ইনসাইড বাংলাদেশ

হাওয়া ভবনের সাহেদ যখন আওয়ামী লীগের সুশীল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/07/2020


Thumbnail

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা গতকাল রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে এবং রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার নামে যে প্রতারণা তা হাতেনাতে উদ্ধার করেছে। এই হাসপাতালটি রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা করছে বলে সরকারের কাছ থেকেও টাকা চেয়েছে। আবার করোনা পরীক্ষা না করেই তাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছে। এরকম প্রতারণার সঙ্গে জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে এখন পর্যন্ত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থ গ্রেপ্তার করতে পারেনি, তিনি পলাতক রয়েছেন। এই ব্যক্তিটি সম্পর্কে বের হচ্ছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।

দেখা যাচ্ছে যে, হাসপাতালের সঙ্গে যখন সরকার চুক্তি করে তখন সেখানে মন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, তৎকালীন সচিব উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে এই হাসপাতালের কার্যক্রম যখন শুরু করা হয় তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যাচাই করেও দেখেনি যে, হাসপাতালটি বৈধ না অবৈধ। যে হাসপাতাল ২০১৪ সালের পর থেকে অনুমোদনই নবায়ন করেনি, সেই হাসপাতাল কিভাবে সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনার পর বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি সরকারি দলের হোমাচোমরা বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন এবং তিনি সবসময় উচ্চ মহলের সঙ্গে ঘোড়াফেরা করতেন বলেও জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব এবং পরবর্তীতে এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি প্রায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেতেন। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সাহেদ বিভিন্ন টক শোত যেত এবং সুশীল হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখতেন। এই কারণেই সবাই তাঁকে ভয় করতো এবং সমঝোতায় চলত।

একটু যদি পেছনের দিকে যাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে, এই সাহেদ আসলে হাওয়া ভবনের তৈরি এবং তারেক জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ট ব্যক্তি ছিল। এই রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালে এবং সেই সময় তৎকালীন মন্ত্রী ডা. মোশাররফ এবং ড্যাব এর সভাপতি ডা. জাহিদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছবি এবং তথ্য পাওয়া যায়। জানা যায় যে, সেসময় হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে সাহেদ পরিচিত ছিলেন এবং সেখান থেকেই তাঁর উত্থান ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে তিনি আওয়ামী লীগার হয়ে গেলেন সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, প্রথমে আওয়ামীপন্থি কিছু আমলাদের সঙ্গে তিনি সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং তাঁদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মহলেও তিনি নিজেকে আসীন করেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলকে নানাভাবে পটিয়ে নানারকম টক শো করে একজন ‘সুশীল’ হয়ে ওঠেন। এভাবেই হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বেড়ে ওঠা সাহেদ হয়ে উঠেছিলেন সুশীল।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, জামাতের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগের আমলে এসে আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে এবং এরাই এই করোনাকালে দুর্নীতি-অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা করে সরকারের বড় ক্ষতি করছে। একাধিক রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে, প্রশাসন এবং ব্যবসায়ী মহলের রন্ধে রন্ধে এরকম বিএনপি-জামাতের মুখোশধারীরা ঢুকে গেছে। যারা আওয়ামী লীগার সেজে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে। এদেরকে নিবৃত না করা গেলে সামনের দিনগুলোতে সঙ্কট মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়বে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭