কালার ইনসাইড

অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত চলে গেলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 31/05/2020


Thumbnail

‘মোস্তফা কামাল সৈয়দ ( কামাল ভাই) আমার কাছে অনেক কিছু’- প্রায় ২০ জন তারকা যারা দীর্ঘদিন ধরে নাটক মহলে আছেন তাদের সঙ্গে কথা হয়। সবারই এক কথা, তিনি অনেক কিছু ছিলেন আমাদের জন্য। একটু আধটু গল্পও বলেন, কিভাবে তাকে ক্যারিয়ারে সাহায্য করেছেন এই মানুষটা। যেমন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় নির্মাতা জানান, ক্যারিয়ারের প্রথম নাটকের গল্প নিয়ে অনেকের কাছে ধর্ণা দিয়েছি। একটা সময় দেখা করতে পারলাম মোস্তফা কামাল সৈয়দ স্যারের সঙ্গে। গল্প পড়ে বললেন ভালোভাবে বানাতে পারলে আমি নেবো।টেলিফিল্মটি নির্মাণ করে জমা দিলাম। ঈদের চাঙ্কেই রাখলেন। ঈদের চাঙ্কে দুপুরে একজন নবীনের নাটক এনটিভিতে প্রচার হওয়া বিশাল কিছু। সেই সুযোগ আমাকে আজ এইখানে এনেছে। এমন অনেকভাবেই তিনি সাহায্য করেছেন। মিডিয়ার অজস্র মানুষের পথ প্রদর্শক ছিলেন এই গুনী মানুষটা।  

মোস্তফা কামাল সৈয়দ, মুস্তাফা মনোয়ার, কলিম শরাফী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আবদুল্লাহ্ আল মামুন, আতিকুল হক চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান, সৈয়দ ছিদ্দীক হোসেন, নওয়াজিশ আলী খান, বরকতউল্লাহ্, জিয়া আনসারী, মুসা আহমেদ, হায়দার রিজভী, ফখরুল আবেদিন দুলাল, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখ মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। আমাদের বাংলা নাটকের কিংবদন্তিদের মিছিলের যেন সমাপ্তি ঘটতে চললো। মোস্তফা কামাল সৈয়দ একদা বিটিভিতে কাজ করেছেন। বিটিভির বহু অনবদ্য সৃষ্টি প্রকাশ পেয়েছে তার হাত ধরে। কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন টিভি চ্যানেলে। ২০০৩ সালে এনটিভির শুরু থেকে তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে আছেন।

এর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ছিলেন। ৫২ বছরের কর্মজীবনে তিনি পাকিস্তান টিভিতেও শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন।

এছাড়াও দেশের টিভিতে অনন্য অবদান রাখা এ মানুষটি একেবারে আলাদা জীবনযাপন করতেন। তিনি কখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। নাটক ও অনুষ্ঠান নির্বাচনেও সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে কথা বলে নিতেন।

তিনি বলতেন, সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি মানুষ। এই সেরা সৃষ্টি মানুষের গল্পই হলো নাটক। বাস্তব জীবনে যেমন একজন মানুষের সাথে আরেকজনের মিল থাকে না তেমনি একটি নাটকের গল্পেও থাকতে হবে চরিত্রের ভিন্নতা আর অভিনবত্ব, প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ দৃশ্য পযর্ন্ত দর্শকের আগ্রহ যেন থাকে এবং সে যেন কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করে। তাই একটি নাটকে থাকে নায়ক নায়িকা, খলনায়ক, খলনায়িকা শিশু সহ একাধিক সহযোগী চরিত্র। একটি ভাল নাটক হতে পারে শিক্ষনীয়, অর্থবহনকারী ও বার্তাবাহক। আনতে পারে আচরন ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন, হতে পারে মুল্যবোধ সৃষ্টির উদ্দিপক। হতে পারে জীবনের কোন সমস্যা সমাধানের নির্দেশক। জাগাতে পারে উৎসাহ উদ্দীপনা, জোগাতে পারে ঘুরে দাঁড়াবার প্রেরণা।

একটি নাটকে থাকতে হবে জীবনের নানবিধ উপাদান, প্রেম ভালোবাসা, মোহ, স্বার্থহীনতা, অন্যকে সম্মান করার মনোভাব, কৃতজ্ঞতাবোধ সম্পন্ন, চরিত্র ক্ষমতায়ান, মুল্যবোধ সৃষ্টি, ক্ষমা করার মানসিকতা, প্রেরণাসহ শিক্ষনীয় বিষয়ের সমাহার।

নাটকের বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিটি চরিত্রের জন্য শক্তিমান অভিনেতা/অভিনেত্রী নির্বাচন বাঞ্ছনীয়। আসলে শিল্পীরা হলেন নাটকের অলঙ্কার। যাকে যত সঠিক স্থানে ব্যবহার করা যাবে সে অলঙ্কারই তত ভাল লাগবে। এক্ষেত্রে চরিত্রের পরিপূর্ন স্ফুটনে/ প্রতিষ্ঠায় অভিনয়ের দক্ষতা নাটকের মানের ক্ষেত্রে অতীব প্রয়োজনীয়। দর্শক যদি নাটকের যে কোন চরিত্রের বিভিন্ন পরিস্থিতির সাথে নিজের কিছুটা মিল ও সঙ্গতি খুঁজে পায় তখনই নাটক আর দর্শকের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী হয়। নাটক বিনির্মাণের প্রথম উপাদান হচ্ছে একটি ভাল গল্প। যার মধ্যে রয়েছে জীবনের উপাদান। জীবনের মান উন্নয়নের ইঙ্গিত, হতাশার মাঝেও আশা। সময় ব্যয় করে যে দর্শক নাটক দেখে তার জন্যে নাটক দেখা শেষে থাকতে হবে পরিপূর্ন পরিতৃপ্তির নিশ্চয়তা।

ভালো নাটক নির্মাণের জন্য যেমন যথেষ্ট ও প্রয়োজনীয় অর্থের প্রয়োজন তেমনি শুধুমাত্র অর্থ উর্পাজন নাটক নির্মাণ, অভিনয় ও প্রচারের মূল লক্ষ্য হতে পারে না। বেসরকারী চ্যানেলের সংখ্যাধিক্যের কারনে নাটকের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সার্থক গল্প, লেখক, অভিনেতা, নির্মাতার সৃষ্টি হয়েছে কি?

নাটক নির্মাণ করা হয় শুধু কি বিনোদনের জন্যে? নাটক নির্মাণের অর্থব্যয়, নির্মাণের সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষের অর্থ্যাৎ স্ব স্ব ক্ষেত্রে জড়িত ব্যক্তির যোগ্যতা, শ্রম, অভিজ্ঞতা, নিষ্ঠা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নির্মিত হলে তা কি ব্যয় কার্যকরী হবে?

দর্শক আকর্ষনের মুল বিষয় হচ্ছে টিভির পর্দায় গুণগতমান। ভালো নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে সন্মানিত বিজ্ঞাপন দাতাদের একটি শক্ত ভুমিকা থাকা উচিত। আমাদের জানা নেই এই বিষয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের কোন অর্থবহ পলিসি রয়েছে নাকি এ বিষয়টি শুধুমাত্র লজিক নির্ভর, বা অন্য কোন কিছু।

তার এমন কথা আজও স্বরণ করা যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া তার বক্তব্যের সমাহার করে। তিনি ছিলেন একজন অনুপ্রেরণার মানুষ। নাট্যজগতে যারা এসেছেন, আজকের দিন কিংবা নব্বই দশক, সব অভিনয়শিল্পী, বিশেষ করে নির্মাতাদের কাছে তিনি পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। সকলের সম্মানের এই মানুষটি চলে গেলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। বড় বেদনার গল্প তিনি বলে গেলেন। তার স্মৃতিতে আজ কাঁদছে গোটা শোবিজ অঙ্গন।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭