ইনসাইড বাংলাদেশ

সব নগরে সংকট এক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/07/2017


Thumbnail

নগরায়ন হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে হচ্ছে দালানকোটা। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে সব শহরই পরিণত হচ্ছে আবর্জনায়। সব শহরই জলাবদ্ধতায় ডুবে যাচ্ছে সামান্য বৃষ্টিতেই। সব শহরের ভোগান্তি একই।
 
জলযটে ঢাকার যে অবস্থা তাতে এটাকে নিত্য বন্যা বলা চলে। বন্যা যেমন একটানা কয়েকদিন থাকে তেমনি ঢাকার অনেক এলাকার মানুষই বর্ষাকালে একপ্রকার পানিবন্দী জীবন যাপন করেন। পার্থক্য বন্যার্তদের ত্রাণ লাগে, আর ঢাকাবাসীর ত্রাণ লাগে না। তবে ভোগান্তি বন্যার্তদের চেয়ে কোনো অংশে কম না। কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রষ্ঠিান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি কবরস্থানও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পায় না। একদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট অন্যদিকে নোংরা পানির জলাবদ্ধতা নগরবাসীকে দুশ্চিন্তায় রাখছে সারাক্ষণ। খবরের কাগজ আর মিডিয়ার টকশোর বিষয় থাকে জলাবদ্ধতা। বর্ষা শেষ তো জলাবদ্ধতার ইস্যুও শেষ।
 
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় জলাবদ্ধতার যে অবস্থা তাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ঢাকার পানিতেই ডুববে ঢাকা। পানি বের হওয়ার যেমন উপায় নেই, তেমনি সারা শহর কংক্রিটে আবৃত হওয়ায় পানি ভুপৃষ্ঠে ফেরত যাওয়ারও উপায় নেই। তার উপর নদীনালা, খাল, ড্রেনের অবৈধ দখলের মহোৎসব তো রয়েছেই। ঢাকায় জলাবদ্ধতার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে দুই ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমি প্রশাসন আর জেলা পরিষদকে। 
 
জলাবদ্ধতা সংকট চেপে ধরেছে রাজশাহীকেও। হালকা কিংবা ভারী বৃষ্টিপাতে উপশহরসহ গোটা নগরীই জলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাজশাহীতে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রাস্তায় জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখলেই সেখানকার পরিস্থিতি কতটা সঙিন তা বোঝা যায়। রাজশাহীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে এখন প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। এখানে পরিকল্পনা হয়েছে, দেওয়া হয়েছিল বাজেটও। কিন্তু উন্নয়নের পরিবর্তে হয়েছে বিরাট দুর্নীতি। গত তিন বছরে রাজশাহীতে ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ হয়েছে। বাস্তবে কাজ আর হয়নি, হয়েছে হরিলুট। ড্রেন তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো ভেঙ্গে পড়ে। এই ভাঙ্গা ড্রেনে কোন পানি অপসারিত হয় না। সরকারের টাকা গচ্চা গেছে পুরো প্রকল্পেই। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। রাজশাহীর জলাবদ্ধতা দুর করতে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে সকল প্রকার দুর্নীতির উর্দ্ধে থেকে। আর সেই সঙ্গে এসব দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। 
 
সিলেট শহরটি মূলত ছোট ছোট বিপুুল সংখ্যাক টিলাবেষ্টিত। তাই যখন বৃষ্টি হয় তখন, তখন সব পানি নিচু এলাকার দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে এই শহরে একই সময়ে একসঙ্গে অনেক পানি প্রবাহিত হয়। সিলেটে জলাবদ্ধতার শুরুতে থাকে পানির ¯্রােত। পানির ¯্রােতে হালকা যানবাহন ভেসে যাওয়ার নজিরও এ অঞ্চলে রয়েছে। এরপরই পানি জমতে থাকে সড়ক আর বাসাবাড়িতে। পানি নিস্কাশনের জন্য সিলেট নগরীর ভেতর ১২ টি খাল ও ছড়া রয়েছে। কিন্তু খালের অস্তিত্ব শুধু মানচিত্রেই। ছড়াগুলো সংকীর্ন হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ছড়া ও খালের কোনো অস্তিত্বই নেই। ছড়া ও খালের উভয় পাশ ভরাট করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। অনেকে খাল ভরাট করে দালান নির্মাণ করেছে। ছড়া ও খাল উদ্ধারে বছর বছর নেওয়া হয় পরিকল্পনা। কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন হয়না, খালও উদ্ধার হয়না, জলবদ্ধতাও কমেনা।
 
খুলনা শহর গড়ে উঠেছে নদীর তীরে। খুলনায় জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং খাল দখল। এসব এলাকায় নগরায়ন এতটাই অপরিকল্পিত যে কোথাও কোথাও পানি নিস্কাশনের ড্রেনটাও নেই। তার উপর এই অঞ্চলে খাল দখল যেন একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষেরও অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। খুলনার জলবদ্ধতা আগে তেমন প্রকট না হলেও সম্প্রতি জলাবদ্ধতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে স্থায়ীত্ব। সুষ্ঠ নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা না নিলে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো অবস্থা হতে পারে এ শহরটিরও। 
 
ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরীতে। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার দায় নেয় না কেউ। কিছুদিন পর পর নেওয়া হয় পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা, আরও কত কি! কিন্তু জলাবদ্ধতা আর কমেনা। জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা বলে একেকজন নগরপিতা হন। আর নগরপিতা হওয়ার পর দুষতে থাকেন সাবেক মেয়রদের। এভাবেই চলছে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সংকট নিরসন। জল দুর করতে সাবেক তিন মেয়র জলে ঢেলেছেন ৩০০ কোটি টাকা। ফলাফল শূণ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা যে কোন অঞ্চলের চেয়ে একটু জটিল। এ অঞ্চলের খালগুলো সক্রিয় থাকাটাও একটা ফ্যাক্টর। জোয়ারের কারণে স্বাভাবিকভাবে খালে পানি আসে। তার ওপর ভারী বৃষ্টিপাতে বাড়ে পানির চাপ। ফলে প্লাবিত হয় পুরো নগরী। বার বার জোয়ার ভাটার কারণে পলি পরে খাল হয়ে যায় ভরাট। ময়লা-আবর্জনা আর খাল দখলের লড়াই তো আছেই। সবকিছু মিলে পুরো শহরের জলাবদ্ধতা দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতায় জটিলতাও বাড়ছে। তাই চট্টগ্রামের জলবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা করতে হবে সমন্বয় করে। অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সুফল পাওয়ার পরিবর্তে প্রকল্পটি হয়ে ওঠে গলার কাঁটা। তাই সবগুলো সম্ভাবনা আর ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।
 
 বাংলা ইনসাইডার/এএন


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭