কালার ইনসাইড

তাঁকে নিয়ে মনগড়া কিছু করার অধিকার কারও নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2017


Thumbnail

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয় তাঁর। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। সেই শোক আজও কাটেনি ভক্ত-পাঠকদের। তবে হুমায়ূন আজও বেঁচে আছেন লাখো পাঠকের হৃদয়ে। এমনই দিনে বাংলা ইনসাইডারের মুখোমুখি হন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

কেমন আছেন? কেমন কাটছে আপনার দিন?

এইতো চলছে। ভালো খারাপের তফাৎ নেই এখন আর আমার কাছে। তারপরও যদি বলতে বলা হয় আমি কেমন আছি। বলবো ভালো আছি। কারণ আমার ভালো থাকতে হয়। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দুটি সন্তান দিয়ে গেছেন। যারা আমাকে সারাক্ষণ আদর-সোহাগে ব্যস্ত রাখে। বড়টা হয়েছে ওর বাবার মতো। কম কথা বলে। কিন্তু দারুণ বুদ্ধি। মাঝে মাঝে আমাকে এমনসব প্রশ্ন করে তখন আমি অবাক হয়ে যাই। ভাবি হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে ছেলের মুখে বুদ্ধিদীপ্ত সব প্রশ্ন শুনে যারপরনাই অবাক হতেন। বাবা যে পৃথিবীতে নেই বড় ছেলে তা বুঝতে পারে। তবে ছোটটা এখনো বিশ্বাস করে তার বাবা বেঁচে আছে। হয়তো হুট করে বাসায় এসে সবাইকে অবাক করে দেবে। সারাদিন দুই ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ওরা আমাকে একটুও মন খারাপ করতে দেয় না। বিশেষ করে নিষাদ যেন সারাক্ষণই আমাকে হাসিমুখে দেখতে চায়। নিনিতের আবদার বেশি।

সকাল থেকে সন্ধ্যা। একটু রাত অবধি ছেলেদের নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় কাটে আমার। তবে রাত যত বাড়ে আমি ততই একা হয়ে যাই। হুমায়ূন আহমেদ আমার জীবনে এত ভালো স্মৃতি রেখে গেছেন যে, আমি নিজেকে অনেক সময় সামলাতে পারি না। কত স্মৃতি! কত ঘটনা। সবই আনন্দের…

পেশা হিসেবে বর্তমান ব্যস্ততা বলতে ?

বাবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হলাম গত বছর। তেজগাঁওয়ে অফিস। যদিও আমার কাজের ধারার সাথে বাবার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধারা একরকম নয়। তবুও নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম। বাবার অনুরোধ ফেলতে পারিনি। আমার মায়ের একটি পত্রিকা আছে। সেখানেও মাঝে মাঝে সময় দিচ্ছি। আর টুকটাক নির্মাণের সাথে তো যুক্ত আছিই।

অভিনেত্রী কিংবা গায়িকা অথবা নৃত্যশিল্পী শাওনকে কী আর কখনো আমরা পাবো না?

আমার এক সময় গান গাইতে খুব ভাল লাগতো, কিন্তু এই মুহূর্তে তাও ইচ্ছা করে না। আর অভিনয়ের কথা বলতে পারছি না। আসলে আমার আর ইচ্ছাই হয় না। অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন অভিনয় করছি না? আসলে হুমায়ূন আহমেদের ব্যাপারটা ছিল ভিন্ন, তার নাটকের স্ক্রিপটা ছিল এতো সুন্দর যে অভিনয় করতে ইচ্ছা না করলেও অনেক সময় মন টেনে নিয়ে যেত। হুমায়ূন আহমেদ যেটি মনে করতো এটি আমার জন্যে উপযুক্ত কেবল মাত্র সেটিতেই আমি অভিনয় করতাম। হুমায়ূন আহমেদের অনেক বিখ্যাত নাটকেও আমি অভিনয় করিনি কারণ ওটি আমার জন্যে ফিট ছিল না এই আর-কী। ভবিষ্যতের কথা বলতে পারি না। তবে এই মুহূর্তে ইচ্ছে নেই আমার।

নুহাশ পল্লীর খবর কী?

নতুন কোনো খবর নেই। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে নুহাশ পল্লী যে নিয়মে চলেছে এখনো সেই নিয়মে চলছে। হুমায়ূন আহমেদ থাকাকালীন সময়ে যারা কাজ করতেন তারাই দেখভাল করছেন। দুই ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই ঘুরতে যাই। বিশেষ দিনগুলোতে শ্রদ্ধা জানাতে যাই।

শুনেছি, নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের নামে একটি জাদুঘর তৈরি হচ্ছে?

নুহাশ পল্লী হ‌ুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে প্রিয় স্থান। তিনি সবুজকে যেভাবে ভালবাসতেন সেভাবেই নুহাশ সাজানো গোছানো রয়েছে আজও। সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় তিনি শুয়ে আছেন। এখানেই গড়ে তোলা হবে হ‌ুমায়ূন জাদুঘর। এছাড়াও ওনার স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকার পল্লবীতে হ‌ুমায়ূন আহমেদের যে দোতলা বাড়ি রয়েছে সেটি স্মৃতি জাদুঘর করা হবে।

আমি একটা পরিকল্পনা করেছি হুমায়ূন আহমেদের বই এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংগ্রহ করে একটি হুমায়ূন জাদুঘর তৈরি করার। এখনও আলোচনার মধ্যে আছে। খুব শিগগিরিই কাজ শুরু করতে পারব।

হুমায়ূন স্যারের স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতালের কাজ কতদূর?

অনেকটা হতাশার সুরে বললেন, আমি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সার হাসপাতালের কাজ শুরু করার জন্য দৌঁড়ঝাপ করছি। অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু তেমন সাড়া পাইনি। মাঝে মাঝে এইসব ভেবে কান্না চলে আসে। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে বলেছিলেন, আমি একটি বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল করব। প্রয়োজনে মানুষের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইব। সত্যি হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে এতদিনে ক্যান্সার হাসপাতালের কাজ শুরু হয়ে যেত। হুমায়ূন আহমেদের অদৃশ্য ক্ষমতা ছিল! আমার তা নেই।

তবে  নেত্রকোণায় ওনার স্বপ্নের যে স্কুলটি রয়েছে সেটির জেএসসি ও এসএসসির ফলাফল শতভাগ ভালো। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়েছে। এ দুটি স্বপ্ন তার ভালভাবেই বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যদি কেউ লিখতে চায়, অথবা তার কোনো গল্প উপন্যাস নিয়ে সিনেমা বানাতে চায়?

আমি একথা বলছি না হুমায়ূন আহমেদের ওপর কেউ বই লিখতে পারবেন না। কিন্তু বইটি কে লিখছেন? কেন লিখছেন? সেটাই বোধকরি প্রশ্নের বিষয়। হুমায়ূন আহমেদের ওপর তার মা, ভাইবোন, ছেলে-মেয়ে বই লেখার অধিকার রাখেন। বন্ধুরাও তার ওপর বই লিখতে পারেন। কিন্তু তা হতে হবে সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ। তাঁকে নিয়ে সিনেমা বানালে তার গল্প নিয়ে সিনেমা বানালেও কোন আপত্তি নেই। যেমন তার গল্পের চাই সঠিক উপস্থাপন। তেমনি তাঁকে নিয়ে সিনেমা বানাতে হলে আগে তাঁকে জানতে হবে। দূর থেকে তো একটা মানুষ তাঁকে জানবে না। তাঁকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন তারাই তো তাঁকে জানবে। তাদের কাছ থেকে তো জানতে হবে। হুমায়ূন আহমেদ ও তার পরিবারকে ঘিরে মনগড়া কাহিনীর বই লেখা বা সিনেমা নির্মাণের অধিকার কেউ রাখেন না। যদি কেউ লেখেন তাহলে বড় অপরাধ করবেন। আশাকরি লেখককে ভালোবাসেন বলে কেউ এ ধরনের অপরাধ করবেন না।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/টিআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭