ইনসাইড পলিটিক্স

কার পরামর্শে চলছে সরকার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/05/2020


Thumbnail

করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে সরকার একলা চল নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার একের পর এক যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশা সংযুক্ত নয়। এমনকি এখানে বিশেষজ্ঞদেরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশগুলো মোটামুটি পাঁচটি শ্রেনী বা পেশার মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করে মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো পরামর্শ বা মতামত গ্রহণের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। যদিও করোনা মোকাবেলার জন্য সরকার একাধিক কমিটি গঠন করেছে, রয়েছে করোনা মোকাবেলার জাতীয় কমিটি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে এই কমিটির প্রধান। এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি, যেটি বিশেষজ্ঞদের কমিটি। এই বিশেষজ্ঞদের কমিটিও সরকারের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আমরা যদি অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপট দেখি, তাহলে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে তারা কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে এবং কার কার পরামর্শ গ্রহণ করছে, তাহলে আমরা দেখব যে, পাঁচটি গ্রুপ মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।

প্রথমত; সবচেয়ে বড় ভূমিকা চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের

সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যারা ভূমিকা রাখছে, তারা হলেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ। এমনকি ভারত-পাকিস্তানেও চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা সরকারের সঙ্গে বসছে। সরকার কয়দিন লকডাউন করবে, কোন কোন এলাকা লকডাউন করবে, কোন কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেবে, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কী হবে ইত্যাদি নিয়ে সরকার প্রতিনিয়ত চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদেরকে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দেখা যায়নি। এমনকি সর্বশেষ যে ছুটি বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেখানেও জাতীয় পরামর্শক কমিটির মতামত নেওয়া হয়নি বলেই জানা গেছে।

দ্বিতীয়ত; অর্থনীতিবিদদের ভূমিকা

করোনা কেবল একটি জনস্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি দেখি ভারতেও করোনা সংক্রমণের পর থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলছেন, পরামর্শ করছেন এবং তাদের মতামত নিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং অর্থনৈতিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে অর্থনীতিবিদদের দৃশ্যমান ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং এখন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় বা অর্থমন্ত্রী অর্থনীতিবিদদের নিয়ে কোনো বৈঠকও করেননি। অর্থনীতিবিদদের শুধু দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোগুলোতে। তারা তাদের মতো করে মতামত দিচ্ছেন। এই মতামত কতটা সরকার শুনছে বা সরকার সেই মতামতগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা তা বোধগম্য নয়।

তৃতীয়ত; রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অন্ধকারে

করোনা মোকাবিলায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রাজনীতিবিদরা একেবারেই গুরুত্বহীন। যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে সেই সিদ্ধান্ত গুলোতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর মতামত নেই বললেই চলে। এমনকি শুরু থেকে সরকার যে সিদ্ধান্ত এবং কর্মপন্থাগুলো নিচ্ছে তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা তো দূরের কথা, সরকারের মন্ত্রীদেরই কোন গুরুত্ব নেই। অথচ আমরা যদি পাশের দেশ ভারতে দেখি, করোনা মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন, কথাবার্তা বলছেন। বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ যে দেশ করোনা মোকাবিলায় আমলাতান্ত্রিক পথে হাটছে। 

চতুর্থত, সুশীল সমাজ শুধুই দর্শক

যে কোন সঙ্কটে একটি দেশের বুদ্ধিজীবি, শিক্ষিত সুশীল সমাজের একটি ভূমিকা থাকে। যেমন করোনার অনেকগুলো আনুষঙ্গিক ব্যাপার আছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় কি হবে, আর্থ সামাজিক অবস্থা কি হবে, বেকারত্ব দূর করার জন্য করণীয় কি, ভবিষ্যতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে গেলে আমাদের মনস্বাত্বিক বিষয়গুলো কিভাবে দেখতে হবে ইত্যাদি নিয়ে সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সুশীল সমাজের ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। সুশীল সমাজের কোন পরামর্শ সরকারের কোন পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়েছে কিনা খবর প্রকাশিত হয়নি। 

পঞ্চমত, ব্যবসায়ীক নেতৃবৃন্দও উপেক্ষিত 

বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে অর্থনীতির ওপর। এই অর্থনীতির ক্ষেত্রে ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় কি, কিভাবে অর্থনীতিকে সচল রাখা যায় এনিয়ে ব্যবসায়ীক নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সকল ব্যবসায়ীক গ্রুপকে নিয়ে কথা বলেছেন, বৈঠক করেছেন এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। যেহেতু বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে একজন গার্মেন্টস মালিক সেজন্য গার্মেন্টস খুলে দেওয়া নিয়ে তিনি গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু গার্মেন্টসই বাংলাদেশে একমাত্র শিল্প কারখানা নয়, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প কারখানা , দেশীয় শিল্প কারখানা রয়েছে, বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা রয়েছে, ইত্যাদি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সংগঠন তাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন মিথস্ক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, সরকার যে সিদ্ধান্তুগুলো নিচ্ছে, সেই সিদ্ধান্তুগুলো কি গবেষণা প্রসূত? সেই সিদ্ধান্তগুলো কি সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে , সেই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো কি যাচাই বাছাই করে তবেই নেওয়া হচ্ছে ? নাকি সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে স্রেফ অনুমান নির্ভর এবং আপদকালীন ব্যবস্থাপনা হিসেবে? 

এই প্রশ্নগুলোর সমাধান জরুরি। কারণ করোনা যদি দীর্ঘ মেয়াদি হয় তাহলে এই সকল গ্রুপকে একত্রিত করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতেই এগুতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭