিত্র শিগগিরই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে
তুলে ধরবে কমিশন। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনসাধারণকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করে কমিশন। গত বছর আমরা জরায়ু ক্যান্সারের ভুয়া ভ্যাকসিন, হাসপাতালের শয্যা নিয়ে বাণিজ্য, ওষুধের মোড়ক পরিবর্তন করে বিদেশি ওষুধ বলে বিক্রি, অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক এবং বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারে না কমিশন। এ জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্যারিস নীতিমালার আলোকে আইনের সংশোধন জরুরি।’
চিকিৎসাসেবা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
মন্তব্য করুন
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা গ্রহণের কারণে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে এই টিকা যারা নিয়েছেন তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় বিয়ের আগে এই রোগের জিন বাহক কি না তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।